হাজিরা। মঙ্গলবার লালবাজারে ইকবাল আহমেদ। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
নারদ স্টিং অপারেশনে তিনি আদৌ টাকা নিয়েছিলেন কি না, সেটা বলবে তদন্তই। তবে নারদ-কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল যে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন, পুলিশি জেরার মুখে মঙ্গলবার সেটা মেনে নিয়েছেন ইকবাল আহমেদ। শাসক দলের বিধায়ক এবং কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র ইকবাল জানান, ‘টাইগার’ নামে এক ব্যক্তির হাত ধরেই ম্যাথু যান তাঁর কাছে।
এবং এই সূত্রেই নারদ মামলায় উঠে এসেছে নতুন নাম। তাজদার মির্জা ওরফে টাইগার। কোনও তাবড় নেতা নন তিনি। কিন্তু নারদ হুল অভিযানের পুলিশি তদন্তে জেরার মুখে পড়া আইপিএস অফিসার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা এবং বিধায়ক ইকবাল, দু’জনই নাম করেছেন ওই টাইগারের। পুলিশকর্তা মির্জা এবং পুরকর্তা ইকবাল দু’জনেই পুলিশকে বলেছেন, ম্যাথুর সঙ্গে টাইগারই তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
কে এই টাইগার?
পুলিশি সূত্র বলছে, রিপন স্ট্রিটের বাসিন্দা টাইগার পেশায় শিক্ষক। ব্যবসাও করেন। এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের পরে প্রশ্ন করা হলে ইকবাল অবশ্য জানান, ওই ব্যক্তি শিক্ষক না ব্যবসায়ী, নাকি দু’টোই— তা তিনি জানেন না। ডেপুটি মেয়র শুধু বলেন, ‘‘আমার যা বলার, পুলিশকে সবই বলে এসেছি। আমার কাছে ম্যাথুকে কে নিয়ে এসেছিল, তা-ও বলে এসেছি।’’ টাইগার সম্পর্কে সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নেরই জবাব দিতে চাননি তিনি।
লালবাজারের খবর, ইকবালের আগে পুলিশকর্তা মির্জাও জেরার মুখে টাইগারের নাম করেছেন। ম্যাথু কলকাতায় যে-হোটেলে উঠেছিলেন, সেখানে আসলাম নামে এক ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। সেই আসলামের মাধ্যমেই টাইগারের সঙ্গে পরিচয় হয় ম্যাথুর। পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, শুধু ইকবালের কাছে নয়, মির্জার কাছেও ম্যাথুকে নিয়ে যান টাইগারই। তিনি আইপিএস অফিসার মির্জার দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলেও কখনও কখনও নিজের পরিচয় দিয়েছেন টাইগার। তবে মির্জা পুলিশের প্রশ্নের জবাবে জানিয়ে দেন, টাইগারের এই দাবি মোটেই ঠিক নয়।
কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে ম্যাথু বলেছিলেন, তিনি শাসক দলের অন্য নেতাদের চিনতেন না। ইকবালই শাসক দলের অন্যান্য নেতানেত্রীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সঙ্গে তিনি ‘টাইগার’ নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছিলেন। তদন্তকারীদের অনুমান, ম্যাথুর সেই ‘টাইগার’ই রিপন স্ট্রিটের এই টাইগার ওরফে তাজদার মির্জা। যিনি তাঁকে ইকবালের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ম্যাথুকে ইতিমধ্যে দু’-দু’বার তলব করেছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু হুল অভিযানের বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারাধীন বলে তিনি লালবাজারে হাজিরা দিতে চাননি।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে নারদ স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। ওই ভিডিও দেখিয়েছে, অনেক নেতানেত্রী দেদার টাকা নিচ্ছেন। সেই ফুটেজের সত্যতা আনন্দবাজারের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ওই ফুটেজে দেখা গিয়েছে কলকাতার মেয়র, বিধায়ক (এখন মন্ত্রী) শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মেয়র-পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায় পরে নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ।
প্রথমে আইপিএস অফিসার মির্জাকে লালবাজারে ডেকে তাঁর বয়ান রেকর্ড করেন তদন্তকারীরা। মির্জাকে জেরা করেই প্রথমে টাইগারের নাম উঠে আসে। টাইগারের মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখা যায়, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ আছে বিধায়ক ইকবালেরও। এ দিন ইকবালকে লালবাজারে ডেকে পাঠিয়ে জেরা করে পুলিশ। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর বয়ান রেকর্ড করেন তদন্তকারীরা। নারদ-তদন্তে ইকবালের মতো ওজনদার নেতাকে এই প্রথম জেরা করা হল। তাঁর কাছে কী কী তথ্য মিলল, বিশদ ভাবে তা জানাতে চায়নি পুলিশ। ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা-প্রধান বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘ইকবাল আহমেদের বয়ান রেকর্ড করেছি। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy