Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Education

Unemployment: সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বারবার ব্যর্থ, সংসার চালাতে এমএ বিশ্বজিৎ এখন রাজমিস্ত্রি

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে পাস। চাকরির পরীক্ষায় বসেও ব্যর্থ। সংসার টানতে রাজমিস্ত্রির কাজে বিশ্বজিৎ।

রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যস্ত বিশ্বজিৎ।

রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যস্ত বিশ্বজিৎ। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস।

সুপ্রকাশ চৌধুরী
শক্তিগড় শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২২ ০৫:২৩
Share: Save:

যে হাতে কলম ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন, সে হাতেই এখন কর্নিক। ইট-সিমেন্ট দিয়ে অন্যের বাড়ি গড়ছেন পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মণ্ডল। বারবার সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসেও ব্যর্থ হয়ে, সংসার টানতে রাজমিস্ত্রির কাজ বেছে নিয়েছেন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি। এখন বেসরকারি সংস্থায় কর্মখালির খবর পেলে, নিজের ‘বায়োডেটা’ নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে ছোটেন।

বড়শুল সিডিপি স্কুলের পিছনে একটি বাড়ি তৈরির ফাঁকে স্থানীয় বকুলতলার বাসিন্দা বছর সাতাশের বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘এই স্কুলেই পড়তাম। জমিজমা নেই। বাবা-মা দিনমজুরি করে আমাকে পড়ান। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগ পাই। ২০১৪ সালে মেমারি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাম্মানিক স্নাতক, ২০১৬ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর পাশ করি। চাকরিতে অগ্রাধিকার পাব ভেবে কম্পিউটারের ডিপ্লোমাও করি। কিছুই কাজে লাগল না!’’

২০১৭ থেকে রেল, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, রাজ্য ও কেন্দ্রের ‘গ্রুপ সি’, ‘গ্রুপ ডি’ পদের জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন যুবক। ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষাতেও বসেন। চাকরির ডাক না আসায়, রাজমিস্ত্রির কাজে নেমে পড়েন।

বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘বয়স্ক বাবা-মাকে দিনমজুরি করতে দেখে খারাপ লাগত। পেশায় রাজমিস্ত্রি এক বন্ধুর সঙ্গে ২০১৮ সালে প্রথমে কাজে নামি। লকডাউনের সময় বাবা-মায়ের কাজ কমে যাওয়ায়, পুরোদস্তুর রাজমিস্ত্রির কাজ করছি। দৈনিক সাড়ে তিনশো থেকে চারশো টাকা মজুরি পাই।’’

অ্যাসবেস্টসের চালার দু’টি ঘরে বাবা-মাকে নিয়ে তাঁর বাস। বাবা-মা রবীন মণ্ডল ও টুনি মণ্ডল বলেন, ‘‘কোনও দিন আধপেটা খেয়ে, কখনও খালি পেটেই ছেলে স্কুলে যেত। তবু পড়া ছাড়েনি। এত দূর পড়াশোনা করে ওকে রোদে-জলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে দেখে খারাপ লাগে। তবু বলি, চাকরির ইন্টারভিউগুলো দিতে।’’

মেমারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান চিত্রলেখা কাঞ্জিলাল বলেন, ‘‘মেধাবী ছাত্র বিশ্বজিৎকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মধ্যেও চাকরির খোঁজ করতে দেখেছি। রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন জেনে, খারাপ লাগছে।’’

জেলারই মন্তেশ্বরের হেমন্ত মল্লিক বাংলায় এমএ পাশ করে চাকরি না পেয়ে বাবার চায়ের দোকান সামলাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে সরকারি চাকরির যা অবস্থা, আমাদের মতো শিক্ষিতদের এ ভাবেই রুজির পথ বাছতে হবে। তবে আমি পিএইচডি-র জন্য আবেদন করেছি। বিশ্বজিৎকেও চাকরির চেষ্টায় লেগে থাকতে বলব।’’ বিশ্বজিৎ বলেছেন, ‘‘পরিশ্রম করি রোজগারের জন্য। চাকরির চেষ্টা ছাড়িনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Education Unemployment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy