—প্রতীকী চিত্র।
এখন তিনি বিদেশে। তবে শুক্রবার রাজ্য রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনার এক দিকে অভিষেকের বিদেশযাত্রা নিয়ে আদালতে ওঠা মামলা। অন্য দিকে, নিয়োগ মামলায় ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বিরুদ্ধে ইডির চার্জশিটে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নামোল্লেখ। প্রথম ক্ষেত্রে ‘স্বস্তি’ মিলেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ঘটনা খানিকটা অস্বস্তির বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, ইতিপূর্বে অভিষেককে ‘আমার মালিক’ বলে একাধিক বার দাবি করেছেন ‘কালীঘাটের কাকু’। কিন্তু তখন তিনি গ্রেফতারও হননি এবং নিয়োগ মামলা সংক্রান্ত কোনও চার্জশিট বা নথিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নামও উঠে আসেনি।
অন্য দিকে, গত সোমবার অভিষেকের বিদেশযাত্রা সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে আটকানো উচিত হবে না বলে ইডিকে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে কেন, তা ইডির কাছে জানতে চায় শীর্ষ আদালত। রুজিরার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি হয়েছিল কেন, তা-ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির কাছে জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার ইডিকে এই বিষয়ে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরার বিরুদ্ধে জারি হওয়া লুক আউট নোটিস তুলে নিতে ইডিকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
যেখান থেকে এই মামলা
নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেকের নাম জড়ায়। এ ছাড়া কয়লা পাচার সংক্রান্ত মামলাতেও নাম রয়েছে অভিষেকের। সোমবার যেমন বিদেশযাত্রার জন্য হাই কোর্টের অনুমতি চেয়ে হলফনামা জমা দেন অভিষেক, তেমনই সোমবার কয়লা পাচার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নজরেও বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন তৃণমূলের ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। অন্য দিকে, অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা যায়, ইডির একটি মামলায় লুক আউট নোটিস জারি হয়েছে রুজিরার নামে। তাই তাঁর বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে বলে দাবি করে তারা।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে দুবাই যাত্রা করেন অভিষেক। সেখান থেকে তাঁর গন্তব্য আমেরিকা। চিকিৎসা করাতে সেখানে যাচ্ছেন বলে আদালতকে তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে অভিষেক কি ইডির অনুমতি নিয়ে বিদেশে গিয়েছেন? তাঁর বিরুদ্ধে কি কোনও লুকআউট নোটিস তদন্তকারীরা জারি করেছেন? এর আগে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর আত্মীয়দের বিমানবন্দরে আটকানোর ঘটনা ঘটেছে। অভিষেকের জন্য তদন্তকারীদের এ রকম কোনও বিধিনিষেধ আছে কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে। এই প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কিসান কউল শুক্রবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে থাকা লুকআউট সার্কুলার প্রত্যাহারের কথা বলেন।
যা বলল সুপ্রিম কোর্ট
শুক্রবার অভিষেকের আইনজীবী কপিল সিব্বল সওয়াল করেন, তদন্তকারী সংস্থা আদালতে জানিয়ে দিক তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনও লুকআউট সার্কুলার আছে কি না। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ইডির আইনজীবী এসভি রাজু জানান, ২৬ জুলাই থেকে ২০ অগস্ট চিকিৎসার জন্য অবধি বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন অভিষেক। অর্থাৎ, ইডিকে জানিয়েই তৃণমূল নেতা বিদেশে গিয়েছেন। কিন্তু বিচারপতি কউল পরিষ্কার ভাবে জানতে চান যে, লুক আউট সার্কুলার আছে কি না। কারণ, কেউ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পাবে, আবার তাঁকেই কোনও বিমানবন্দরে আটকানো হবে, এটা ঠিক নয়। এর আগে অভিষেকপত্নী রুজিরা কিংবা তাঁর আত্মীয়ের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে। বিচারপতির এই প্রশ্নে ইডি জানিয়েছে, বিদেশ যেতে হলে সাত দিন আগে আবেদন করতে হয়। তা খতিয়ে দেখে অনুমতি দেওয়া হয়। তাতে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, আবেদন করেই যদি যেতে হয়, তা হলে লুকআউট সার্কুলারের ভূমিকা কী? তাই লুকআউট সার্কুলারের প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
কাকু-মামলা এবং অভিষেক
শুক্রবারই কলকাতার নগর দায়রা আদালতে নিয়োগ মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। ১২৬ পৃষ্ঠার মূল চার্জশিটের ৭৫ নম্বর পাতায় বলা হয়েছে, তৎকালীন তৃণমূল যুবর সভাপতি অভিষেকের আর্থিক বিষয় দেখভাল করতেন সুজয়কৃষ্ণ। চার্জশিটের ওই অংশে এ-ও বলা হয়েছে, অভিষেকের বার্তা নিয়ে মানিক ভট্টাচার্যের (প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি এবং তৃণমূল বিধায়ক) দফতরে যেতেন সুজয়কৃষ্ণ। মোট ৩২৫ জন চাকরিপ্রার্থীকে ২০১৪ সালের টেটে উত্তীর্ণ করতে তাঁদের যাবতীয় তথ্য মানিককে সুজয়কৃষ্ণই পাঠিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে ইডির চার্জশিটে।
চার্জশিটের ৭৫ নম্বর পাতার সাত নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, মানিকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ। নির্দিষ্ট একটি ফোন নম্বর থেকে ২০১২ এবং ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড মানিককে পাঠাতেন তিনি। সুজয়কৃষ্ণকে ‘প্রভাবশালী’ দাবি করে চার্জশিটে বলা এ-ও বলা হয়েছে, কোনও রাজনৈতিক পদে না থাকলেও, রাজ্যের শিক্ষা দফতর কিংবা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও মানিকের দফতরে অবাধ যাতায়াত ছিল তাঁর। এই প্রভাবের কারণেই বহু চাকরিপ্রার্থী তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড-সহ অন্যান্য নথি তাঁকে পাঠাতেন। ইডি চার্জশিটে এ-ও উল্লেখ করেছে, চাকরিপ্রার্থীদের বাছাই করা এবং নিয়োগ করার বিষয়ে কথা বলতে বার বার মানিকের দফতরে যেতেন সুজয়কৃষ্ণ।
অস্বস্তিতে অভিষেক?
ইডির অ্যাসিন্ট্যান্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারের সই-করা চার্জশিটের তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নামের উল্লেখ কি শাসকদল তথা অভিষেকের জন্য অস্বস্তির? ইডি সূত্রে খবর, ওই নথির ভিত্তিতে অভিষেক সম্পর্কে যে কোনও পদক্ষেপ করা হবে, তা নয়। পুরো বিষয়টিই এখনও তদন্তসাপেক্ষ।
নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় কুন্তল ঘোষ নাকি আশ্বাস দিয়ে বলতেন যে, ‘‘কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’
তবে সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে চার্জশিটে কোথাও অভিযুক্ত বা সাক্ষী হিসাবে অভিষেকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে অভিষেকের যে যোগাযোগ বা সম্পর্ক ছিল, সেটা বোঝাতেই তদন্তকারীরা এই নামোল্লেখ করেছেন। বস্তুত, অভিষেকের সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’র কথা নিজের মুখে বার বার দাবি করেছেন ‘কালীঘাটের কাকু’। এক সময় তাঁকে এ-ও বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমার সাহেব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি ওঁর অফিসে চাকরি করি। আমার সাহেবকে ছোঁয়ার ক্ষমতা কারও নেই।’’
ইডি সূত্রে খবর, গোপাল দলপতি এবং তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ-ও জানা যায়, কুন্তলের ‘কালীঘাটের কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী নেতার যে ব্যক্তিগত সংস্থা রয়েছে, সেখানকার চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘আতশকাচের তলায়’ আসেন সুজয়কৃষ্ণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy