শেখ ওয়াসিমউদ্দিন, মহম্মদ আশিফুল, ও শেখ সাইম আখতার
পরীক্ষা ভাল হয়েছিল। কিন্তু তা বলে একেবারে প্রথম তিনে! বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম পরীক্ষার (মাধ্যমিকের সমতুল) ফল দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না তিন ছাত্র। ওই পরীক্ষায় এ রাজ্যের প্রথম তিনটি স্থানই দখল করেছে বারাসত মহকুমার তিন জন। প্রথম স্থানে রয়েছে আমডাঙার সাধনপুরের ‘কেন্দ্রীয় সিদ্দিকিয়া হামিদিয়া রাহানা সিনিয়র মাদ্রাসার’ ছাত্র শেখ ওয়াসিমউদ্দিন। তারই সহপাঠী শেখ সাইম আখতার হয়েছে তৃতীয়। আর দেগঙ্গার হাদিপুরের ‘শাহা আনোয়ারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার’ ছাত্র মহম্মদ আশিফুল আমিন রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।
রাজ্যের মধ্যে সে যে প্রথম হয়েছে, তা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি ওয়াসিম। মাদ্রাসারই এক শিক্ষক প্রথম তাকে খবরটা দেন। তার পর থেকেই বাড়িতে ফোনের বন্যা। ভিড় করেছেন এলাকার মানুষ ও শুভানুধ্যায়ীরা। এখন রোজা চলায় মিষ্টিমুখ হয়নি। তবে গোটা ঘর ভরে গিয়েছে ফুল আর শুভেচ্ছা-বার্তায়।
এখনও মার্কশিট পায়নি ওয়াসিম। তবে জেনেছে, ৯০০-র মধ্যে তার নম্বর ৮৪৫। বাবা শেখ মহিউদ্দিন নৈহাটির একটি ডাকঘরের পোস্টমাস্টার। দাদা জসিমউদ্দিন এ বারই উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছেন। খবর পেয়ে কৃতী ছাত্রের বাড়িতে ছুটে এসেছেন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হক মল্লিক। ছেলের গর্বে এলাকার এত মানুষকে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে বারবার ভুল হয়ে যাচ্ছিল মা ইসমত আরা বিবির। ছেলের পড়াশোনা সামলাতেন তিনিই।
ওয়াসিম জানাল, তার ১১ জন গৃহশিক্ষক ছিলেন। তাঁদের কাছে পড়া বাদে দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা করে পড়ত সে। একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়া শুরু করে দিয়েছে ওই ছাত্র। ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায়। পরীক্ষার আগের তিন মাস গল্পের বই পড়া হয়নি। তাই চুটিয়ে চলছে গল্পের বই পড়া। ‘‘প্রিয় লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়’’— লাজুক মুখে বলে ওয়াসিম।দেগঙ্গার বাসিন্দা আশিফুল পেয়েছে ৮৩৮। বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৯২, আরবিতে ৮৯ আর অঙ্কে ১০০। আশিফুলের বাবা নুরুল আমিন বসিরহাটের একটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে বড় জন স্কুল শিক্ষিকা, অন্য জন ইংরেজি নিয়ে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করছেন। আশিফুলের মা জান্নাতুন ফিরদৌসি বলেন, ‘‘শিক্ষকতার জন্য ওদের বাবা ঠিক মতো সময় দিতে পারতেন না। ছেলেকে শিক্ষিত করে তুলতে সব সময়ে পাশে থেকেছি।’’
সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশিফুলের বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড়। শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন দেগঙ্গার বিধায়ক রহিমা মণ্ডলও। আশিফুল জানায়, পাঁচ জন গৃহশিক্ষক ছিলেন তার। বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে সে। বলল, ‘‘আইএএস দিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিক হতে চাই।’’ প্রতিবেশীরা জানালেন, ক্রিকেট খেলা ও ছবি আঁকাতেও পারদর্শী আশিফুল।
৮২৮ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমডাঙার রাহানা সিনিয়র মাদ্রাসারই শেখ সাইম আখতার। বাবা মোকসেদ আলি ঘড়ি সারাইয়ের মিস্ত্রি। মা সেরিনা বিবি জানালেন, দুই ছেলের মধ্যে সাইম ছোট। বড় ছেলে শামিম বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ছেন। সাইম বলে, ‘‘আট ঘণ্টা করে পড়তাম। খুব ভাল লাগে ক্রিকেট খেলতে। আগামী দিনে ডাক্তার হতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy