Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

লঞ্চ ছেড়ে গাড়িতে যাওয়া-আসা অভ্যাস করুন: শুভেন্দু অধিকারী

অনেকটা যেন সেই ঢঙেই লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার পরে অসুবিধায় পড়া নিত্যযাত্রীদের গাড়িতে যাতায়াত করার পরামর্শ দিলেন এ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী!

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১২
Share: Save:

কথিত আছে, রাজ্যে রুটির অভাব শুনে ক্ষুধার্ত প্রজাদের কেক খেতে বলেছিলেন ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুইয়ের রানি মারি আঁতোয়ানেত।

অনেকটা যেন সেই ঢঙেই লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার পরে অসুবিধায় পড়া নিত্যযাত্রীদের গাড়িতে যাতায়াত করার পরামর্শ দিলেন এ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী!

গঙ্গাসাগর মেলায় পুণ্যার্থীদের নিয়ে যেতে হাওড়া থেকে আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ভূতল পরিবহণের সমস্ত লঞ্চ পরিষেবা। এ বার দশ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির অধিকাংশ রুটের লঞ্চও। বিকল্প ব্যবস্থা না করেই লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সব রুটের ৫০ হাজারেরও বেশি যাত্রী।

কিন্তু এ ভাবে এত মানুষকে অসুবিধায় ফেলে সমস্ত লঞ্চ গঙ্গাসাগরে পাঠানো হল কেন? পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘গঙ্গাসাগর এক আন্তর্জাতিক মেলা। তাই সেটিকে প্রাধান্য দিয়ে

লঞ্চ পাঠানো হয়েছে। এখানে দু’টি লঞ্চ তো রয়েছে যাত্রী পরিবহণের জন্য।’’ কিন্তু সেই লঞ্চ দু’টিও তো রবিবার থেকে চলে যাবে? এর উত্তরে মন্ত্রী অবশ্য খুব সহজ সমাধান বাতলে দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শ, ‘‘এই ক’দিন বরং লঞ্চ ছেড়ে গাড়িতে যাওয়া-আসা অভ্যাস করুন।’’

আয় বাড়াতে গত কয়েক বছর ধরেই হাওড়া থেকে সমস্ত লঞ্চ গঙ্গাসাগরে পাঠিয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকারের ভূতল পরিবহণ সংস্থা। ফলে প্রতি বছরই এ সময়ে নাজেহাল হতে হয় যাত্রীদের। ভূতল পরিবহণ ছাড়া অন্য যে সংস্থা হাওড়া-কলকাতা রুটে লঞ্চ চালায়, সেটি হল হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। ওই সংস্থার ১৫টি বড় ও ১২টি ছোট লঞ্চ রয়েছে। মোট সাতটি রুটে তারা লঞ্চ চালায়। হাওড়া-বাগবাজার ভায়া গোলাবাড়ি, হাওড়া-আর্মেনিয়ান ঘাট, হাওড়া-ফেয়ারলি ঘাট, হাওড়া-চাঁদপাল ঘাট, নাজিরগঞ্জ-মেটিয়াবুরুজ, বাউড়িয়া-বজবজ এবং গাদিয়াড়া-নুরপুর। এই সাতটি রুট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন, যার মধ্যে পাঁচটি রুটই হাওড়া ও কলকাতার মধ্যে চলে। এ মাসের ৯ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত হাওড়া-কলকাতা সংযোগকারী সেই পাঁচটি রুটের মধ্যে চারটি রুট সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে ১৩টি লঞ্চ চলে গিয়েছে গঙ্গাসাগরে। শুধু হাওড়া-চাঁদপাল ঘাট রুটে দু’টি লঞ্চ চালানো হচ্ছে যাত্রী পরিষেবার জন্য। সেই দু’টি লঞ্চও কাল, রবিবার থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে গঙ্গাসাগরে। অর্থাৎ, রবিবার থেকে হাওড়া-কলকাতা জলপথ পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

আরও পড়ুন: সাগরমেলায় রাজ্যের প্রাপ্তি শুধুই বাহবা

৩৯৬ জন কর্মীকে নিয়ে টালমাটাল অবস্থায় এক দশক ধরে চলছিল হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ধরা পড়ায় গত বছর তৃণমূল পরিচালিত পরিচালন কমিটিকে সরিয়ে ওই সংস্থার মাথায় প্রশাসক বসায় রাজ্য সরকার। সমিতি সূত্রের খবর, গত এক বছরে তাদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। এই পরিস্থিতিতে পরিষেবা বন্ধ করে এ ভাবে সমস্ত লঞ্চ পাঠিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ কর্মীদের অনেকেই।

তাঁদের বক্তব্য, আগে যখন ২০টি লঞ্চ ছিল, তখন ১০টি লঞ্চ গঙ্গাসাগরে পাঠিয়ে বাকি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পরিষেবা দেওয়া হত। যাতে দু’দিকেই ভারসাম্য থাকে। কর্মীদের মতে, গঙ্গাসাগর থেকে যা আয় হয়, তাতে তাঁদের বোনাস, পেনশন ও গ্র্যাচুইটির টাকা যে উঠে যায়, সে কথা ঠিক। কিন্তু সারা বছর যে যাত্রীদের জন্য জলপথ বেঁচে রয়েছে, তাঁদের ভোগান্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে সব ক’টি লঞ্চই এ বছর গঙ্গাসাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘গঙ্গাসাগর মেলা রাজ্যের ঐতিহ্য। তাই দু’টি বাদে সব লঞ্চ পাঠানো হয়েছে, যাতে পুণ্যার্থীদের সমস্যা না হয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE