এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
স্বামী-স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সংসার। ছেলেটির বয়স আট। মেয়েটি পাঁচ। রবিবার বিকেল থেকে মেয়ে বায়না করছিল, রাতে মাংস-ভাত খাবে। তাই থলে নিয়ে সন্ধ্যায় বাজারে গিয়েছিলেন বাবা। গিন্নিকে বলে গিয়েছিলেন, ‘‘মাংস নিয়ে আসছি।’’ কিন্তু বাড়ি ফিরে ছোট্ট মেয়েটাকে যখন প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে কম্বল এবং কাঠের স্তূপ সরিয়ে উদ্ধার করা হল, তখন যুবক হতভম্ব। কিছু ক্ষণ অদ্ভুত ভাবে চুপ করে গিয়েছিলেন। স্ত্রীর কান্নাকাটির মধ্যে হঠাৎ যেন সম্বিত ফিরল তাঁর। বুক চাপড়াতে চাপড়াতে অস্ফুটে বললেন, ‘‘এক ঘণ্টা আগেও তো মেয়েটাকে দেখে গেলাম।’’ পর ক্ষণেই চিৎকার করে বলছেন, ‘‘আমার মেয়ের এমন করল যে, তার যেন মৃত্যুদণ্ড হয়...।’’ আবার দু’হাত দিয়ে চোখ-মুখ ঢেকে বললেন, ‘‘আমার হাতে তুলে দেওয়া হোক ওকে (অভিযুক্তকে)। আমি দেখে নিই...।’’
সোমবার সকাল থেকে হুগলির গুড়াপে টালির চাল দেওয়া বাড়ি লোকে লোকারণ্য। শাসক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা আসছেন। তবে তাঁদের সান্ত্বনা কানে যাচ্ছে না ধর্ষিত এবং খুন হওয়া পাঁচ বছরের শিশুর বাবার। তিনি কেবলই বলছেন, ‘‘সাজা এখনই হোক। ওর (মেয়ে) কেন এমন হল? কার কী ক্ষতি করেছি আমি? কী করেছিল আমার বাচ্চাটা?’’
রবিবার সন্ধ্যায় বাজারে বেরিয়েছিলেন যুবক। স্ত্রী বাড়ির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পাশের বাড়িতে খেলতে গিয়েছিল মেয়ে। তার মধ্যে কেউ টের পাননি ফুটফুটে শিশুটিকে কখন ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে! তার দেহ লুকোনোর চেষ্টা করছেন যিনি, তিনিও আর এক প্রতিবেশী। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সেই প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে কম্বল এবং কাঠ চাপা দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায় শিশুটিকে। শুরু হয় শোরগোল। পরে পুলিশ আসে। গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় শিশুটিকে যৌন হেনস্থা করে হত্যা করেছেন তিনি। প্রতিবেশীরা বলছেন, অভিযুক্তের স্বভাব ভাল ছিল না। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এমন ঘৃণ্য কাজ করবেন, সেটা কেউ কল্পনা করেননি। মৃত শিশুটির বাবার কথায়, ‘‘ও মাংস খেতে চেয়েছিল। সে জন্য বাজার গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে বৌকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মেয়ে কই?’ ও বলল, ‘পাশের বাড়িতে খেলতে গিয়েছে।’ আমি ডাকতে গেলাম ওকে। কিন্তু ওদের বাড়ি থেকে বলল, অনেক ক্ষণ আগে ও বাড়ি চলে এসেছে!’’ এর পর প্রতিবেশীদের নিয়ে নানা জায়গায় খুঁজেছেন মেয়েকে। সামনের রাস্তা থেকে এ বাড়ি-ও বাড়ি ঘুরে কোথাও পাননি। হঠাৎ কয়েক জনের সন্দেহ হওয়ায় পাশের একটি চালাবাড়িতে ঢুকে বাচ্চাটির খোঁজ করেন তাঁরা। কিছু ক্ষণের মধ্যে বাড়ির ভিতর থেকে চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ ভেসে আসে। ঘরে ঢুকে কন্যার দেহ দেখে হতবাক হয়ে যান পিতা।
গুড়াপের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধীদের অভিযোগ, এলাকায় একের পর এক বেআইনি মদের ঠেক হয়েছে। যত দুষ্কৃতী এবং সমাজবিরোধী জড়ো হয় সেখানে। স্থানীয় এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘এলাকায় একাধিক চোলাইয়ের ঠেক। সে জন্য দিনরাত এমন অসামাজিক কাজ হচ্ছে। প্রশাসনকে অনেক বার বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এক বার-দু’বার পুলিশ ঠেকের মালিকদের ধরে নিয়ে যায়। তার পর তিন-চারশো টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। পুলিশ আগে মদের ঠেক বন্ধ করুক। এলাকার আইনশৃঙ্খলা বলে কিছুই নেই!’’ শিশুটির বাড়িতে গিয়েছিলেন ধনিয়াখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র। তিনি অপরাধীর ফাঁসি চেয়েছেন। বিধায়কের কথায়, ‘‘মর্মান্তিক, নৃশংস ঘটনা। এমন ঘটনা আমরা বরদাস্ত করতে পারি না। প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি জনপ্রতিনিধি হিসাবে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা অভিযুক্তের ফাঁসি চাই।’’
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্য দিকে, শিশুটির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অন্যত্র ময়নাতদন্ত হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy