বহু বছর পর মায়ের জন্মদিনটা আমরা এই ভাবে কাটাচ্ছি। পায়েলদিদি চলে যাওয়ার পর সব যেন উল্টেপাল্টে গিয়েছিল। আমার এমন হাসিখুশি মা নিজেকে একটা গণ্ডির মধ্যে আটকে ফেলেছিলেন। যদিও দিদি না থেকেও আমাদের মধ্যে ভীষণ ভাবে উপস্থিত। জন্মদিনের আগে মায়ের ছবি ‘আড়ি’ মুক্তি পাচ্ছে, সবটাই পায়েলদিদি করিয়েছে আমার বিশ্বাস। আসলে আমরা তো খুব সাধারণ ভাবে বড় হয়েছি। পরিবারই ছিল সব।

শিশুকন্যা পায়েলকে নিয়ে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
ছোটবেলা থেকে বুঝতেই পারিনি যে আমার মা তারকা বা দাদু (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়) বিখ্যাত সুরকার। তবে মাঝেমাঝে প্রশ্ন তৈরি হত মনে। কেন সবাই আমাদের এত গুরুত্ব দিচ্ছে? আমাদের দুই বোনকেই ঘেরাটোপের মধ্যে বড় করেছেন মা। তাই বুঝতেই পারিনি আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের থেকে আমাদের পরিবার একটু আলাদা। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে বলে আমরা আলাদা কোনও সুযোগ-সুবিধা পাইনি। তবে ছোটবেলায় যতটা শাসনের মধ্যে রেখেছিলেন এখন আমরা ততটাই বন্ধু হয়ে গিয়েছি। এমনিতেই বয়স বাড়লে মা-মেয়ের সম্পর্কে এক অন্য ধরনের বন্ধুত্ব, ভরসা তৈরি হয়। দিদিকে হারানোর পর আরও বেশি করে যেন আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছি।
আরও পড়ুন:
এমন ২৬ এপ্রিলই আমি চেয়েছিলাম। যদিও জন্মদিনে বেশি জাঁকজমক পছন্দ নয় মায়ের। সাদামাঠা খাওয়াদাওয়া। রাতে হয়তো ডিনারে যাওয়া, ব্যস এটুকুই। আমি রান্না করতে পারি না। তবে পায়েলদিদি মাঝেমাঝেই রান্না করে খাওয়াত। এ বছরের জন্মদিনের অর্ধেকটা কলকাতাতেই কাটছে। পায়েসটা হবেই। আসলে মা দেখনদারিতে একদম বিশ্বাস করেন না। তাই জন্মদিন মানেই যে দামি জামাকাপড়, দামি প্রসাধনী, নামী রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া এমনটা আমাদের কাছে একেবারেই নয়।

ছোট্ট মেঘার সঙ্গে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
আমার প্রাপ্তি একটাই আমি পুরনো মা-কে খুঁজে পেয়েছি আবারও। আমার মাসতুতো দাদা মা-কে দেখে বলেছেন, ‘এই তো আমাদের পুরনো মৌসুমী আন্টি।’ পরিবারের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গিয়েছে তা সামলাতে একটু সময় তো লাগবেই। তবে মা বার বার বলেন আমি না থাকলে হয়তো আবার ঘুরে দাঁড়ানোর জোরটা পেতেন না। আবার ফ্লোরে ফিরতে পারতেন না। দিদি থাকলে কখনও মাকে বাড়িতে বসে থাকতেই দিত না। ও তো বার বার বলত বাইরে যেতে, কাজ করতে। তাই এই ছবির চিত্রনাট্য যখন আসে তখন আমিই জোর করে মাকে রাজি করাই। জন্মদিনে এটাই আমার তরফ থেকে মা-কে উপহার। এমন হাসিখুশি, প্রাণোচ্ছল, শিশুসুলভ মা-কে আমি আর হারাতে চাই না।