Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পুরপ্রধানকে অনাস্থায় সরাল তৃণমূল

কালিয়াগঞ্জ, জঙ্গিপুর পুরসভার স্মৃতি উস্কে দিল পুরুলিয়ার ঝালদা। ভোটে যেখানে তারা খাতা খোলেনি, বিরোধী দল ছেড়ে আসা কাউন্সিলরদের নিয়ে সেই পুরসভায় পুরপ্রধানকে অনাস্থায় সরাল তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝালদা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
Share: Save:

কালিয়াগঞ্জ, জঙ্গিপুর পুরসভার স্মৃতি উস্কে দিল পুরুলিয়ার ঝালদা। ভোটে যেখানে তারা খাতা খোলেনি, বিরোধী দল ছেড়ে আসা কাউন্সিলরদের নিয়ে সেই পুরসভায় পুরপ্রধানকে অনাস্থায় সরাল তৃণমূল।

বৃহস্পতিবার অনাস্থা সংক্রান্ত ভোটে পুরপ্রধান মধুসূদন কয়াল অপসারিত হন। লোভ এবং ভয় দেখিয়ে শাসক দল এই কাণ্ড করেছে বলে অভিযোগ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূলের নেতা তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, যাঁরা দল বদলেছেন, তাঁরা উন্নয়নের স্বার্থ দেখেছেন।

১২ আসনের পুরসভায় ২০১৫-র পুরভোটে কংগ্রেস সাত, ফরওয়ার্ড ব্লক ও নির্দল দু’টি করে এবং সিপিএম একটি আসনে জেতে। কিন্তু তৃণমূল পুরসভা দখল করার মতলবে রয়েছে বলে গোড়া থেকেই সন্দেহ ছিল কংগ্রেসের। তৃণমূলের দাবি, সে জন্য গত জুলাইয়ে কংগ্রেস ও বামেরা পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে এবং তা খারিজ করায়। ভাবনা ছিল— এক বার অনাস্থা প্রস্তাব ওঠার পরে তা খারিজ হয়ে গেলে আর ছ’মাসের মধ্যে নতুন করে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে না।

অগস্টের গোড়ায় কংগ্রেসের চার, ফরওয়ার্ড ব্লকের এক এবং দুই নির্দল কাউন্সিলর-সহ সাত জন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকে জলঘোলা শুরু হয়। দলত্যাগীরা পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ফের অনাস্থা আনেন। ১৫ দিনের মধ্যে পুরপ্রধান তলবিসভা ডাকেননি। উল্টে, আগের অনাস্থার প্রসঙ্গ টেনে দলত্যাগীদের আনা অনাস্থা অবৈধ দাবিতে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে যান। নিয়ম অনুযায়ী, এর পরে উপপুরপ্রধান মহেন্দ্রকুমার রুংতার পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে অনাস্থা সংক্রান্ত সভা ডাকার কথা ছিল। তাঁর দাবি, তিনি সময়সীমার শেষের দিকে সভার দিন ঠিক করেছিলেন। যদিও সে খবর তাঁরা পাননি দাবি করে দলত্যাগীদের মধ্যে তিন কাউন্সিলর তলবিসভা ডাকেন। সেই তলবিসভাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান উপপুরপ্রধান। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে এ দিন তলবিসভা ডেকেছিলেন তিনি।

তলবিসভায় পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান-সহ পাঁচ কাউন্সিলর আসেননি। এসেছিলেন তৃণমূলের সাত জন। পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক সুপ্রভাত মিত্র বলেন, ‘‘সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতে পুরপ্রধান অপসারিত হয়েছেন।’’

এ দিনের তলবিসভা স্থগিত করতে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন পুরপ্রধান। তৃণমূলের আইনজীবী সঞ্জয় বসু জানান, সে আবেদন খারিজ হয়েছে। বলেন, ‘‘বিরোধীরা চেষ্টা করলেও আদালতে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক নেপাল মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘মধুসূদনবাবুর মামলা এখনও চলছে। তলবিসভায় জিতলেও তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতা পাবে কি না, তা আদালত ঠিক করবে।’’

অপসারিত পুরপ্রধান মধুসূদনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই পরিবর্তন মানুষের রায়ের বিরুদ্ধে গেল। তৃণমূল নীতিহীন রাজনীতি করছে।’’ যদিও দলত্যাগীদের অন্যতম প্রদীপ কর্মকারের দাবি, ‘‘উন্নয়ন চান ঝালদার বাসিন্দারা। তৃণমূলই এই শহরের উন্নতি করবে।’’

২০১০-র পুরভোটের পরের পাঁচ বছরে অনাস্থার জেরে বারবার ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে ঝালদা পুরসভায়। কখনও বামফ্রন্ট, কখনও কংগ্রেস, কখনও তৃণমূল, কখনও নির্দল পুরপ্রধানের আসনে বসেছেন। কিন্তু ঝালদাবাসীর বরাবরের অভিযোগ, অনাস্থা-রাজনীতির জেরে অবহেলিত থেকেছে উন্নয়ন ও পুর-পরিষেবা। এ বারেও উন্নয়ন বিশ বাঁও জলে যাবে কি না, সে আশঙ্কা রয়েছে তাঁদের।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC No confidence vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE