প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় নাম উঠে আসা প্রভাবশালী সাংসদ, বিধায়ক ও প্রধানত রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের তলব করার জন্য তালিকা তৈরি হচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি। অযোগ্য প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করা ওই প্রভাবশালীরা নিজেরাও নিয়োগ দুর্নীতির ‘মিডলম্যান’ কি না সিবিআই খতিয়ে দেখছে বলেও তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি উঠে এসেছে। নিয়োগ দুর্নীতির আর্থিক লেনদেনে ওই প্রভাবশালীদের পকেটে লাভের গুড় কতটা ঢুকেছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি।
এখন বাঁকা পথে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। জনৈক তদন্তকারীর দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের নাম সুপারিশকারী প্রভাবশালীদের আগামী সপ্তাহেই নোটিস দিয়ে ডাকা হতে পারে।
সম্প্রতি বিচার ভবনের সিবিআই বিশেষ আদালতে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে নানা সাংসদ, বিধায়ক ও নেতাদের সুপারিশপত্র পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের দাবি, ওই সুপারিশপত্র অনুযায়ী ৩২১ জন চাকরিপ্রার্থীর একটি তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পাঠিয়েছিলেন পার্থ। ওই তালিকার থেকে ১৩৪ জনের চাকরি হয়েছিল বলে দাবি। বিকাশ ভবনের ওয়্যার হাউস থেকে পরিত্যক্ত বস্তা বোঝাই নথিতে ওই সব নামের তালিকা পাওয়া গিয়েছিল বলে তদন্তকারীদের সূত্রের খবর।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ওই চাকরিপ্রার্থীদের একাংশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলেও দাবি। ২০১৪ সালের টেট অনুত্তীর্ণ অযোগ্য প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের কথায়, “প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় বহু মিডলম্যানের ভূমিকাই সামনে এসেছে। চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুপারিশকারী সাংসদ, বিধায়ক ও স্থানীয় নেতারা নির্দিষ্ট কয়েক জনের নাম তাঁদের নিজস্ব প্যাডে লিখে পাঠিয়েছিলেন। এর পরে ওই তালিকায় ১৩৪ জনের নাম বেছে নেওয়া হয়েছিল।”
পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্য ছাড়া অন্য প্রভাবশালীরাও অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরির সুপারিশ করে লাভবান হয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি উঠে এসেছে। বাঁকা পথে চাকরি প্রার্থীদের একাংশকে জিজ্ঞাসাবাদে তেমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলেও দাবি। তদন্তকারীদের এক জনের কথায়, “বিভিন্ন সাংসদ, বিধায়ক ও নেতা সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু বাছাই কয়েক জনের সুপারিশেই অযোগ্য প্রার্থীদের কপালে চাকরির শিকে ছিঁড়েছে। এখানেই আর্থিক লেনদেনের সন্দেহ জোরালো হচ্ছে।” তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে মিডলম্যান মারফত পাঁচ থেকে আট লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছিল বলে তথ্য মিলেছে। সুপারিশ করার পর আর্থিক লেনদেনে বোঝাপড়া না হওয়ায় কয়েক জন প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার তথ্য সূত্র মিলেছে বলেও দাবি। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, অযোগ্য প্রার্থীদের জমা দেওয়া টাকা নানা ভাবে ভাগ হয়েছিল। ধাপে ধাপে চাকরি পাকাপোক্ত হওয়া পর্যন্ত টাকা নেওয়া হয়। চাকরি পাকাপোক্ত হওয়ার পরে সুপারিশকারীরা কোনও ভাবে লাভবান হয়েছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে তদন্তকারীদের অভিমত।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)