কালনার পুরশ্রী মঞ্চে কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ নির্বিঘ্নে হলেও গোলমাল বাধে তার পরেই। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটাভুটিতে তপন পোড়েলকে পুরপ্রধান নির্বাচিত করেন বিক্ষুব্ধেরা।
তৃণমূল কাউন্সিলর অনিল বসু রেলিংয়ে উঠে পড়েছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের সামনেই। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল
পুরভোটে বিপুল জয় পেলেও পুরবোর্ড গঠন মসৃণ হল না তৃণমূল কংগ্রেসের। পদ নিয়ে টানাপড়েনে উত্তর থেকে দক্ষিণ, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দলের অন্দরের ক্ষোভ-বিক্ষোভ আর অভিযোগ সামনে চলে এল। দলে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে পুরপ্রধান হতে বিরোধী বিজেপির সমর্থন নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে পদ না পেয়ে এক জয়ী কাউন্সিলর সটান বিধানসভায় এসে দরবার করলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই।
সোমবার থেকেই হাতে আসা ১০৩টি পুরসভায় বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিল শাসক তৃণমূল। পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান পদে রাজ্য স্তরে চূড়ান্ত করা নাম পাঠানো হয়েছিল জেলা নেতৃত্বের কাছে। কিন্তু সেই নাম ঘিরে কিছু পুরসভায় দলের অন্দরে অসন্তোষ দানা বাঁধে। তার জের চলেছে বুধবার পর্যন্ত। রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে দু’একটি জায়গায় বারবার নাম পরিবর্তন করতে হয়েছে। কোথাও কোথাও এই মতবিরোধ ভোটাভুটি পর্যন্ত গড়িয়েছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেশিরভাগ জায়গাতেই দলের সিদ্ধান্ত মতো বোর্ড গঠন হয়েছে। দু’এক জায়গায় সমস্যা হতেই পারে। তা নিয়ে আলোচনা হবে।’’
বোর্ড গঠন নিয়ে বুধবার সব থেকে বেশি জটিলতা তৈরি হয় কালনায়। প্রাক্তন পুর-প্রশাসক আনন্দ দত্তকে পুরপ্রধান ও তপন পোড়েলের নাম উপপুরপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও পুরপ্রধান হিসেবে আনন্দকে মানতে চাননি দলের ১৭ কাউন্সিলরের ১২ জনই। কালনা পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টি তৃণমূল দখল করেছে। মাত্র পাঁচ জন আনন্দের পক্ষে ছিলেন।
এ দিন কালনার পুরশ্রী মঞ্চে কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ নির্বিঘ্নে হলেও গোলমাল বাধে তার পরেই। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটাভুটিতে তপন পোড়েলকে পুরপ্রধান নির্বাচিত করেন বিক্ষুব্ধেরা। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সেখানে পৌঁছলেও তাঁর কথা শোনেননি বিক্ষুব্ধেরা। সে সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় এ দিনের মতো বোর্ড গঠনের কাজ বন্ধ রেখে সভা ছাড়েন এসডিও (কালনা) সুরেশকুমার জগৎ। বাগবিতণ্ডার সময় অনিল বসু নামে এক কাউন্সিলর মন্ত্রীর সামনে দোতলা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বারান্দার রেলিংয়ে উঠে পড়েন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ঝাঁপ দেননি। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে তপনকে শহর সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে তৃণমূল।
ঘাটালের খড়া পুরসভার ১০টি আসনের ৮টি তৃণমূলের দখলে। ২টি বিজেপির হাতে। চেয়ারম্যান পদ নিয়ে টানাপড়েন ভোটাভুটিতে গড়ালে এখানে তৃণমূলের অদ্যুত মণ্ডল ৬টি ভোট পেয়ে পুরপ্রধান নির্বাচিত হন। আর দলের তরফে যাঁকে পুরপ্রধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল তৃণমূলের সেই সন্ন্যাসী দলুই পেয়েছেন ৪টি ভোট। ফলে বোর্ড গঠন সম্পূর্ণ হয়ে গেলেও ‘বিজেপির ছোঁয়া’য় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক শিবির। পরে অদ্যুতকে সাসপেন্ড করার কথা জানিয়েছে তৃণমূল।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় বিদায়ী বোর্ডের উপপুরপ্রধান পদ না পাওয়ায় প্রকাশ্যেই দলের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, টাকার বিনিময়েই পুরপ্রধান বা উপপুরপ্রধান করা হয়েছে। বনগাঁয় পুরপ্রধান হয়েছেন গোপাল শেঠ।
কোচবিহারের মাথাভাঙা পুরসভায় বোর্ড গঠনের সময়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। দলের নির্দেশ অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে পৃথক প্রার্থী দাঁড় করানোর তোড়জোড় শুরু করেছিলেন কয়েক জন কাউন্সিলর। যদিও পরে তাঁরা রণে ভঙ্গ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy