বৈশাখি গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। বেলা বাড়লেই তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাপিয়ে যাচ্ছে। আগুনে রোদ যেন শরীর থেকে জল শুষে নিচ্ছে। এ বছর গরম পড়েছে একটু আগেভাগেই। সময়ের আগেই তাপপ্রবাহে নাজেহাল দশা। ঘরে ঘরে পেটের সমস্যা, ডিহাইড্রেশন ভোগাচ্ছে। রাস্তাঘাটে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হিট স্ট্রোকের আতঙ্কে দুপুরের পর রাস্তায় বেরোনোর খুব একটা সাহস দেখাচ্ছেন না অনেকেই। এমন সময়ে হালকা সহচপাচ্য খাবার ও বেশি করে জল পান করারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা। এমন ফল বা সব্জি খেতে বলা হচ্ছে, যাতে জলের ভাগ বেশি। তাই স্বভাবতই গরমে শসার চাহিদাই প্রথমে রয়েছে। ওজন কমানো থেকে শুরু করে পেট ভাল রাখা— সবেতেই যেন মধ্যমণি হয়ে রয়েছে শসা। স্যালাড থেকে ডিটক্স পানীয়, সবেতেই তার অবাধ বিচরণ।
পেট ঠান্ডা রাখতে
পেট ঠান্ডা রাখার কথা এলেই শসার নামই বলেন পুষ্টিবিদেরা। কারণ এতে জলের ভাগ প্রায় ৯৫-৯৬ শতাংশ। লো-ক্যালোরি শসা ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর। শরীরে পুষ্টি উপাদানগুলির ঘাটতি মেটাতে এর নামই প্রথমে আসে। বিশেষ করে গরমের দিনে শরীরে জলশূন্যতার ঝুঁকি কমাতে পারে শসা। হজমেও সাহায্য করে। তবে শসার কাজ কি কেবল পেট ঠান্ডা রাখা? এর আরও অসংখ্য গুণ রয়েছে, যা অবাক করার মতোই।
হাড়ের স্বাস্থ্যে
ভেবে দেখুন, হাড় মজবুত রাখতে শসা খাওয়ার কথা ক’জনে বলেন! হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ভিটামিন ডি বা ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবারের কথাই আগে মাথায় আসে। কিন্তু শসা এমন একটি ফল যাতে প্রচুর পরিমাণে থাকে ভিটামিন কে। এই ভিটামিন ক্যালশিয়াম শোষণে বড় ভূমিকা নেয়। রোজের ডায়েটে ভিটামিন কে থাকলে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকিও কমবে।
আরও পড়ুন:
ডায়াবেটিকদের জন্য
আবার শসার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম। সে ক্ষেত্রে শসা খেলে রক্তে শর্করা একদমই বাড়বে না। তাই ডায়াবেটিকদের জন্য শসা খুবই উপকারী। শসার স্যালাড বা সন্ধ্যার জলখাবারে ভাজাভুজির বদলে শসা দিয়ে মুড়ি মাখা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকবে।

শসার বহু গুণ। ছবি: ফ্রিপিক।
ওজন কমাতে
হজমের জন্য শসা তো ভালই। এক কাপ শসাকুচিতে ১৬ ক্যালোরি থাকে। আর থাকে ফাইবার, যা মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। শসা খেলে অনেক ক্ষণ পেট ভর্তিও থাকে।
প্রদাহ কমাতে
শসার আরও একটি বড় গুণ শরীরের প্রদাহ কমানো। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর শসায় থাকে বিটা-ক্যারোটিন, ট্যানিন, পলিফেনল ও ফ্ল্যাভনয়েড, যা শরীরে যে কোনও রকম প্রদাহ কমাতে পারে।
হার্ট ভাল রাখতে
শসার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফ্ল্যাভনয়েড ও লিগন্যান হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। এর পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। শসা নিয়মিত খেলে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের সমস্যায় ভুগতে হবে না।
ত্বকের যত্নে
একটি শসা টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। সঙ্গে কুচিয়ে নিন অল্প কিছুটা ধনেপাতা। এ বার এই শসা ও ধনেপাতা একসঙ্গে মিশিয়ে ঘুরিয়ে নিন মিক্সিতে। তবে মিক্সিতে দেওয়ার সময়ে পরিমাণমতো জল দিতে ভুলবেন না। তৈরি হয়ে এলে তরলটি একটি গ্লাসে নিয়ে তাতে অল্প বিটনুন ছড়িয়ে খেতে পারেন। এই ভাবে শসা খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।