১৪৪ ধারা জারির পরেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভার জন্য মঞ্চ বাঁধা হচ্ছে রায়গঞ্জের মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানে।—নিজস্ব চিত্র।
যাঁকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের ঘুম উড়ে গিয়েছে গত ক’দিন ধরে, সেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া শেষ পর্যন্ত রায়গঞ্জে সভা করতে আসছেন না। এই খবর পাওয়ার পরেও অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে নেই রাজ্য সরকার। রায়গঞ্জে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভা বানচাল করতে প্রস্তাবিত সভাস্থল ও লাগোয়া এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক বিপুলকুমার বসু। অন্য দিকে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েও প্রস্তাবিত জায়গায় সভা করে মুখ বাঁচাতে মরিয়া ভিএইচপি-র রাজ্য নেতারা।
ভিএইচপি-র সভায় মাইক বাজানো নিয়ে আদালতের নির্দেশ বৃহস্পতিবার বিকেলে হাতে পাওয়ার পরে মহকুমাশাসক ৬০ দিনের জন্য প্রস্তাবিত সভাস্থল ও লাগোয়া ২০০ মিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। শুক্রবার দুপুরে ভিএইচপি কর্তাদের রায়গঞ্জ থানায় ডেকে পাঠিয়ে প্রশাসনিক ওই সিদ্ধান্তের কপি তাঁদের হাতে তুলে দেন উত্তর দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার। বিনা অনুমতিতে মাইক বাজিয়ে শহরে ওই সভার প্রচার চালানোর জন্য পুলিশ এ দিনই ভিএইচপি নেতৃত্বকে সতর্ক করার পরে প্রচার বন্ধ হলেও মার্চেন্ট ক্লাব মাঠে সভামঞ্চ তৈরির কাজ কিন্তু চলছে।
কিন্তু তোগাড়িয়া এ ভাবে পিছু হটলেন কেন?
প্রকাশ্যে ভিএইচপি এ নিয়ে কিছু না বললেও তোগাড়িয়া প্রশ্নে মমতা প্রশাসনের সঙ্গে যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা মোটেই ভাল ভাবে নিচ্ছেন না নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, দু’সপ্তাহ বাদেই ফের সংসদের অধিবেশন শুরু হতে চলেছে। সেখানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল রাজ্যসভায় পাশ করাতে হবে বিজেপিকে। এবং সেটা করতে গেলে সংখ্যালঘু বিজেপির যে তৃণমূলের সমর্থন দরকার, তা ভালই জানেন মোদী। তাই এখন তোগাড়িয়াকে ঘিরে মমতার সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত করার পক্ষপাতী নন তিনি। এই বার্তা দেওয়া হয়েছে ভিএইচপি শিবিরকেও। তা ছাড়া ভিএইচপি-র অন্যতম শীর্ষ নেতা অশোক সিঙ্ঘলের সঙ্গে তোগাড়িয়ার বিবাদ দীর্ঘ দিনের। ঘনিষ্ঠ মহলে তোগাড়িয়ার রায়গঞ্জ সফর নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সিঙ্ঘলও। ভিএইচপি সূত্রের খবর, এ কারণেই প্রথমে গ্রেফতার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে সরে আসেন তোগাড়িয়া।
ভিএইচপি-র একটি মহলের বক্তব্য, রামপুরহাট সংলগ্ন একটি গ্রামে ধর্মান্তরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অভিযোগে তোগাড়িয়ার বিরুদ্ধে রাজ্য যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, তার ভিত্তিতে পুলিশ পশ্চিমবঙ্গে পা দিলেই এই ভিএইচপি নেতাকে গ্রেফতার করে প্রথমে জেলে ঢোকাবে। ভিএইচপি সূত্রের দাবি, এতে পুর ভোটের আগে এক যোগে সংখ্যালঘু ও ধর্মনিরপেক্ষ ভোটব্যাঙ্ককে বার্তা দিয়ে আখেরে লাভবান হবে তৃণমূলই। তাই সব দিক ভেবে তোগাড়িয়া
মত বদলেছেন। আজ তোগাড়িয়া এ বিষয়ে বলেছেন, ‘‘সমগ্র বাংলায় আমার প্রবেশ আটকানো আসলে মুখ্যমন্ত্রীর মনের মধ্যে থাকা নিরাপত্তাহীনতারই প্রকাশমাত্র!’’
তোগাড়িয়া না এলেও রায়গঞ্জে ভিএইচপি-র সভা আটকাতে সব রকম ব্যবস্থাই নিচ্ছে প্রশাসন। তাদের যুক্তি, সম্প্রতি রায়গঞ্জ লাগোয়া বিহারের কানকিকে গোষ্ঠী সংঘর্ষে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। তার ভিত্তিতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এসপি প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে ভিএইচপি-র সভা নিয়ে গোলমাল ও সম্প্রীতি নষ্টের আশঙ্কার কথা জানান। সে কথা মাথায় রেখেই মার্চেন্ট ক্লাব ময়দান ও তার চারদিকের ২০০ মিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে মহকুমাশাসক তাঁর নির্দেশে লিখেছেন।
প্রশাসনের দাবি, ১৪৪ ধারা জারি করে দেওয়ার ফলে আলাদা করে ওই ময়দানে মাইক বাজানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কোনও যৌক্তিকতা নেই। ভিএইচপি-র আইনজীবী তপন মজুমদার অবশ্য বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারের রায় অনুযায়ী আমাদের সভা করতে কোনও বাধা নেই। প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে।’’ এ দিন গুডফ্রাইডে উপলক্ষে আদালত বন্ধ ছিল। আজ, শনিবার এবং কাল রবিবার আদালত বন্ধ। রবিবার ওই সভা হওয়ার কথা। সভার অন্যতম কর্তা বিজয়কৃষ্ণ তালুকদার বলেন, ‘‘প্রশাসন যতই বাধা দিক, আমরা পিছু হটছি না।’’
ভিএইচপি-র দাবি প্রসঙ্গে মহকুমাশাসক কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলাশাসক রণধীর কুমার বলেছেন, ‘‘আদালতের রায় নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। তবে এটা বলতে পারি আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে আশঙ্কা করেই ওই সভা বন্ধ করতে আগামী দু’মাসের জন্য মার্চেন্ট ক্লাব মাঠ ও তার চারদিকের ২০০ মিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, ১৪৪ ধারা জারির পর মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানে মঞ্চ তৈরির কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পুলিশ ভিএইচপি কর্তাদের কয়েক জন-সহ সংশ্লিষ্ট ডেকরেটর কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। রবিবার ওই মাঠে সভা করার চেষ্টা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy