ভেঙে পড়েছে অস্থায়ী জেটি।—নিজস্ব চিত্র।
বানের তোড়ে ভেঙে পড়ল জেটি। আর সেই সঙ্গেই গঙ্গায় ভেসে গেলেন জেটির উপর পারাপারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা বহু মানুষ। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। নিখোঁজের সংখ্যাও অনেক। বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে হুগলির ভদ্রেশ্বর লাগোয়া তেলেনিপাড়া ঘাটে।
গঙ্গার এক পাড়ে হুগলির তেলেনিপাড়া ঘাট, অন্য পাড়ে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর ফেরিঘাট। প্রতি দিন এই ঘাট দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু, সেই অর্থে একানে কোনও স্থায়ী জেটি নেই। বাঁশ এবং কাঠের খুঁটি দিয়ে বানানো সাঁকোর মতো অস্থায়ী জেটি রয়েছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই জেটির অবস্থা এমনিতেই নড়বড়ে। কিন্তু, উপায়ন্তর না থাকায় সেই নড়বড়ে সাঁকো পেরিয়েই নৌকায় যাতায়াত করেন যাত্রীরা।
আরও খবর
‘তলিয়ে যাওয়ার এই ছবি সারা জীবন আমায় তাড়া করবে’
দেখুন ভিডিও...
এ দিন সকালেও প্রচুর মানুষ ওই জেটি দিয়ে পারাপার করেছেন। কিন্তু, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হঠাত্ই গঙ্গায় বান আসে। জোয়ারের টান এবং বানের তোড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওই অস্থায়ী জেটি। পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেই সময় ওই জেটিতে প্রায় ৫০-৬০ জন যাত্রী অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকেই ব্যাগ, মালপত্র সমেত ভেসে যান গঙ্গায়।
গঙ্গায় চলছে উদ্ধার কাজ।—নিজস্ব চিত্র।
রাজীব আকুঞ্জি নামে এক শিক্ষক সেই সময় হুগলি থেকে ব্যারাকপুরের বাড়িতে ফিরছিলেন। ফেরি পার হবেন বলে জেটির উপর দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। জেটি ভেঙে তিনিও গঙ্গায় পড়ে যান। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘তখন সওয়া ১১টা হবে। তার আগে প্রায় ৪০ মিনিট কোনও নৌকা ছিল না। কাজেই প্রচুর যাত্রী জেটির উপর ভিড় করেছিলেন। সেই সময় সবে একটি নৌকা শ্যামনগর থেকে এসে ওই জেটিতে দাঁড়িয়েছে, হঠাত্ই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে জেটিটি। আমি জলের ভিতর তলিয়ে যাই।’’ সাঁতার জানেন না রাজীববাবু। কাজেই হেলমেট এবং ব্যাগ নিয়ে কোনও রকমে ভেসে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু, ক্রমশই তলিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় উদ্ধারকারীরা তাঁকে জল থেকে তুলে পাড়ে আনেন।
দেখুন ভিডিও...
ঘাটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নৌকাগুলোকে নিয়েও স্থানীয়েরা উদ্ধারকাজে হাত লাগান। যাঁরা সাঁতার জানতেন, ভরা জোয়ারে অনেক কষ্ট করে তাঁরা কোনও রকমে ঘাটের পাড়ে এসে পৌঁছন। কিন্তু, সাঁতার না জানাদের অনেকেই ডুবে যান। তাঁদের অনেককে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় এ দিন বিকেল পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। শ্যামনগর ঘাটের ইজারাদার সুকমল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা যাত্রীদের জোয়ার এবং বান আসার আগে প্রত্যেক বারই সতর্ক করি। কিন্তু, কেউই সে সব কথায় খুব একটা কান দেন না। এমনিতেই নড়বড়ে সাঁকো, অত মানুষের ভার এবং জলের তোড়ের চাপ নিতে পারেনি। তাই ভেঙে পড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy