Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

শল্য চিকিৎসায় সেরা পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের তিন ডাক্তার

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শল্য চিকিৎসকদের পারফরম্যান্স রিপোর্টে মেজর সার্জারি বিভাগে প্রথম তিনটি স্থানই দখল করলেন পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের তিন শল্য চিকিৎসক।

নিরলস: (বাঁ দিক থেকে) নয়ন মুখোপাধ্যায়, প্রবালকান্তি মণ্ডল ও সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

নিরলস: (বাঁ দিক থেকে) নয়ন মুখোপাধ্যায়, প্রবালকান্তি মণ্ডল ও সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শল্য চিকিৎসকদের পারফরম্যান্স রিপোর্টে মেজর সার্জারি বিভাগে প্রথম তিনটি স্থানই দখল করলেন পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের তিন শল্য চিকিৎসক।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতর সম্প্রতি রাজ্যের ৫২টি হাসপাতালের শল্য চিকিৎসকদের পারফরম্যান্স রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল ও স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ২০৫ জন চিকিৎসকের নাম রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ন’মাসের কাজকর্মের ভিত্তিতে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের নয়ন মুখোপাধ্যায়, প্রবালকান্তি মণ্ডল ও সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় প্রথম তিনটি স্থান পেয়েছেন। মেজর সার্জারি বিভাগে নয়ন মুখোপাধ্যায়ের অস্ত্রোপচারের সংখ্যা ৩৫৭, প্রবালকান্তি মণ্ডল অস্ত্রোপচার করেছেন ২৬৪টি। সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় করেছেন ২৩১টি অস্ত্রোপচার। ওই তালিকায় দু’শোর বেশি অস্ত্রোপচার করেছেন এমন চিকিৎসকের মোট সংখ্যা ৭।

ইচ্ছে থাকলে জেলা হাসপাতালের সীমিত পরিকাঠামো নিয়েও পরিষেবা যে দেওয়া যায়, সেটা অতীতে একাধিকবার প্রমাণ করেছে পুরুলিয়া। রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তারা সে কথা স্বীকারও করেছেন। পথ দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তির কাটা পড়া আঙুল জুড়ে এক প্রকার নজির স্থাপন করেছিলেন এই হাসপাতালের চিকিৎসক পবন মণ্ডল। এ বারে মেজর সার্জারিতে রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করলেন নয়ন মুখোপাধ্যায়। তিনি পুরুলিয়ারই বাসিন্দা। পুঞ্চা এলাকায় বড় হওয়া, পড়াশোনা। কলকাতার ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়ার পাট চুকিয়ে যোগ দেন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। নয়নবাবু বলেন, ‘‘আমি পুরুলিয়াতেই বড় হয়েছি। জেলার গ্রামগুলির আর্থ-সামাজিক অবস্থাটা খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাই গরিব মানুষ যখন সমস্যায় পড়ে হাসপাতালে আসেন, তাঁদের অসহায়তা দেখে মনে হয়— যত কষ্টই হোক, আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব।’’

কখনও মনে হয়েছে কোনও অস্ত্রোপচার কঠিন হবে। হাসপাতালের পরিকাঠামোয় সফল হবে কি না পুরোপুরি নিশ্চিত হয়। কিন্তু গরীব মানুষগুলির কথা ভেবে লড়ে গিয়েছেন, জানান নয়নবাবু। স্মৃতি থেকে সেই রকমের কয়েকটি উদাহরণ তুলে আনেন তিনি। তখন সদ্য হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল একটি ছেলেকে। গাছ থেকে পড়ে নাড়িভুরি বেরিয়ে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার করে সুস্থ করে তাকে বাড়ি পাঠিয়েছিলেন নয়নবাবু। সুস্থ করে তুলেছিলেন ষাঁড়ের গুঁতোয় পেট ফালাফালা হয়ে যাওয়া এক জনকে।

চিকিৎসার পাশাপাশি কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও লড়ে যান নয়নবাবু। নিজে বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক। ডাইনি সন্দেহে কাউকে একঘরে করা, জরিমানা করা— এ সব শুনেছেন, তো ছুটেছেন এলাকায়। অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে জনমত গঠনেও ঘুরে বেড়ান বান্দোয়ান থেকে বাঘমুণ্ডি, হুড়া থেকে পাড়া। বলছেন, ‘‘এ বারে দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।’’

প্রবালকান্তি মণ্ডল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন ২০১৩ সালে। সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় এই হাসপাতালের শল্য চিকিৎসা বিভাগের প্রধান। তিনি যোগ দিয়েছিলেন ২০০৩-এ। তাঁদের ঝুলিতেও এমন অনেক কঠিন অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই রিপোর্ট প্রকাশের পরে প্রবালবাবু বলছেন, ‘‘ক্যানসারে আক্রান্ত এক রোগীর পেটে অস্ত্রোপচার করেছিলাম এক বার। সুস্থ হয়ে যখন বাড়ি ফিরেছিলেন, মুখের হাসিটা দেখে খুব ভাল লেগেছিল। এই সমস্তর জন্যই নিজের কাজটা করে যাই।’’ আর সঞ্জয়বাবুর কথায়, ‘‘নিজেদের কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। তাতে সাফল্য এসেছে। এটা দলগত সাফল্য।’’

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘এটা আমাদের সবার সম্মান। ওঁদের প্রত্যেককে অভিনন্দন। এই পরিকাঠামোর মধ্যে যা করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার। অন্যরাও ওঁদের দেখে উদ্বুদ্ধ হবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Surgery Doctors Performance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE