দল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পর থেকেই সম্পর্কে অবনতি। মসৃণ হয়নি ‘ঘর ওয়াপসির’ পরেও। গত চার বছর ধরে সম্পর্ক ‘শীতল’ই থেকে যায় দু’জনের মধ্যে। সেই আবহে আচমকাই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে হাজির রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ভাই’কে বাড়িতে দেখে জড়িয়ে ধরলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণও। বললেন, ‘‘একটা কষ্ট ছিল। তুমি তৃণমূল ছেড়ে কেন চলে গিয়েছিলে?’’ পরেও কল্যাণ বলেন, ‘‘রাজীব আজ এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। বলল, দাদা ভুলটুল হয়েছে। ক্ষমাটমা করো।’’
কল্যাণের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর উচ্ছ্বসিত রাজীবও। তিনিও বলেন, ‘‘আমি দল পরিবর্তন করেছিলাম। দাদার অভিমান হয়েছিল। দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তার পর থেকেই। শ্রীরামপুরে এসেছি। তাই দাদার সঙ্গে দেখা করলাম। দাদা-ভাইয়ের সম্পর্কে ভালবাসা থাকবে। রাগও থাকবে। অভিমানও থাকবে।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে ‘বেসুরো’ হয়ে গিয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক রাজীব। দিল্লিতে গিয়ে যোগও দিয়েছিলেন বিজেপিতে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় কলকাতায় চার্টার্ড বিমান পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই সময় রাজীবের সঙ্গে একাধিক তৃণমূল নেতাও যোগ দিয়েছিলেন পদ্মশিবিরে। হাওড়ার ডোমজুড়ে বিজেপির টিকিটে ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন রাজীব। যদিও হেরে যান। এর পর আর বেশি দিন বিজেপিতে থাকতে পারেননি তিনি। মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন ঘটে তাঁর।
দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে রাজীবের ‘ঘর ওয়াপসি’ হলেও সেই প্রত্যাবর্তন মেনে নিতে পারেননি কল্যাণ। লাগাতার রাজীবকে আক্রমণ করেছেন। নাম না করে প্রকাশ্যে তাঁকে ‘গদ্দার’ বলেও কটাক্ষ করেছেন। কল্যাণের শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে ডোমজুড়। রাজীব ডোমজুড়েরই বিধায়ক ছিলেন। তৃণমূলে ফিরে আসার পর রাজীবের বিরুদ্ধে ডোমজুড়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। সেই সময় বিক্ষোভকারী কর্মী-সমর্থকদের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন কল্যাণ। অবশেষে দু’জনের সম্পর্কে বরফ গলল।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে ভোটার তালিকা যাচাই নিয়ে দলকে কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা। সেই কাজের জন্য কোর কমিটিও তৈরি হয়েছে। সেই কমিটিতে কল্যাণ এবং রাজীব দু’জনেই রয়েছেন। তার পরেই এই সাক্ষাৎ দু’জনের।
রবিবার শ্রীরামপুরে গঙ্গাদর্শনে গিয়ে কল্যাণের বাড়িতে যান রাজীব। সেখানে বেশ কিছু ক্ষণ দু’জনের কথা হয়। সাংসদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাজীব বলেন, ‘‘দাদা জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করল। খুব ভাল লাগল। আমরা একই দল করি। আশা করি, আগামী দিনে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক অটুট থাকবে। কোর কমিটির কাজও ভালই হচ্ছে।’’
কল্যাণও বলেন, ‘‘দিদি ওকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছে। ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন। সকলকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। আমার সঙ্গে ওর ব্যক্তিগত কোনও সমস্যা ছিল না। শুধু একটা অভিমান ছিল। দল তো ওর প্রতি কোনও অবিচার করেনি। অনেক কিছুই পেয়েছে। তার পরেও কেন চলে গিয়েছিল? এটাই অভিমানের কারণ। দিদি ওদের গ্রহণ করেছেন। আমি কেন কিছু বলতে যাব?’’