আগামী আর্থিক বছরের (২০২৫-২৬) রাজ্য বাজেটে ধারের বোঝা থেকে সম্পদ তৈরি, বেকারত্বের স্থায়ী সমাধান থেকে কর্মসংস্থান—বাজেট বিতর্কে সব ক্ষেত্রেই বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার জবাবি ভাষণে কেন্দ্রের বঞ্চনাকেই পাল্টা হাতিয়ার করলেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এ দিন প্রায় ২.৯৬ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পাশ হয় বিধানসভায়।
বুধবারই ধারের বহর এবং রাজ্যের অনুদান প্রকল্পগুলিতে দারিদ্র দূরীকরণের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি বিধায়ক তথা অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অশোক লাহিড়ী। এ দিন চন্দ্রিমার মন্তব্য, “বঞ্চনার যন্ত্রণা সঙ্গে নিয়েই মানুষের জীবনের পথ সুগম করার চেষ্টা রয়েছে বাজেটে।” তাঁর সংযোজন, “মহারাষ্ট্র প্রায় ৮.১২ লক্ষ কোটি, তেলঙ্গানা ৯.৭৫ লক্ষ কোটি, উত্তরপ্রদেশ ৮.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা ধার করেছে। সে জায়গায় আমরা ৭.৭১ লক্ষ কোটি টাকা ধারের অনুমান রেখেছি বাজেটে। ধার সবাইকে করতে হয়। আমরা ধার করার আইন (এফআরবিএম) ভাঙিনি। অশোকবাবু অনেক বলেছিলেন, তিনিই আজ আসেননি।” এই সূত্রেই তাঁর দাবি, অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদনের নিরিখে ধারে হার পরিবর্তন নিয়ে যে চারটি রাজ্য সবচেয়ে ভাল কাজ করেছে গোটা দেশে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম (বাকিগুলি গুজরাত, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র)।
এই সূত্রেই কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ করে চন্দ্রিমার দাবি, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে প্রায় ৩৫৮১ কোটি, স্বাস্থ্য-শিক্ষায় ৪৪৭ কোটি, আয়ুষে ৮০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। শুধু একশো দিনের কাজে ৬৯১৯ কোটি, আবাসে (গ্রামীণ) ৮১৪১ কোটি, জল জীবন মিশনে ২৫২৫ কোটি, আবাসে (শহর) ১৪৬ কোটি টাকা পায়নি রাজ্য। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক নিজেরাই বলেছিল, পশ্চিমবঙ্গ সব পদক্ষেপ করেছে। টাকা দেওয়া যায়। তার পরেও তা দেয়নি কেন্দ্র। অন্য অনেক রাজ্যে তুলনায় অনেক বেশি ভুয়ো জবকার্ড থাকার পরেও তাদের বরাদ্দ বন্ধ হয়নি। এ রাজ্যে এই সংখ্যা অনেক কম অথচ পদক্ষেপ করা হয়েছে। যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর
তথ্য দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন!”
এ দিনই আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী অভিযোগ করেছিলেন, নতুন চাকরির দিশা নেই বাজেটে। লক্ষ্মীর ভান্ডার দিলেও উন্নয়ন হচ্ছে না। আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু উন্নয়নে বরাদ্দ খরচ করতে পারেনি রাজ্য।” বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের কটাক্ষ, “নেতাদের একাংশের এত আয় বাড়ছে অথচ রাজ্যের আয় কেন বাড়ছে না?”
যদিও রাজ্যের দাবি, ৯৪টি সামাজিক প্রকল্পের কারণে সার্বিক ভাবে উপকৃত হয়েছেন মানুষ। চন্দ্রিমার দাবি, ছত্তীসগঢ়ে ৮.৬%, হিমাচলপ্রদেশে ১০.৪%, ওড়িশায় ৮.৭%, রাজস্থানে ৯.৭%, উত্তরপ্রদেশে ৭.২% শহুরে বেকারের হার ধরা পড়েছে শেষ ত্রৈমাসিকে। সেখানে এ রাজ্যের হার ৫.৭%, জাতীয় গড় যদিও ৬.৪%। ২০২৪-২৫ বছরে দেশে
বেকারত্বের হার ছিল ৭.৯৩%, সেখানে এ রাজ্যের তা ৪.১৪%। সামাজিক খরচ বেড়েছে ১৪.৪৬%। মূলধনী খরচ ২৯ হাজার কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার
কোটি টাকা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)