Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বাঁধের তলায় পাইপ বসিয়ে টানা হচ্ছে নদীর জল

সাদা চোখে দেখলে মনে হবে, কই বাঁধের ক্ষতি তো হচ্ছে না। বাঁধ কাটা তো হয়নি। এ দিকে, বাঁধের তলা দিয়ে সরু পাইপ জোড়া হয়েছে নোনা জলের খাল বা নদীর সঙ্গে। সেখান থেকেই ঢুকছে জল। তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট মেছোভেড়ি (ফিসারি)। চাষ হচ্ছে চিংড়ি, বাগদার।

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৪
Share: Save:

সাদা চোখে দেখলে মনে হবে, কই বাঁধের ক্ষতি তো হচ্ছে না। বাঁধ কাটা তো হয়নি।

এ দিকে, বাঁধের তলা দিয়ে সরু পাইপ জোড়া হয়েছে নোনা জলের খাল বা নদীর সঙ্গে। সেখান থেকেই ঢুকছে জল। তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট মেছোভেড়ি (ফিসারি)। চাষ হচ্ছে চিংড়ি, বাগদার।

প্রয়োজন মতো বাড়তি জল টানতে ব্যবহার করা হচ্ছে পাম্পও। সরাসরি বাঁধ কাটা না হলেও বাঁধ ফুটো করে এ ভাবে পাইপ বসানোর ফলেও বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে বলে আশঙ্কা সেচ দফতরের বাস্তুকারদের একাংশের।

কাকদ্বীপের এই সব ছোট ভেড়ির বেশিরভাগই বেআইনি ভাবে চলছে বছরের পর বছর ধরে। জেলার কয়েক হাজার হেক্টর এলাকায় গড়ে ওঠা এই ভেড়িগুলির উপরে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকাও নির্ভর করছে।

তাই হয় তো রাজ্য সরকারের নিয়ম-নিষেধেরও যেন কিছুটা গা-ঢিলা ভাব এখানে। এই পরিস্থিতিতে নামখানা, বুধাখালি, হরিপুর, চন্দনপিড়ির মতো জায়গায় রমরমিয়ে চলছে বেআইনি কারবার।

অভিযোগ, এতে মৎস্য দফতরের বা সেচ দফতরের কোনও অনুমোদন অনেক জায়গাতেই নেওয়া হচ্ছে না। যদিও কাকদ্বীপের সেচ দফতরের কর্তারা দাবি করছেন, নদীবাঁধ বা নোনাজলের খালের বাঁধের তলা দিয়েও কোনও রকম পাইপ বিছিয়ে কাজ করা যাবে না। এ রকম জানলে তাঁরাই থানায় অভিযোগ করবেন। তবে নামখানা এবং কাকদ্বীপের সেচকর্তারা এ রকম কোনও অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন।

এ ধরনের ছোট ভেড়ি তৈরি করতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের কোস্টাল অ্যাকোয়া কালচার অথরিটির অনুমোদন নেওয়ার কথা। কিন্তু জেলায় এখনও প্রায় ৫০ শতাংশের মতো এ রকম ভেড়ির অনুমোদন নেই বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।

ফলে নিয়ামক সংস্থার বেঁধে দেওয়া বিধিনিষেধেরও তোয়াক্কার বালাই নেই ছোট ভেড়ির মালিকদের। নানা রকমের কীটনাশক, ওষুধ ব্যবহারের পরে যখন সেই জল খাল বা নদীতে ছাড়া হচ্ছে, তা থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে। অথচ সংস্থার নিয়মেই বলা রয়েছে, জল পরিস্রুত করে ফেলতে হবে।

কাকদ্বীপের বুধাখালিতে গিয়ে দেখা গেল, ছোট ভে়ড়িতে মাছ চাষ চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। স্থানীয় এক ক্লাবের কর্মকর্তা দেবাশিস সাঁতরা বলেন, ‘‘নদীবাঁধ ভেঙে যাচ্ছিল, সেখানে ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়। তা বাঁচাতেই ছোট ছোট সমবায় গড়ে রিংবাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু হয় বহু দিন আগে। চিংড়িচাষই এখানকার মানুষের মূল জীবিকা।’’ প্রায় দেড়শো বিঘে জমিতে এখানে মাছ চাষ চলছে। বাঁধের তলা দিয়ে পাইপে নোনা জল ঢোকানোর ব্যবস্থা আছে এখানেও। বহু মানুষের জীবিকার সুরাহা যেমন হচ্ছে, বাঁধেরও ক্ষতি হচ্ছে এ ভাবে কাজ চালানোয়। এ ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর অবশ্য দাবি, প্রতিনিয়ত বাঁধ রক্ষার দায়িত্ব তাঁরাই নেন।

নামখানার দ্বারিকনগর থেকে শুরু করে হরিপুর, চন্দনপিড়িতেও রয়েছে এ রকম বেশ কিছু ভেড়ি। উত্তর ও দক্ষিণ চন্দনপিড়ি এলাকায় সপ্তমুখী নদীর পাড় বরাবর ৬ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে অন্তত ৬০০ ভেড়ি। তার অনেকগুলিরই অনুমোদন নেই।

কেন নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না?

মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কয়েক হাজার হেক্টর এলাকায় ভেড়ি করে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। এর উপরে কয়েক লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম তৈরি হয়েছিল অনেকটা দক্ষিণী রাজ্যগুলির ধাঁচে। তাই সচিব স্তরে আলোচনার ভিত্তিতে কিছু নিয়ম শিথিল করা হয়েছে।’’

ওই কর্তার দাবি, স্থানীয় ভাবে জমির চরিত্র, মানুষের জীবিকা— সব কিছু মাথায় রেখেই এ সব করা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

water pipes dam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE