গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে গুঞ্জন চলছিল। রবিবার তা সত্যি হয়েছে। সুকান্ত শপথ নিতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে বদল অনিবার্য। আর তার পরেই সমাজমাধ্যমে জোর তরজায় নেমে পড়েছে রাজ্য বিজেপির দুই যুযুধান নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষের ‘বাহিনী’। এমনকি, নাম না-করে শুভেন্দুর নারদকান্ডে জড়িত থাকার ঘটনাও টেনে আনা হয়েছে।
বর্ধমান-দুর্গাপুরে হারের পর থেকে গত কয়েক দিন ধরে বিস্ফোরণের সিরিজ় শুরু করেছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ। সরাসরি নাম না করলেও অনেকেরই বক্তব্য, দিলীপ আসলে ‘নিশানা’ করতে চেয়েছেন শুভেন্দুকে। অন্য দিকে, শুভেন্দু সরাসরি দিলীপ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ঠিক পথেই রয়েছি। দু’কোটিরও বেশি মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন।’’
এ হেন পরিস্থিতিতে দেখা গেল, ফেসবুকে যুদ্ধ শুরু করেছেন দুই নেতার অনুগামীরা। তার জন্য নতুন করে তৈরি হয়েছে দুটি ‘পেজ’। একটির নাম ‘দিলীপদার অনুগামী’, অন্যটির নাম ‘শুভেন্দুদার অনুগামী।’
যুদ্ধের এমনই রমরমা যে, ‘শুভেন্দুদার অনুগামী’ পেজে লেখা হয়েছে, ‘মহাবীর দিলীপ ঘোষের রেকর্ডটাও একটু জেনে রাখা দরকার। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতে মাত্র ৫ হাজার সদস্য জেতাতে পেরেছিলেন দিলীপবাবু। ২০২৩-এ ভয়াবহ সন্ত্রাসের পরেও ১১ হাজার পঞ্চায়েত সদস্য আছে বিজেপির। যদিও গোপীবল্লভপুরে নিজের বুথে হেরেছেন দিলুদা।’ সেখানে আরও লেখা হয়েছে, ‘২০১৯- এ বিজেপি ১৮টি সাংসদ জেতার পরে তিনটি আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল। তার মধ্যে দিলীপবাবুর ছেড়ে যাওয়া খড়্গপুর সদরও ছিল। তিনটি আসনেই হেরেছিল বিজেপি। দিলুদা নিজের আসনও ধরে রাখতে পারেননি।’ পক্ষান্তরে, দিলীপের অনুগামীরা লিখেছেন, ‘দিলীপদা আর সুকান্তদার দিকে যে দালাল, চিটিংবাজগুলো আঙুল তুলছে, সেই সব তথাকথিত অনুগামীদের কয়েকটা বিষয় মনে করিয়ে দিই— দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারকে কোনও দিন ক্যামেরায় কাগজ মুড়িয়ে টাকা নিতে দেখেছেন? তবে কিছু ছোটলোক, চোর-জোচ্চোরদের দেখা গেছিল।’ এই ভাবে এক, দুই, তিন করে মোট ১৪টি ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যদিও রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্য সভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই সব পেজের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। এগুলো পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূল করছে।’’ পাল্টা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপির উচিত দমকলকে সময়ে সময়ে খবর দেওয়া! নইলে বড় বিপদ হয়ে যাবে।’’
তবে ওই ফেসবুক পেজের বাইরেও বিভিন্ন গ্রুপে তরজা জারি রয়েছে। দিলীপ অনুগামীদের যুক্তি, শুভেন্দুর কথায় কেন্দ্র বদল করেই এই বিপর্যয়ের মুখে দলকে পড়তে হয়েছে। জেতা আসনে প্রার্থী করলে দিলীপদের হারতে হত না। পাল্টা শুভেন্দু শিবিরের যুক্তি: লকেট চট্টোপাধ্যায়, নিশীথ প্রামাণিক, সুভাষ সরকারদের তো নিজেদের আসনেই প্রার্থী করা হয়েছিল। তা হলে তাঁরা হারলেন কেন? তাঁদের এ-ও বক্তব্য, দিলীপ সব সময় ‘আদি’ বিজেপিকে মহিমান্বিত করেন। তাঁর কেন্দ্রে গিয়ে তো আদি বিজেপির সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়েরা পড়েছিলেন। তা হলে এক লক্ষের বেশি ভোটে কেন হারলেন দিলীপ? ওই আসন তো গত বার বিজেপির জেতা ছিল।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। দিলীপকে আবার রাজ্য সভাপতির পদে ফেরানো হবে কি না, না কি শুভেন্দুকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়েও রাজ্যের পদ্মশিবিরে আলোচনা শুরু হয়েছে। তত্ত্ব বিবিধ। অনেকে বলছেন, শুভেন্দুকে রাজ্য সভাপতি করে দিলীপকে মেদিনীপুর বিধানসভা থেকে জিতিয়ে এনে (ওই আসনের তৃণমূল বিধায়ক জুন মালিয়া সাংসদ হয়ে গিয়েছেন। ফলে সেখানে উপনির্বাচন হবে) তাঁকে পরিষদীয় দলনেতা করা হোক। অনেকে আবার বলছেন, তা হলে শুভেন্দুর বিধানসভা আসন নন্দীগ্রামে কাকে প্রার্থী করা হবে? বিশেষ, যেখানে শুভেন্দু হারিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
কেউ কেউ এমনও বলছেন, ‘দ্বন্দ্ব’ ঠেকাতে ‘তৃতীয়’ কাউকে রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব দিতে পারেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। কারণ, যাঁকে এখন সভাপতি করা হবে, বড় কোনও অঘটন না ঘটলে তাঁর নেতৃত্বেই বাংলায় ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট লড়বে পদ্মশিবির। এ সবের মধ্যেই ঘোষ-অধিকারীর অনুগামীদের তরজা বেধেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy