সজলের মন্তব্যের কড়া জবাব কুণালের। ফাইল চিত্র।
বড়দিনের সন্ধ্যায় রবিবার এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এবং বিজেপি নেতা সজল ঘোষের। সেই সাক্ষাৎকে নিছক ‘আড্ডা’ বলে দাবি করেছিলেন কুণাল। সঙ্গে জানিয়েছিলেন কিছু ‘রাজনৈতিক কথা’ও হয়েছিল। তবে কী কথা, তা নিয়ে কোনও ইঙ্গিতই দেননি। এর পরে সজলের পক্ষে দাবি করা হয়, কুণাল তাঁকে তৃণমূল নিয়ে হতাশার কথা শুনিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিনা আমন্ত্রণে কুণাল ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন সজল। তার জবাব দিতে গিয়ে মঙ্গলবার বিস্ফোরক কুণাল। দাবি করলেন, সজলই বিজেপিতে তাঁর অবস্থান এবং খারাপ থাকা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। সেই সব কথার কিছু কিছু প্রকাশও করেছেন কুণাল। বিনা আমন্ত্রণে তিনি গিয়েছিলেন বলে সজলের মন্তব্য ‘ঘোর অসম্মানজনক’ বলেও দাবি কুণালের।ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক বিজেপি নেতা শিবাজি সিংহ রায় অবশ্য কুণালের পক্ষেই। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর আমন্ত্রণেই এসেছিলেন কুণাল।
রাজ্য রাজনীতিতে কুণাল ও সজলের অতীত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠই ছিল। কুণাল এখন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক এবং মুখপাত্র। অন্য দিকে, সজল বিজেপির টিকিটে কলকাতার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। রবিবার তাঁদের দেখা হয় বিজেপির উত্তর কলকাতা জেলার প্রাক্তন সভাপতি শিবাজির একটি অনুষ্ঠানে। কুণাল জানান, সেখানে শিবাজি এবং সজলের সঙ্গে তাঁর বেশ কিছু ক্ষণ আড্ডাও হয়। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘বড়দিনের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে পুরনো সতীর্থের সঙ্গে দেখা হতে অনেক কথা হল।’’ কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলেন সজল। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘আমি মোটেও আড্ডা দিইনি। আমার আড্ডা দেওয়ার অনেক লোক আছে। আমি যার-তার সঙ্গে আড্ডা দিই না। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেছি, কিন্তু আড্ডা নয়। উনি নিজের দুঃখের কথা, হতাশার কথা বলছিলেন। তিনি অতীতের কথা বলে কী ভাবে প্রতিশোধ নিতে চান সে কথাও বলছিলেন। কথাগুলো আমি এখন আর বলছি না।’’
কুণাল যে ওই অনুষ্ঠানে থাকবেন তা তিনি আগে জানতেন না বলেও দাবি করেন সজল। জানান, কুণাল আসবেন জেনেও সেখানে আমায় কেন ডাকা হল তা পরে শিবাজির কাছে জানতেও চান। এখানে না থেমে সজল বলেন, ‘‘ওঁর একটা সমস্যা আছে। যেখানেই ভাল খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকে সেখানেই চলে আসেন। এর আগেও দেখেছি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে খাওয়াদাওয়া আছে শুনে চলে গিয়েছিলেন। এখানেও তো ভাল ভাল খাবারের ব্যবস্থা ছিল। তিনি এখানেও চলে এসেছিলেন।’’ সজল দাবি করেন, ‘‘আমি এটা নিয়ে শিবাজিদাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি জানান, নিমন্ত্রণ করেননি।’’ যদিও শিবাজি মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও কথাই আমি সজলকে বলিনি। আর আমন্ত্রণ ছাড়া কেউ কোথাও আসেন নাকি!’’
গোটা বিষয়টাকে অসম্মানজনক বলেই মনে করছেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো আগে বলিনি কী কী কথা হয়েছে। আমি তো কাউকে ছোট করতে চাইনি। কিন্তু অন্য দলে গেলেও আমার ভাইয়ের মতো সজল সম্পর্কে আমার একটা অন্য ধারণা ছিল। সেই ধারণা নষ্ট হয়ে গেল।’’ এর পরেই কুণাল বলেন, ‘‘রবিবার আলোচনার সময় সজল ৪০ মিনিট আমার সঙ্গে আড্ডা মারেন। শুভেন্দু অধিকারীর তারিখ রাজনীতি কেন ভুল হচ্ছে তা নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। কথা দিয়েও চৌরঙ্গি আসনে টিকিট না দেওয়া কিংবা সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি হতে না-পারা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন।’’ কুণাল, এ-ও দাবি করেন যে, ‘‘সে দিন আমি আরও কিছু ক্ষণ থাকলে সজল হয়তো আমার সঙ্গে তৃণমল ভবনে যেতে চাইত। রাতারাতি ফেরা সম্ভব নয় জানিয়ে আমি কিছু দিন একটু চুপ থাকতে বলেছিলাম।’’ সজল দাবি করেছিলেন, কুণাল নিজের হতাশার কথা তাঁকে বলেছেন। এ প্রসঙ্গে কুণালের বক্তব্য, ‘‘আমার মনের কথা বলতে হলে অনেক উচ্চ পর্যায়ে বলতে পারি। তার গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহের মধ্যেও সজল আসে না।’’ কুণালের দাবি, তৃণমূলের কারও সঙ্গে দেখা হলে দলে জায়গা চলে যাওয়ার ভয়ে ভুগছেন বিজেপি নেতারা।
কুণালের এই বক্তব্যের পরে সজলের দাবি, ‘‘আমি সব কথা বলে দেওয়ায় ওঁর দুঃখ লাগছে। এখন উনি যদি কী কী কথা হয়েছে সেটা বলে দেন আমার কোনও আপত্তি নেই।’’ তবে শিবাজি আমন্ত্রণের কথা স্বীকার করলেও সজল তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘আজকালকার দিনে চলতে গেলে কিছু তথ্য রেখে চলতে হয়। সেটা প্রকাশ না করলেও শিবাজিদা যে নিমন্ত্রণ করা হয়নি বলেছেন তার প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।’’ একই দাবি কুণালের। তিনিও বলেন, ‘‘শিবাজি একাধিক বার ফোন করে নিমন্ত্রণ করেছেন। তার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করা আমার রুচিবিরুদ্ধ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy