ওড়িশার সরকারকে বাঘ নিয়ে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ওড়িশার সিমলিপালে ফেরত পাঠানো হয়েছে বাঘিনি জ়িনতকে। তবে বাঘিনিকে বাংলার বনকর্মীরা উদ্ধারের পর থেকে ওড়িশার সরকারের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার গঙ্গাসাগর থেকে আবারও জ়িনতের প্রসঙ্গ উঠল মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায়। বাংলার বন দফতরের ঘুম উড়িয়ে ন’দিন ধরে লুকোচুরি খেলেছে জ়িনত। মমতার বক্তব্য, রাজ্যের বন দফতর এবং প্রশাসন দিনরাত খেটে জ়িনতকে উদ্ধার করেছে। তার পর থেকেই ‘ফেরত দাও, ফেরত দাও’ করে ওড়িশা থেকে ফোন আসতে শুরু করেছে।
ওড়িশার বনকর্মীদের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে রাজ্যের জঙ্গল থেকে বাঘ কেন বাংলায় চলে আসছে, তা নিয়ে ওড়িশার প্রশাসনের উপর কিছুটা বিরক্তিও প্রকাশ করেন তিনি। ওড়িশা সরকারের উদ্দেশে মমতা বলেন, “তোমরা তো খেয়াল রাখবে নিজেদের জঙ্গলের? যাতে তোমাদের বাঘ আমাদের এখানে না ঢুকে পড়ে, যাতে আমার গ্রামে আতঙ্ক না ছড়ায়।” জ়িনতকে কোনও রকম আহত না করে বাংলার বনকর্মীরা যে ভাবে তাকে খাঁচাবন্দি করেছেন, তা একটি ‘মডেল’ বলে মত মুখ্যমন্ত্রীর।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব, ওড়িশা থেকে বাঘ পাঠানো হলে যেন তা চিরকালের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “পাঠালে চিরকালের জন্য পাঠাক। আমরা রেখে দিচ্ছি। তোমাদের জায়গা না থাকলে, আমাদের টাইগার রেসকিউ সেন্টার রয়েছে, গভীর জঙ্গল রয়েছে। আমরা রেখে দিচ্ছি।” বাংলার সীমানার কাছাকাছি আরও একটি বাঘ রয়েছে বলে খবর ছড়িয়েছে। তা নিয়ে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে পদক্ষেপের জন্যও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বলেন, “প্রত্যেক বার আমাদের দোষ দিলে চলবে না। আমাদের পাঁচ জেলার মানুষ অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন উদ্ধার অভিযানের জন্য।” তাঁর কথায়, “বন্য জন্তুকে আমরা ভালবাসি। বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা দেওয়া যেমন আমাদের কাজ, তেমনই মনে রাখবেন মানুষের জীবনেরও দাম রয়েছে।”
জ়িনত বাংলায় প্রবেশ করায় গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। কোনও অঘটন এড়াতে বন্ধ রাখতে হয় আশপাশের স্কুলও। রাজ্যের বনকর্মীদের টানা চেষ্টার পর শেষে বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকে খাঁচাবন্দি করা হয় বাঘিনি জ়িনতকে। তবে মমতার অনুযোগ, বাংলার বনকর্মীরা বাঘিনিকে উদ্ধার করার পর থেকে ওড়িশা থেকে বার বার বলা হয়েছে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। ওড়িশা প্রশাসনের এমন ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাঘিনি জ়িনত ওড়িশার সিমলিপালের জঙ্গলের বাসিন্দা। গত মাসে ঝাড়খণ্ডের কুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবান্ধি এলাকা হয়ে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার কাটচুয়া জঙ্গলে প্রবেশ করেছিল বাঘিনি। তার পর দু’দিন ধরে কখনও ময়ূরঝর্নার জঙ্গলে, আবার কখনও কাকড়াঝোড়ের জঙ্গলে নিজের ঠিকানা বদল করছিল। পরে তেলিঘানার জঙ্গল হয়ে জ়িনত প্রবেশ করে পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ান থানা এলাকার রাইকা পাহাড়ে। রাইকা পাহাড় ও পার্শ্ববর্তী ভাঁড়ারি পাহাড়ে দিন চারেক কাটিয়ে মানবাজারের ডাঙ্গরডিহির জঙ্গলে হাজির হয় সে। সেখান থেকেই কুমারী নদী পেরিয়ে জ়িনত প্রবেশ করে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের গোঁসাইডিহির জঙ্গলে। সেই জঙ্গল থেকেই ধরা হয় জ়িনতকে। সেখান থেকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়। রাখা হয় পর্যবেক্ষণে। এর পর গত মঙ্গলবার রাতে গ্রিন করিডোরে করে সিমলিপালে নিয়ে যাওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy