সে-ক্ষেত্রে বেকসুর খালাস পেলেও সেই মানুষটি ন্যায্য বিচার পেলেন কি না কিংবা এত দিন বন্দি থাকার যন্ত্রণার ক্ষতিপূরণ তিনি পাবেন কি না— প্রশ্ন রয়েই যায়। এই অবস্থায় কলকাতা হাই কোর্টের সাম্প্রতিক এই নির্দেশে অনেক বন্দি এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজন আশার আলো দেখবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতীকী ছবি।
অপরাধ আদৌ করেছেন কি না, বিচার হয়নি। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলে দীর্ঘকাল ধরে বন্দি রয়েছেন বহু মানুষ। তাঁদের পরিচয় ‘বিচারাধীন বন্দি’ হিসেবে। কিন্তু কবে তাঁরা বিচার পাবেন, সেটা তাঁদের কেউই প্রায় জানেন না। আবার নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত অনেকে হাই কোর্টে আপিল করলেও তার শুনানি ক্রমশ বিলম্বিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের জামিনের আবেদনের দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চাইছে কলকাতা হাই কোর্ট।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চ সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, ১৪ বছর বা তার বেশি সময় ধরে জেলে বন্দি আছেন, এমন সকলের জামিনের মামলার তালিকা তৈরি করতে হবে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার (আইটি)-কে। দু’সপ্তাহের মধ্যে সেই তালিকা তৈরি করে জমা দিতে হবে। আদালতের খবর, ১২ এপ্রিল বিষয়টি আবার আদালতে উঠতে পারে।
আদালত সূত্রের খবর, এই নির্দেশের পিছনে রয়েছে একটি জামিনের আর্জি। গুড্ডু মণ্ডল ও বিনোদ কৈরি নামে দুই বন্দি জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। খুনের মামলায় আলিপুর আদালত তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন তাঁরা। মামলাকারীদের আইনজীবী ঋতুপর্ণা দে ঘোষ আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলরা ২০ বছর ধরে জেলে আছেন। জামিনের আর্জি জানালেও অতিমারি পরিস্থিতিতে তার শুনানি হয়নি। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাজা আপাতত স্থগিত রেখে জামিনের আর্জি জানান তিনি। যদিও সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, মামলাকারীদের বিপক্ষে বহু তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, মামলা যা-ই হোক না কেন, ২০ বছর ধরে বন্দি থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান অনুযায়ী ন্যায্য বিচার পাওয়াটা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এ ক্ষেত্রে তা লঙ্ঘিত হয়েছে। সেই দিকটি বিচার করেই শাস্তি আপাতত স্থগিত রেখে ওই দু’জনকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে হাই কোর্ট।
এই নির্দেশের পরে আইনজীবীদের অনেকেই বলছেন, রাজ্যে এই ধরনের বন্দির সংখ্যা কম নয়। আইন অনুযায়ী কোনও আদালতের রায়ের বিপক্ষে উচ্চতর আদালতে যাওয়া নাগরিকের অধিকার। কিন্তু পুনর্বিচারেরআর্জি জানালেও শুনানিতে প্রভূত বিলম্ব হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হাই কোর্ট কিংবা সুপ্রিম কোর্টে বেকসুর খালাস পেলেও তত দিনে কারাগারেই বহু বছর কাটাতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট মামলাকারীকে। সে-ক্ষেত্রে বেকসুর খালাস পেলেও সেই মানুষটি ন্যায্য বিচার পেলেন কি না কিংবা এত দিন বন্দি থাকার যন্ত্রণার ক্ষতিপূরণ তিনি পাবেন কি না— প্রশ্ন রয়েই যায়। এই অবস্থায় কলকাতা হাই কোর্টের সাম্প্রতিক এই নির্দেশে অনেক বন্দি এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজন আশার আলো দেখবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy