Advertisement
E-Paper

পয়লা বৈশাখ সকালে সাড়ম্বর শোভাযাত্রা, বিজেপি ‘বাঙালি’ হতে পারল? শাসক তৃণমূলের বক্তব্য, ভক্তি নয়, এ সব ভড়ং

বাংলা নতুন বছরকে এর আগেও বিজেপির সাংস্কৃতিক সেল বরণ করেছে। কিন্তু এ ভাবে রাস্তায় নেমে শোভাযাত্রা করা এবং সেখানে প্রায় গোটা রাজ্য নেতৃত্বকে হাজির করে দেওয়া স্মরণকালের মধ্যে এই প্রথম।

Bengal BJP leadership marches on Kolkata streets to welcome Bengali New Year, Fake love for Bengali culture, Attacks TMC

বাংলা নববর্ষ বরণ করতে বিজেপির প্রায় গোটা রাজ্য নেতৃত্ব শোভাযাত্রায় পা মেলাচ্ছেন, এ দৃশ্য স্মরণকালে দেখা যায়নি। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৫৮
Share
Save

তাদের সম্পর্কে বলা হয়, ‘রেখেছো বিজেপি করে বাঙালি করোনি!’ সেই ‘দুর্নাম’ ঘোচাতে বিধানসভা ভোটের আগের বছরে বিজেপি যে বাংলা নববর্ষকে ‘হাতিয়ার’ করবে, তা প্রত্যাশিত। মঙ্গলবার, পয়লা বৈশাখের সকালে রাজ্য বিজেপির প্রথমসারির নেতৃত্ব মিছিলই করে ফেললেন কলকাতায়। সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া প্রথমসারির নেতাদের প্রায় সকলেই মিছিলে হেঁটেছেন। যা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেছে বলে বিজেপির লোকজনও মনে করতে পারছেন না।

রাজ্য বিজেপির সাংস্কৃতিক সেলের তরফে বঙ্গাব্দ বরণের ওই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। বাংলা নতুন বছরকে এর আগেও বিজেপির সাংস্কৃতিক সেল বরণ করেছে। কিন্তু সে সব অনুষ্ঠান হত কোনও প্রেক্ষাগৃহে। রাস্তায় নেমে শোভাযাত্রা করা এবং সেখানে প্রায় গোটা রাজ্য নেতৃত্বকে হাজির করে দেওয়া সাম্প্রতিক কালে প্রথম! বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ‘বাঙালি’ হতে চেয়েই বিজেপির এই আয়োজন।

বিজেপির বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচিতে খাওয়া-দাওয়া এখনও নিরামিষ। উত্তর বা পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও তাই। মাছ-ভাতের বাংলাতেও কেন কোনও রাজনৈতিক দলকে কঠোর ভাবে নিরামিষাশী হতে হবে, সে প্রশ্ন অনেক বার উঠেছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সম্ভবত সেই কারণেই বিজেপি নেতৃত্ব সংবাদমাধ্যমের জন্য আমিষ পদের ব্যবস্থা করা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে শুভেন্দু অধিকারীর সাংবাদিক সম্মেলনে সেই ব্যবস্থাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বৈঠক বা সম্মেলনে দলের নেতাকর্মীদের কাছে আমিষ এখনও বর্জনীয়। খাদ্যাভ্যাসের মতোই সাংগঠনিক পরিভাষাতেও বিজেপি বাংলার অন্যান্য দলের চেয়ে আলাদা। তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেসে যাঁরা ‘কর্মী’, বিজেপিতে তাঁরা ‘কার্যকর্তা’। অন্য দল যে পদাধিকারীকে ‘সম্পাদক’ বা ‘সাধারণ সম্পাদক’ নামে ডাকে, বিজেপিতে তা ‘মন্ত্রী’ বা ‘মহামন্ত্রী’।

যত দিন বিজেপি বাংলায় ছোট দল ছিল, তত দিন তাদের এই সাংগঠনিক খুঁটিনাটির খবর খুব বেশি প্রকাশ্যে আসত না। কিন্তু ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে তুলনায় ভাল ফলাফলের সুবাদে বিজেপি আতশকাচের তলায় পড়েছে। বিতর্কও বেড়েছে। প্রত্যেক বড় নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে ‘অবাঙালি’ নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। তাঁদের হিন্দি ভাষণ বিজেপির ‘অবাঙালি’ ভাবমূর্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ওই ভাবমূর্তিই তৃণমূলের অন্যতম ‘হাতিয়ার’ ছিল। ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান তুলে গোটা রাজ্যে বিজেপিকে পিছিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী বিধানসভা ভোটেও যে তৃণমূল বিজেপি সম্পর্কে ‘বাংলার বিরোধী’ ভাষ্য আরও বাড়িয়ে তুলবে, তা তাদের ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারের সুর থেকেই স্পষ্ট ছিল। এ বার বাংলা নববর্ষের সকালে বিজেপি ‘বেনজির শোভাযাত্রা’ যে সেই অনুমানেই, তাতে কারওরই বিশেষ সন্দেহ নেই।

রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার থেকে বিবেকানন্দ রোডে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটে পর্যন্ত পদযাত্রায় ছিলেন দুই প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাহুল সিংহ। ছিলেন অমিতাভ চক্রবর্তী, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য, মধুছন্দা কর, ইন্দ্রনীল খাঁ, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ, প্রাক্তন বিধায়ক তাপস রায়, বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর ও প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা বিধায়ক অশোক দিন্দা। বিজেপির তিন কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত, সজল ঘোষ এবং বিজয় ওঝাও ছিলেন। মিছিলে ট্যাবলোও ছিল। যাতে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ আন্দোলন, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ আন্দোলন এবং শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তুলে ধরা হয়েছিল তাতে।

তৃণমূল অবশ্য শোভাযাত্রাকে ‘ভড়ং’ বলে অভিহিত করেছে। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের কথায়, ‘‘বিজেপির ভড়ং আছে, ভক্তি নেই। মানুষের জন্য শুভেচ্ছা নেই, জ্ঞান দেওয়ার প্রবণতা আছে।’’ ভোটকে সামনে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নিজেদের গা থেকে ‘অবাঙালি’ তকমা মুছতে চাইছে বলেও তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য। বিজেপির সাংস্কৃতিক শাখার প্রধান রুদ্রনীল অবশ্য বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে মোটামুটি ঢিলছোড়া দূরত্বে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। অর্থাৎ, তৃণমূলনেত্রীর ভবানীপুরের মাটি থেকেই জনসঙ্ঘের ভাবনার উৎপত্তি। যে জনসঙ্ঘ পরে বিজেপি হয়েছে।’’ রুদ্রনীলের আরও বক্তব্য, ‘‘বিজেপিকে অবাঙালিদের দল বলা যে প্রলাপ, সে কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও বিলক্ষণ জানেন। তাই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে প্রতি বছরই তিনি শ্রদ্ধা জানান।’’

BJP Bengali New Year Celebration West Bengal Politics TMC Kolkata Rally

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।