Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

সবুজের বীজ বোনেন গাছপাগল ‘বীরাপ্পন’

অবিকল চন্দনদস্যুর মতো গোঁফের জন্য কালীনাথের নামই হয়ে গিয়েছিল ‘বীরাপ্পন।’ কচিকাঁচারা সঙ্গে জুড়ে দিত কাকু। তবে গোঁফজোড়া ছাড়া চন্দনদস্যুর সঙ্গে আর কোনও মিল নেই সুতাহাটার এই বীরাপ্পনের। বরং তিনি উল্টো পথের পথিক। যত্নে বাগান করা আর নতুন প্রজন্মকে গাছ ভালবাসতে শেখানোই তাঁর ধ্যানজ্ঞান।

পড়ুয়াদের সঙ্গে কালীনাথ বেরা। নিজস্ব চিত্র

পড়ুয়াদের সঙ্গে কালীনাথ বেরা। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
সুতাহাটা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০৫:০০
Share: Save:

সেটা নব্বইয়ের দশক। চন্দনদস্যু বীরাপ্পনকে ধরতে তিন রাজ্যের পুলিশ যখন নাজেহাল, তখনই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন সুতাহাটার মনোহরপুরের কালীনাথ বেরা। সৌজন্যে তাঁর গোঁফজোড়া।

অবিকল চন্দনদস্যুর মতো গোঁফের জন্য কালীনাথের নামই হয়ে গিয়েছিল ‘বীরাপ্পন।’ কচিকাঁচারা সঙ্গে জুড়ে দিত কাকু। তবে গোঁফজোড়া ছাড়া চন্দনদস্যুর সঙ্গে আর কোনও মিল নেই সুতাহাটার এই বীরাপ্পনের। বরং তিনি উল্টো পথের পথিক। যত্নে বাগান করা আর নতুন প্রজন্মকে গাছ ভালবাসতে শেখানোই তাঁর ধ্যানজ্ঞান।

গাছপাগল এই বীরাপ্পন পেশায় হলদিয়া পুরসভার চুক্তিভিত্তিক কর্মী। মূলত বাগানের কাজ করেন। নিজের বাড়িতে দেশি ও বিদেশি গাছের বাগান করেছেন তিনি। তবে শুধু নিজের গাছ প্রেমেই আটকে নেই কালীনাথ। সবুজের বীজ বুনে চলেছেন নতুন প্রজন্মের মনেও। খুদে পড়ুয়ারা যাতে গাছ ভালবাসতে শেখে, সে জন্য স্কুলে পৌঁছে যান। শুকনো শিকড় থেকে ডাইনোসর, কুমির, বিড়াল, হাঙর বানানো শেখান। আর বোঝান, ‘হৃদয়ের মধ্যে গাছ আর প্রকৃতিকে রাখো। এদের ভালবাসো। তবেই পৃথিবী আরও সুন্দর হবে’।

হলদিয়ার পৌরপাঠ ভবন স্কুলের অঙ্কন শিক্ষক দীপেন্দ্রনাথ দে বলছিলেন, ‘‘কালীনাথবাবু যে ভাবে ছোটদের গাছপালা ভালবাসতে শেখান তা শিক্ষণীয়। খুদেরাও এতে খুব খুশি।’’ হলদিয়ার মনোহরপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রাণনাথ শেঠেরও বক্তব্য, ‘‘আমাদের এই বীরাপ্পন গাছ অন্ত প্রাণ। স্কুলের বাগান তৈরির সময়ও উনি খুব সাহায্য করেছেন।’’ কচিকাঁচারাও এমন খেলাচ্ছলে গাছের গুরুত্ব জানতে পেরে খুশি। জয়জিৎ, অমিত, সম্প্রীতিদের কথায়, ‘‘উনি শিকড় থেকে কী সুন্দর সব জিনিস বানান। আমাদের শেখান। আমরাও বুঝি গাছকে ভালবাসা কতটা জরুরি।’’

কিন্তু এই গাছ প্রেমের শিকড়টা কোথায়?

কালীনাথের কথায়, ‘‘বীরাপ্পনে নির্বিচারে চন্দন গাছ কাটার কথা যখন জেনেছিলাম, মনে একটা ধাক্কা লেগেছিল। পরে ভাবলাম ওর মতো গোঁফ রাখব, কিন্তু আমার কাজ হবে গাছ বাঁচানো, গাছ ভালবাসতে শেখানো। লোকের মনে বেঁচে থাকবে এক অন্য বীরাপ্পন।’’ নিজের বাড়িতে কয়েক হাজার গাছ লাগিয়েছেন কালীনাথ। তাঁর বাগান অনেকে দেখতেও আসেন।

একটা সময় ভ্যানরিকশা চালাতেন কালীনাথ। পরে তিনটি শিল্পসংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ পেয়েছিলেন। একটিতে যোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু বন্দুক কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে তাঁর ভাল লাগত না। তাই সব ছেড়েছুড়ে কোদাল ধরলেন। গাছ পাগল বীরাপ্পন বলছেন, ‘‘সব কাজ সবার জন্য নয়। আমার হৃদয়ে শুধু মাটি আর গাছ। কচিকাঁচাদের মনেও সবুজে মন্ত্র গেঁথে দিতে পারলেই আমার স্বপ্ন সার্থক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tree Plantation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE