ব্যারাকপুর আদালতে তৃণমূল নেতা নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। মঙ্গলবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
পুলিশ হেফাজত থেকে জেল হাজতে চলে গেলেন অস্ত্র আইনে ধৃত তৃণমূল নেতা নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। কলকাতা বিমানবন্দরে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ধরা পড়ার পরে ৪৮ ঘণ্টা কাটলেও, তাঁর ব্যাগে ওই অস্ত্রটি কী ভাবে এল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল না। বিভিন্ন সূত্র নানা সম্ভাবনার কথা বলছে, যার বেশিটাই রাজনৈতিক। পুলিশ সূত্রও দাবি করেছে, জেরায় তাদের কাছে নরেনবাবু হতাশ ভাবে বলেছেন, ‘‘আমার বিধায়ক হওয়ার স্বপ্নের এখানেই ইতি।’’
রবিবার কলকাতা বিমানবন্দরে ব্যাগে পাইপগান ও তিনটি গুলি-সহ ধরা পড়েন বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা পাণ্ডবেশ্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি নরেনবাবু। সোমবার আদালত তাঁকে এক দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। মঙ্গলবার ফের ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে সরকার পক্ষ তাঁকে আর পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর আর্জি জানায়নি। পুলিশ সূত্রের দাবি, জেরা পর্ব মিটে যাওয়ায় তারা ধৃতকে হেফাজতে চায়নি। নরেনবাবুর আইনজীবীরা এ দিনও জামিনের আবেদন করেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী পল্লব চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘ধৃত প্রভাবশালী। জামিন পেলে তদন্তে প্রভাব খাটাতে পারেন।’’ বিচারক ধৃতকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার নরেনবাবুকে উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটির কয়েকটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। দেশি পাইপগান কেনাবেচা ও তৈরির জন্য বিরাটির আশপাশের কয়েকটি অঞ্চলের নাম শিরোনামে এসেছে। তবে নেতার ব্যাগে পাইপগান কোথা থেকে এল, তার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
ব্যাগে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রটি বের করে নিতে তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, না কি বাড়ি থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছনোর মাঝে কেউ সেটি তাঁর ব্যাগে রেখে দিয়েছিল, সে ব্যাপারে কোনও তথ্য এ দিন আদালতে পেশ করতে পারেননি তদন্তকারী অফিসারেরা। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জেরায় দু’জনের নাম করে তাঁকে ফাঁসানোর অভিযোগ করেছেন ধৃত। এই সূত্রেই ছড়িয়েছে ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক ‘ষড়যন্ত্রের’ তত্ত্ব।
বিধানসভা ভোটে পাণ্ডবেশ্বর থেকে টিকিট পাওয়ার আশায় ছিলেন নরেনবাবু। কর্মাধ্যক্ষের অনুগামীদের দাবি, প্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে নরেনবাবুকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দলে তাদের বিরোধী শিবির ‘ছক’ কষে থাকতে পারে। নরেনবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা অবশ্য অভিযোগ মানেননি। উল্টে দাবি করেছেন, এলাকায় দাপট বজায় রাখার জন্য নরেনবাবু আগ্নেয়াস্ত্র রাখেন। পাণ্ডবেশ্বর থেকে গাড়িতে চড়ে আসার সময়ে কলকাতা ঢোকার খানিক আগে তিনি গাড়ি থেকে নেমেছিলেন। সে সময় অস্ত্রটি বার করে ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর হাতে দিয়ে সেটি ‘ভিতরে’ রাখতে বলেছিলেন। রক্ষী পাইপগানটি গাড়ির ভিতরে রাখার বদলে ব্যাগের ভিতরে রেখে দেন। গাড়িতে চড়ে বন্দুকের কথা ভুলে যাওয়ায় কার্যত পচা শামুকে পা কেটেছে নরেনবাবুর।
তৃণমূল অন্দরের খবর, পাণ্ডবেশ্বর এলাকায় কয়লার ব্যবসা, তোলাবাজির বখরা নিয়ে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। সেই দ্বন্দ্বে নরেনের এক কালের এক অনুগামী সম্প্রতি ভিড়েছেন বিরোধী শিবিরে। নরেনের অনুমান ছিল, ওই ‘বিভীষণের’ কিছু সাঙ্গোপাঙ্গোকে তিনি বশে রাখতে পেরেছেন। নিজের বাড়িতে, এলাকায় দলীয় অফিসে সেই সব লোকজনকে অবাধে ঘোরাফেরা করতে দিতেন তিনি। সেই ভরসাই তাঁর কাল হয়েছে।
নরেনবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ নস্যাৎ করে দিলেও তাঁর স্ত্রী অনুভা চক্রবর্তী কিন্তু এ দিনও বলেছেন, ‘‘ব্যাগ গোছানোর পরে বাড়িতে এবং কলকাতার পথে শক্তিগড়ে দলের অনেকে ওঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তখনই কেউ অস্ত্র গুঁজে দিয়ে থাকতে পারেন বলে আমাদের আশঙ্কা।’’ তৃণমূলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস অবশ্য গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy