Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

পদে পদে বাধা, প্রতিবন্ধীদের উচ্চশিক্ষা স্বপ্নই

সংগঠনের সহ-সম্পাদক অমর্ত্যালোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কেন্দ্রের ২০১৬ সালের সংশোধিত প্রতিবন্ধী অধিকার আইনে কোটায় ভর্তি ৩% থেকে বাড়িয়ে ৫% করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সেটা মানছে না।

মধুমিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৪
Share: Save:

যাবতীয় বাধার গিরি লঙ্ঘনের শক্তি যে ওঁদের মধ্যেই আছে, সেটা জানান দিতে পারে একমাত্র শিক্ষা। কিন্তু সেই শিক্ষা, বিশেষত উচ্চশিক্ষার দরজায় পৌঁছনোর জন্য তাঁদের হাত ধরার মতো হাতের যে বড়ই অভাব!

প্রতি বছর ওঁদের নামে একটি ‘দিবস’ (৩ ডিসেম্বর) পালন করা হয় নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সরকারি কর্তারা বিভিন্ন মঞ্চে আবেগঘন বক্তৃতা দেন। ফলমূল, জামাকাপড় বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে আশ্বাসের বান ডাকে। ওঁদের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল’ সকলেই। অথচ এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, দেশের ৫০টি কেন্দ্রীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘প্রতিবন্ধী কোটা’র ৮৪% আসনই ফাঁকা পড়ে থাকে! এ রাজ্যের ছবিটাও তার থেকে আলাদা নয়।

সমীক্ষা চালিয়েছে ন্যাশনাল সেন্টার ফর প্রোমোশন অব এমপ্লয়মেন্ট ফর ডিজেবলড পিপল (এনসিপিইডিপি)। আর সেই সমীক্ষা চালানো হয়েছে দেশের বিভিন্ন আইআইটি, জওহরলাল নেহরু, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়-সহ ৫০টি কেন্দ্রীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ফাঁকা পড়ে থাকছে, তা নিয়ে নানা বিশেষজ্ঞের নানা মত। তবে কারণ হিসেবে সকলেই বলছেন পরিকাঠামোর অভাবের কথা। যেমন, দৃষ্টিহীনদের জন্য অডিও বুক, রিডার ও রাইটারের অভাব। যাঁরা চলাফেরা করতে পারেন না, তাঁদের ওঠানামার জন্য র‌্যাম্প, লিফটের অভাব। শৌচাগারের অভাব। অবস্থাটা সব চেয়ে খারাপ বধিরদের ক্ষেত্রে। বহুমুখী বাধা ঠেলে বহু প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরোতে সাহস করছেন না।

ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অভাব বেশি প্রকট বলে মনে করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি বিভাগের ডিন অম্লান চক্রবর্তী। যাদবপুরে স্নাতক স্তরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এ বার যে-চারটি আসন ফাঁকা, তার সবই প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। কেন? চিরঞ্জীববাবুর কথায়, ‘‘আসলে পড়া শেষ করতে পারলেও প্রতিবন্ধী বলে অধিকাংশ সংস্থাই ওঁদের নিতে চায় না। তাই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ওঁদের আগ্রহ কম।’’ অম্লানবাবু মনে করেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাসে ফিল্ড ওয়ার্ক, প্র্যাক্টিক্যাল-সহ এমন কিছু কাজ থাকে, প্রতিবন্ধীদের পক্ষে যেগুলো করা বেশ কষ্টসাধ্য। তাই ওঁরা উৎসাহ পান না।’’

কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ছবিটা তুলনায় একটু ভাল। যাদবপুরে ওই দুই বিভাগে সাধারণত প্রতিবন্ধী কোটার কোনও আসন ফাঁকা থাকে না বলেই কর্তৃপক্ষের দাবি। যদিও কলকাতায় ছবিটা প্রায় উল্টো।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর অভিযোগ, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের হাল খারাপ। সংগঠনের সহ-সম্পাদক অমর্ত্যালোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কেন্দ্রের ২০১৬ সালের সংশোধিত প্রতিবন্ধী অধিকার আইনে কোটায় ভর্তি ৩% থেকে বাড়িয়ে ৫% করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সেটা মানছে না।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কোটি কোটি টাকা দেয় রাজ্য সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবু মুষ্টিমেয় প্রতিবন্ধী পড়ুয়ার জন্য রাইটার, র‌্যাম্প, অডিও বুকের ব্যবস্থা করে উঠতে পারে না শিক্ষা বিভাগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি! ওঁদের জন্য সহানুভূতির অভাব নেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধরচক্রবর্তীর অভিজ্ঞতা, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমরা চাই, ওরা ভর্তি হোক।’’ বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তুলনায় নবীন। সেখানকার উপাচার্য বাসব চৌধুরীরও বক্তব্য, প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারা ভর্তি হোক, এটা সকলেই চান। উল্লেখ্য, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গত বছরের সমাবর্তনে দুই প্রতিবন্ধী ছাত্রী ডিগ্রি নিতে গেলে তাঁদের বিষয়টি খেয়াল করেছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। পরে তাঁদের রাজভবনে ডেকে পুরস্কৃত করেন।

অন্ধকারের মধ্যে আশার আলোও দেখা যাচ্ছে বেহালার বিবেকানন্দ কলেজ ফর উইমেনকে ঘিরে। ওখানে এ বার দু’জন প্রতিবন্ধী ছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। অধ্যক্ষা সোমা ভট্টাচার্য জানান, কয়েক বছর আগে হাড়ের দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে এক ছাত্রী ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন। কলেজে লিফট না-থাকায় তাঁকে উঠতে সাহায্য করতেন শিক্ষাকর্মীরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE