কেন্দ্রীয় বাজেটে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে তোপ দাগল তৃণমূল। এমনই বলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থ বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র। কেন ষড়যন্ত্র, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অমিত বলেছেন, ‘‘বিমা ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ১৮ শতাংশ জিএসটি নেওয়া বন্ধ হচ্ছে না। এই দু’টি বিষয় কি সম্পর্কযুক্ত নয়? এর ফলে কি আন্তর্জাতিক লবি লাভবান হবে না? তাদের সুবিধা করে দিতেই কি এই পদক্ষেপ?’’
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য-সহ সমস্ত বিমায় জিএসটি প্রত্যাহারের প্রথম দাবি তুলেছিলেন কেন্দ্রেরই মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে গত বছর চিঠি লিখে নিতিন দাবি করেছিলেন, যে নাগরিক তাঁর স্বাস্থ্যের জন্য বিমা করেন, তাতে জিএসটি নেওয়া চাপ বৃদ্ধি করা ছাড়া কিছুই নয়। একই দাবিতে নির্মলাকে দু’টি চিঠি লিখেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। সেই জিএসটি-র হার শূন্য করা তো দূরে থাক, ১ বা ২ শতাংশও কমানো হয়নি। পাশাপাশিই, বিমা ক্ষেত্র ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হল। যাকে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র হিসাবেই দেখছে তৃণমূল। অমিতের কথায়, ‘‘এই বাজেট বিপর্যয়ের বাজেট। মানুষের জীবনযন্ত্রণা আরও বাড়বে।’’
আরও পড়ুন:
-
মধ্যবিত্তকে স্বস্তি দিয়েও নজরে সেই ভোট! বাজেটে কী কী বললেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা
-
ভোটের বছরে বিহারকে দু’হাত ভরে ‘উপঢৌকন’ মোদীর! নির্মলার মধুবনি পরশে শরিকি অঙ্কও স্পষ্ট
-
সরকারি স্কুলে ইন্টারনেট! পাঁচ আইআইটিতে বাড়বে আসন, শিক্ষায় কী কী ‘উপহার’ নির্মলার বাজেটে
-
ওষুধ, ফোন থেকে লিথিয়াম ব্যাটারি! বাজেটে কোন কোন জিনিসের দাম কমল? দাম বাড়ল কিসের?
কেন্দ্রীয় বাজেটে আয়কর ছাড়ের উর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি করে সাত লক্ষ টাকা থেকে ১২ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। যাকে মধ্যবিত্তের জন্য ‘যুগান্তকারী’ সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তৃণমূল পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, ১৪০ কোটির ভারতে কত লোক মাসে এক লক্ষ টাকা রোজগার করেন? উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে সামাজিক সুরক্ষার প্রসঙ্গ তুলে অমিত বলেছেন, মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিষয়গুলিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বাজেটে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে ৫ শতাংশ বরাদ্দ ছাঁটা হয়েছে। খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেও ভর্তুকি ১ শতাংশ কমিয়েছে কেন্দ্র। তৃণমূলের দাবি, এগুলি থেকেই স্পষ্ট কেন্দ্রীয় সরকারের অভিমুখ কী, কাদের তারা খুশি করতে চেয়েছে।
কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের পরেই সংসদের বাইরে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিহারকে তুষ্ট করার জন্য বাজেট করা হয়েছে। কারণ, চলতি বছরের শেষেই বিহারে ভোট। অভিষেক বলেছেন, ‘‘আগের বাজেটে সব সুবিধা দেওয়া হয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারকে। এখন অন্ধ্রপ্রদেশে নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। তাই ওরা বিহারের দিকে মন দিয়েছে।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘যখন বাংলা থেকে ১৮ জন বিজেপি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখনও বাংলা কিছুই পায়নি। এখনও বাংলার ১২ জন বিজেপি সাংসদ রয়েছেন। কিন্তু তা-ও বাংলা কিছুই পেল না! এই ১২ জন সাংসদ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করবেন না। বাংলা বরাবর বঞ্চিত হয়েছে। এ বারেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটল।’’