(বাঁ দিকে) চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। শমীক ভট্টাচার্য। — ফাইল চিত্র।
নাম না-করে সন্দেশখালিকাণ্ডে তৃণমূল নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে রাজ্য বিজেপির পক্ষে। তৃণমূলের অভিযোগ, তা করতে গিয়ে সারদা দেবীকে ‘উপহাস’ করেছে বিজেপি। হিন্দু ভাইবোনেদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে। চেষ্টা করেছে ‘ধর্মীয় মেরুকরণের’। দলীয় ওই পোস্ট নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিলেন বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি জানিয়েছেন, এই পোস্ট যে হতে পারে, তা তিনি ভাবতেও পারছেন না। বিজেপির পোস্টে ‘মদন’ এবং ‘হাকিম’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করা হয়েছে। শমীক তা নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।
সন্দেশখালিকাণ্ডের শুরু থেকেই বিজেপির অভিযোগ, সেখানে মহিলারা নির্যাতিত হয়েছেন। বিশেষত ‘হিন্দু’ মহিলারা। অভিযোগ, তার নেপথ্যে ছিলেন তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও এনেছে তারা। তা নিয়েই বৃহস্পতিবার একটি ব্যঙ্গচিত্র রাজ্য বিজেপির এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করা হয়েছে। ওই ব্যঙ্গচিত্রে দেখা যাচ্ছে, সবুজ পাড়-সাদা শাড়ি পরে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছেন এক মহিলা। তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, ওই মহিলার বসার ভঙ্গিমা সারদা দেবীর মতো। মুখের আদলের সঙ্গে মিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হাতে ফোন, পায়ে চটি। ব্যঙ্গচিত্রে ‘সংখ্যালঘু তোষণ’-এর অভিযোগ করা হয়েছে। ভোটের জন্য সে সব করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ‘মদন’ এবং ‘হাকিম’ শব্দও। লেখা হয়েছে, ‘‘আমি মদনেরও মা। আমি হাকিমেরও মা।’’ তার পরেই লেখা, ‘‘ভোটের জন্য আমি অন্য দিকে তাকাই, যখন মদনের স্ত্রী হাকিম দ্বারা ধর্ষিত হয়।’’ তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, রাজ্যের বিধায়ক মদন মিত্র এবং মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে এই ইঙ্গিত করা হচ্ছে।
এই নিয়ে সরব হয় তৃণমূল। বিজেপির পোস্ট করা ওই ব্যঙ্গচিত্র এক্সে আবার পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘‘আর কত দিন আমাদের হিন্দু ভাই-বোনদের আবেগ নিয়ে খেলা করবে বিজেপি? মা সারদা দেবীর ব্যঙ্গচিত্র করে তাঁকে পরিহাস করা হয়েছে, যা খুবই নিচু কাজ। এমনকি, বিজেপির জন্যও!’’ এর পরেই বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় ‘মেরুকরণ’-এর অভিযোগ এনেছে তৃণমূল। এক্সে লিখেছে, ‘‘এই কারণেই বাংলা সব সময় বিজেপিকে খারিজ করেছে, যারা সব সময় বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি করাকে গুরুত্ব দেয়। যেমন করে সুযোগসন্ধানীরা, যাদের কোনও নীতি থাকে না।’’
এই নিয়ে বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ধর্মের মেরুকরণ করতে আজ বিজেপি কতটা নীচে নামতে পারে, সেটা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল। হিন্দু-মুসলমান বা অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের প্রতি বিজেপির যে মানসিকতা, তা ন্যক্কারজনক। এই ন্যক্কারজনক মানসিকতা প্রকাশ করতে এ বার ব্যবহার করা হল মা সারদা দেবীকে।’’ এখানেই থামেননি রাজ্যের মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সারদাকে নিয়ে প্রকাশ্যে যে টুইট করেছে, তা আমাদের অবাক করেছে। আমাদের নেতৃত্বের কিছু নাম নিয়ে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছেন, আর কত দিন চলবে। ভদ্র হতে হবে। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে মা সারদাকেও ছাড়বেন না?’’ তিনি এ-ও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, বাংলার মানুষ এ সব মেনে নেবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার মাটিতে এই আচরণ চলে না। সারা ভারতের মাটিতে চলে না। মানুষ এর প্রতিবাদ করছে। ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই।’’
এ রাজ্য থেকে বিজেপির রাজ্যসভার প্রার্থী শমীক তাঁর দলের তরফে করা এই পোস্টকে ধিক্কার জানিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘ছিঃ! এই পোস্ট হতে পারে, বিজেপির পক্ষ থেকে ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। যারা এটা করেছে, আমার মনে হয় তাদের রাজনীতি কেন, কোনও নীতিতেই থাকা উচিত নয়।’’ নাম না করে মদন এবং ফিরহাদের পরিবারের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে যে পরিবারের কথা বলা হয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে, যদি তাঁরা কেউ আঘাত পান, তা হলে সেই পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইছি। গোটা পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy