রাস্তায় ‘দ্রোহের উৎসব’-এর বার্তা আন্দোলনকারীদের —ফাইল চিত্র।
বিচারপতি কপূরের এজলাস থেকে বার হয়ে আইনজীবী বিকাশ জানান, সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট জেনারেল এই নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন। সেই স্থগিতাদেশের আর্জিও আদালত খারিজ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, “দ্রোহের কার্নিভাল হবে। সব মানুষ সেখানে জড়ো হতে পারবেন। কলকাতা পুলিশের নির্দেশিকার শুরুতেই হাই কোর্টের একটি নির্দেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। সেটিও এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সামগ্রিক ভাবে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের জারি করা ১৬৩ ধারার নির্দেশিকা খারিজ হয়ে গিয়েছে। রাস্তার উপর যত গার্ড রেল রয়েছে, সব সরিয়ে দিতে হবে। মানুষের যাতায়াতে কোনও বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। যাঁরা দ্রোহের কার্নিভালে যোগ দিতে চান, নির্ভয়ে আসতে পারেন। আমিও যাচ্ছি।”
বিচারপতি কপূর বলেন, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। আদালত বার বার এই নির্দেশ দিয়েছে।” দ্রোহের কার্নিভাল আয়োজনের অনুমতি দিলেন বিচারপতি। একই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের ১৬৩ ধারা জারির নির্দেশিকাও খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি জানিয়েছেন, রেড রোড এবং রানি রাসমণি রোডের মাঝে ব্যারিকেড করে দেওয়া হবে।
দুই আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারপতি আবার রাজ্যকে প্রশ্ন করেন, “তা হলে আপনারা কোনও শর্তেই কর্মসূচি করতে দেবেন না?” রাজ্যের আইনজীবী তখন আর্জি জানান, অন্য দিন যাতে এই দ্রোহের কার্নিভাল করা হয়। তিনি আরও জানান, রামলীলা ময়দানে এই কর্মসূচি করা যেতে পারে।
দু’টি কর্মসূচিই একসঙ্গে করতে হলে কী শর্ত দিতে চায় রাজ্য? জানতে চাইলেন বিচারপতি কপূর। যদিও রাজ্যের আইনজীবীর বক্তব্য, ডাক্তারদের কর্মসূচি চললে উত্তর কলকাতার অনেক পুজো কমিটির রেড রোডে পৌঁছতে সমস্যা হবে। অন্য দিকে বিকাশ বলেন, “ডাক্তারেরা গুন্ডা নন। আমি নিশ্চিত করে বলছি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে। পুলিশ বলতে পারে না আমি কোন দিন কর্মসূচি করব। রানি রাসমণি রোডে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। তারা আটকে রাখুক।”
অন্য কোনও দিন দ্রোহের কার্নিভাল আয়োজন করা হোক। আদালতে জানালেন রাজ্যের আইনজীবী। তিনি বলেন, “বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে (পুজোর) কার্নিভাল শুরু হবে। যথাযথ কারণেই জন্য ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে। অন্য কোনও দিন কর্মসূচি করা হোক।” রাজ্য আরও জানায়, পুলিশ স্ট্যাচু থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি। আগামিকাল এই প্রতিবাদী কর্মসূচি করার প্রস্তাব দেন তিনি। রাজ্যের আইনজীবী আরও জানান, এর আগেও কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে এই আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি করেছেন বলেও আদালতে জানান তিনি।
কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির কথা আদালতে তুলে ধরেন রাজ্যের আইনজীবী। তিনি জানান, ইউনেস্কো স্বীকৃতি দুর্গাপুজোর কার্নিভাল করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে শাহিনবাগ মামলায় বিদেশি অতিথি উপস্থিত থাকার জন্য সুপ্রিম কোর্ট বিক্ষোভ কর্মসূচির উপর লাগাম টেনেছিল, সে কথাও হাই কোর্টে জানান রাজ্যের আইনজীবী।
১৬৩ ধারা আর কোথাও জারি করা বাকি রয়েছে? মামলার শুনানিতে রাজ্যকে প্রশ্ন হাই কোর্টের বিচারপতি রবিকিশন কপূরের।
বিকাশ জানান, মঙ্গলবার দ্রোহ কার্নিভাল আয়োজন করতে চেয়ে ১১ অক্টোবর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। যদিও রাজ্যের আইনজীবী জানান, ওই কর্মসূচির তাৎপর্য কী, তা আয়োজকেরা জানাননি। বিকাশ এর আগে জানিয়েছিলেন রেড রোড থেকে দূরেই আয়োজন হচ্ছে কর্মসূচি। তবে রাজ্যের আইনজীবী জানান, রেড রোড এবং রানি রাসমণি রোডের সংযোগও রয়েছে।
রাজ্যের আইনজীবী জানান, মঙ্গলবার (পুজোর) কার্নিভাল রয়েছে। রাজ্যের সবাই সে কথা জানেন। অন্য দিকে মামলাকারী পক্ষের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, পুজোর কার্নিভাল নিয়ে এর আগে আদালতের নির্দেশ রয়েছে। (ত্রিধারায় স্লোগান দেওয়ার ঘটনায়) ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখন কার্নিভাল নিয়ে হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল। বিকাশের বক্তব্য, রেড রোড থেকে দূরেই কর্মসূচি করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে রানি রাসমণি রোডে কর্মসূচির অনুমতি দেওয়ার আর্জি জানান তিনি।
দুপুর দু’টোর কিছু পরে হাই কোর্টে বসল বিচারপতি রবিকিশন কপূরের বিশেষ বেঞ্চ।
আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই হাই কোর্টের বিচারপতি রবিকিশন কপূরের বেঞ্চে শুরু হবে পুলিশি নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলার শুনানি। শেষ পর্যন্ত কি দ্রোহের কার্নিভাল আয়োজন করতে পারবেন আন্দোলনকারীরা? মামলাটি আদালতে শুনানির জন্য ওঠার পর ঘটনা পরম্পরা কোন দিকে এগোয়, সে দিকেই নজর সব পক্ষের।
১৬৩ ধারা জারির নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবারই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্স। দ্রুত শুনানির আর্জি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা। সেই আর্জি মঞ্জুর করেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। মঙ্গলবারই বসছে হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। বিচারপতি রবিকিশন কপূরের বেঞ্চে দুপুর ২টো নাগাদ মামলাটির শুনানির কথা রয়েছে।
ধর্মতলার মোড় থেকে শুরু করে রেড রোড, রানি রাসমণি রোডের বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। গোটা এলাকায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি। রেড রোড এবং রানি রাসমণি রোডের একটি করে লেন ঘিরে ফেলা হয়েছে ব্যারিকেডে দিয়ে। রানি রাসমণি রোড ধরে ধর্মতলা থেকে নেতাজি মূর্তির দিকে ডান পাশের লেনে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে পড়ার ছবি ধরা পড়েছে। নেতাজি মূর্তির একেবারে সামনেই বসানো হয়েছে প্রায় ৯ ফুটের ব্যারিকেড। এক মানুষ সমান উঁচু ব্যারিকডগুলিকে গার্ডরেলের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার রানি রাসমণি রোডে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ ডেকেছে জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্স। বিকেল ৪টে থেকে রানি রাসমনিতে জমায়েতের কথা। কিন্তু রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ এবং আশপাশের এলাকায় ১৬৩ ধারা জারি করেছে কলকাতা পুলিশ। মধ্য কলকাতার মোট ৯টি জায়গায় জারি হয়েছে এই বিধি। এর ফলে এক সঙ্গে চার জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy