মার্কেটের ভিতরে ঢোকার প্রস্তুতি দমকল কর্মীদের। সোমবার সকালে। —নিজস্ব চিত্র।
সাত বছরে রাজ্যে নতুন তিরিশটি দমকল কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু নতুন করে ‘প্রশিক্ষিত’ কর্মী নিয়োগ হয়নি। ২০১১ সালে রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর ১৫৭২ জন অস্থায়ী দমকলকর্মী (অক্সিলিয়ারি ফায়ার পার্সন বা এএফপি) নিযুক্ত হয়েছেন। আরও ১৫০০ জন নিয়োগের অপেক্ষায়। কিন্তু স্থায়ী কর্মীর পদ ফাঁকা রেখে ‘প্রশিক্ষণহীন’ অস্থায়ী দমকলকর্মী দিয়ে কাজ চালানোয় দমকলের মতো জরুরি পরিষেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দমকল সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রায় ১৩৬টি দমকল কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার পদ ফাঁকা। আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত ‘ফায়ার অপারেটর’ পদে প্রায় আড়াই হাজার লোক নেই। স্থায়ী কর্মীদের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশের বয়স ষাট ছুঁইছুঁই।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘এএফপি’ পদ থাকলেও তাঁদের কখনও সরাসরি আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হত না। দমকলের এক প্রাক্তন কর্তার কথায়, ‘‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যদের ‘এএফপি’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। আগুন লাগলে সংশ্লিষ্ট ক্লাবে খবর দিয়ে তাঁদের ‘হেল্পার’ হিসাবে কাজে লাগানো হত।’’ ওই কর্তার কথায়, ‘‘হোস পাইপ বয়ে দেওয়া, জল সরবরাহের ব্যবস্থা করানোর কাজ করা হত তাঁদের দিয়ে।’’
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘এএফপি’ পদটি বাতিল হলেও ২০১১ সালে ফের ওই পদটি চালু হয়। বর্তমানে অন্য কোনও রাজ্যে এই পদটি নেই। অভিযোগ, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই বলে ‘এএফপি’দের আগুন নেভাতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছর বড়বাজারের পতুর্গিজ চার্চ স্ট্রিটে বিস্ফোরণে জখম হন আট জন দমকলকর্মী। এঁদের মধ্যে দু’জন ‘এএফপি’ ছিলেন। সেই সময়ে দমকলের আধিকারিকেরা জানিয়েছিলেন, কর্মীদের অনভিজ্ঞতার জন্যই এই ঘটনা ঘটেছিল।
অস্থায়ী দমকলকর্মী নিয়োগের পর মাত্র এক মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তার পর থেকেই তাঁরা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। দমকলের আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে এক মাসের প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়। ছ’মাস অন্তর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া বাধ্যমূলক হওয়ার দরকার। এক সময় ফায়ার ট্রেনিং স্কুলে দমকলকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। কিন্তু সেটাও এখন নিয়মিত নয়।’’
সোমবার বিকেলে বাগড়ি মার্কেটে আগুন নেভানোর কাজে নিযুক্ত এক আধিকারিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন, ‘‘কর্মী সংখ্যার অপ্রতুলতা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মীদের অভাব তো রয়েছেই। পাশাপাশি দমকলের সিস্টেমটাই কার্যত ভেঙে পড়েছে।’’ দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৩৯ সালে রাজ্য দমকল দফতর কাজ শুরু করে। শুরুর দিন থেকেই নিয়মিত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্যারেড, মহড়া, গাড়ি, যন্ত্রপাতির পরীক্ষা থেকে শুরু করে পাম্প, ল্যাডার, ব্রিদিং অ্যানালাইজার বা হোস ড্রিল হত। কিন্তু কর্মী সংগঠনের চাপে আটের দশকের পর থেকে সেই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে নয়া সরকার ক্ষমতার আসার পর তৎকালীন দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া ব্রিটিশ আমলের ওই প্রথা চালু করার নির্দেশ দেন। কিন্তু নতুন সরকারের কর্মী সংগঠনের চাপে সেই প্রথা আজও চালু করা সম্ভব হয়নি।
দমকলের প্রাক্তন এক কর্তার অভিযোগ, ‘‘ব্রিটিশ আমলে দমকল কর্মীদের শারীরিক সক্ষমতা থেকে শুরু করে আগুন নেভানোর কাজে তদারকি করতে নিয়মিত মহড়া দেওয়া হত। কিন্তু সেই ব্যবস্থা এখন পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় তার প্রভাব চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে।’’ এএফপি নিয়োগ প্রসঙ্গে দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘এটা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত।’’ ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া মহড়া এখনও নিয়মিত শুরু করা গেল না কেন? ডিজি’র উত্তর, ‘‘সারা রাজ্যে দমকলে প্রায় ৫৫ শতাংশ পদ ফাঁকা। এত কম সংখ্যক কর্মী আগুন নেভানোর কাজ করবে, নাকি মহড়া করবে।’’ এ প্রসঙ্গে দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy