হুমায়ুন কবীর। —ফাইল চিত্র।
ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে কি শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে চলেছে তৃণমূল পরিষদীয় দল? চলতি বাদল অধিবেশনে দলীয় বিধায়ক হিসেবে তৃণমূল পরিষদীয় নেতৃত্ব হুমায়ুনকে নিয়ে খোঁজখবর শুরু করার পরেই এমন জল্পনা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিধানসভার অন্দরে নিজের বক্তৃতায় নাম না করলেও পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে হুমায়ুনের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তিনি বলেছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগরে আমাদের দলের এক জন আছেন, যিনি মাঝেমধ্যেই হুঙ্কার দেন। গুন্ডামি করেন। আমাদের দলে থাকলেও কিন্তু তাঁর কাজকর্মকে সমর্থন করি না।’’ তার পরেই হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে বিধানসভায় শাসকদলের অন্দরে। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন মন্তব্যের আগেই গত মঙ্গলবার বিধায়ক হুমায়ুন বিধানসভার কোন কোন পদে রয়েছেন, সেই বিষয়ে জানতে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ফোন করেছিলেন বিধানসভায় দলের উপ মুখ্যসচেতক তথা বর্ষীয়ান বিধায়ক তাপস রায়কে।
বর্তমানে বিধানসভার দুটি স্থায়ী (স্ট্যান্ডিং) কমিটিতে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের হুমায়ুন। ‘পেপার লেড স্ট্যান্ডিং কমিটি’-র চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বিদ্যুৎ দফতরের স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন। সে কথা দলের রাজ্য সভাপতিকে জানিয়েও দিয়েছেন তাপস। প্রথমে বক্সীর খোঁজ নেওয়া এবং তার পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য— দু’টি ঘটনার সাপেক্ষে তৃণমূল পরিষদীয় দলের একাংশ মনে করছে, বিধায়ক হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। আগামী ১১ অগস্ট বিধানসভার বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা। তার পরেই হুমায়ুনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারে তৃণমূল পরিষদীয় দল। দলের অন্দরে তাঁকে নিয়ে ‘তৎপরতা’ এবং সম্ভাব্য পদক্ষেপের প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক শনিবার বলেন, ‘‘দলের প্রতীকে বিধায়ক হয়েছি। আর বিধায়ক হয়েছি বলেই বিধানসভার কমিটিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দল যদি কোনও ব্যবস্থা নিতে চায় তা হলে নিতেই পারে। কমিটির দায়িত্ব থেকেও সরাতে পারে। অন্য যে কোনও ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই পারে।’’ সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একাধিক প্রশ্ন তুলেছিলেন হুমায়ুন। এমনকি, জেলা তৃণমূল সভাপতি শাওনি সিংহরায়ের অফিস ঘেরাও করার ডাক দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঘোষণা করেও নিজের ওই কর্মসূচি বাতিল করেন হুমায়ুন। তবে পঞ্চায়েত ভোটে ‘সন্ত্রাস’ ইত্যাদি নিয়ে নিজের ক্ষোভের কথা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন হুমায়ুন। যা নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
তাঁর কাছ থেকে তাঁর ক্ষোভের বিষয়ে কি শীর্ষ নেতৃত্ব জানতে চেয়েছিলেন? হুমায়ুন বলছেন, ‘‘আমার ক্ষোভের কথা শীর্ষ নেতৃত্ব আমার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন। আমি আমার অসুবিধার কথা তাঁদের জানিয়েওছিলাম। কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি।’’ ঘটনাচক্রে, জোড়া হুমায়ুন কবীর নিয়ে দিন দিন ‘অস্বস্তি’ বাড়ছে তৃণমূলে। দু’জনেই পঞ্চায়েত ভোটের সময় দলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন পুলিশকর্তা এবং বিধায়ক হুমায়ুন ভোটে তাঁরই দলের ‘সন্ত্রাস’-এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। শুক্রবার বিধানসভার বাদল অধিবেশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের জন্য লক্ষীর ভান্ডার সংক্রান্ত প্রশ্ন তুলেও অস্বস্তি তৈরি করেছিলেন শাসকদলের অন্দরে। শেষমেষ ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বার থেকে বিধানসভায় যে কোনও ধরনের প্রশ্ন করার আগে তা দেখিয়ে নিতে হবে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুনের ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতৃত্বের নিদান আপাতত ঘোষণার অপেক্ষায় বলেই মনে করছেন দলীয় বিধায়কদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy