কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের ফাঁকে আলাপচারিতায় সিপিএমের নেত্রীরা। নিউ টাউনে। —নিজস্ব চিত্র।
কংগ্রেস-প্রশ্নে দলের অন্দরে বিতর্ক ছিলই। এ বার রাজ্যে দলের অবস্থান নির্ণয়ের প্রশ্নেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাল্টা সওয়াল করল সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেড!
সীতারাম ইয়েচুরি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন রাজ্যের পরিস্থিতির ‘বাস্তবতা’ বুঝে বাংলার নেতৃত্বের পাশে থেকেই দলের অবস্থানে সিলমোহর দিতেন। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বোঝাপড়ার দায়িত্বও ছিল তাঁর কাধে। ইয়েচুরির প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে সেই সব পরিস্থিতিতেই বিস্তর পরিবর্তন এসেছে! পরিবর্তিত ‘বাস্তবতা’ বুঝেই বঙ্গ ব্রিগেডের প্রতিনিধিরা নিজেদের মত প্রতিষ্ঠায় নতুন করে তৎপর হচ্ছেন বলে দলের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা।
সিপিএমের আগামী পার্টি কংগ্রেস হতে চলেছে এপ্রিলে, তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে। পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে দলের রাজনৈতিক কৌশলগত লাইনের পর্যালোচনা রিপোর্ট নিয়ে এর আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছিল। সেই সময়ে কথা হয়েছিল, বাংলাতেও দলকে বিজেপির মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে, পদ্ম শিবিরকেই ‘প্রধানতম প্রতিপক্ষ’ চিহ্নিত করতে হবে। এ বার নিজেদের রাজ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাটের সামনে বাংলার পরিস্থিতি নতুন করে বোঝাতে সরব হয়েছেন বাংলার নেতারা। দলীয় সূত্রের খবর, নিউ টাউনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে এ রাজ্যের তিন নেতা-নেত্রী স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির বিরোঝিতায় ঝাঁঝ অবশ্যই বাড়াতে হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় সুর নরম করতে হবে। তাঁদের মতে, বাংলার শাসক দল এক দিকে যেমন দুর্নীতি, অপশাসনে অভিযুক্ত, তেমনই মেরুকরণের রাজনীতিতে তারা বিজেপির জুড়িদার। বাংলার নেতারা এই প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন, মেরুকরণের তাস খেলার পাশাপাশিই এই রাজ্যে শাসক দল হিন্দুত্বের হাওয়া টানতে জগন্নাথ মন্দির গড়ছে সরকারি আনুকূ্ল্যে। সামগ্রিক পরিস্থিতির নিরিখে তৃণমূলকে রেয়াত করার প্রশ্ন নেই বলেই সওয়াল করেছেন তাঁরা।
এই সূত্রেই কেরলের প্রতিনিধিরা কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে একই রকম প্রশ্ন তুলেছেন। সে সবের জেরে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের মধ্যে থেকেও সিপিএমের বিড়ম্বনার কথা ফের উঠে এসেছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘দু’রাজ্যের প্রতিনিধিরাই তাঁদের মাটি বুঝে বাস্তবতার কথা বলছেন।’’ ঘটনা হল, বাংলা ও কেরল, দুই রাজ্যেই আগামী ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। দুই রাজ্যেই ‘ইন্ডিয়া’র শরিক যথাক্রমে তৃণমূল ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে বামেদের! ‘দিল্লিতে দোস্তি, রাজ্যে কুস্তি’র যে কটাক্ষ বিজেপি তাদের করে, সেই অস্বস্তি সহজে কাটাতে পারছে না সিপিএম।
আরএসএস-বিজেপির সর্বাত্মক মোকাবিলা এবং তাদের ‘আধা ফ্যাসিস্ত’ আখ্যা দিতে সিপিএমে অবশ্য দ্বিমত নেই। পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনেও তার প্রতিফলন থাকছে। আগামী পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতির কথা বলতে গিয়ে কো-অর্ডিনেটর কারাটও বাম আন্দোলন ও বাম ঐক্যকে শক্তিশালী করার ডাক দিয়েছেন। সেই সঙ্গেই মেনে নিয়েছেন, গত কয়েক বছরে বিজেপির সঙ্গে এঁটে ওঠার মতো করে বামেদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়েনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy