Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন সিতাইয়ে

মোবাইলে সিম উধাও, পড়েছিল মদের বোতলও

জামাকাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চার দিকে। পড়ে রয়েছে মদের বোতলও। রক্তাক্ত কিশোরীর দেহটি পড়ে রয়েছে তার মধ্যেই। তার চুলে জড়িয়ে রয়েছে ঘাস। সকালে সেই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল কোচবিহারের দিনহাটার সিতাইয়ের ভোলাচাতড়া গ্রাম। বাড়ির কাছেই কলাবাগানে পড়ে ছিল এলাকার একটি স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী।

ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে আনা হয়েছে পুলিশ কুকুর। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে আনা হয়েছে পুলিশ কুকুর। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

নমিতেশ ঘোষ
সিতাই (দিনহাটা) শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:০০
Share: Save:

জামাকাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চার দিকে। পড়ে রয়েছে মদের বোতলও। রক্তাক্ত কিশোরীর দেহটি পড়ে রয়েছে তার মধ্যেই। তার চুলে জড়িয়ে রয়েছে ঘাস।

সকালে সেই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল কোচবিহারের দিনহাটার সিতাইয়ের ভোলাচাতড়া গ্রাম। বাড়ির কাছেই কলাবাগানে পড়ে ছিল এলাকার একটি স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। তার মাথার নীচে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। সেখানে ক্ষত রয়েছে। পরে তার শ্বাসরোধও করা হয়।

এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেছেন, তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “আমাদের কাছে খুনের অভিযোগ জমা পড়েছে। খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে ধর্ষণের মামলা যোগ করা হবে।” তবে প্রাথমিক ভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ। ওই কিশোরীর এক বন্ধুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সে-ও নাবালক। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কের জেরেই খুন হয়েছে ওই নাবালিকা।

ওই কিশোরীর ঘর থেকে পুলিশ একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে। ওই ফোনে অবশ্য কোনও সিমকার্ড ছিল না। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরী কোনও মোবাইল ব্যবহার করত না। তা হলে কী ভাবে ওই মোবাইলটি তার ঘরে এল, তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশের একাংশের অনুমান, কেউ ওই মোবাইলটি তাকে দিয়েছিল। রাতে ওই মোবাইলে ফোন করেই তাকে বাইরে আসতে বলা হয়। তারপরেই তাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু মোবাইলটির সিম কার্ড খুলে নেওয়া হলেও সেটি কেন দুষ্কৃতীরা নিয়ে গেল না, তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। মোবাইলটির আইএমইআই নম্বর দেখে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোরী বাড়িতে একটি ঘরে একা থাকত। পাশের ঘরে তার দাদা-বৌদি ছোট ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। আর একটি ঘরে তার মা থাকেন। মঙ্গলবার রাত ৯ টা নাগাদ খাওয়াদাওয়া সেরে সবাই ঘুমোতে যায়। কিছু ক্ষণ টেলিভিশন দেখে ওই কিশোরীও নিজের ঘরে চলে যায়। এ দিন সকালে তাঁদের প্রতিবেশী এক আত্মীয়া বাইরে বেরোতেই দেখেন, কলাবাগানে কাছে পড়ে রয়েছে ওই কিশোরী। তিনি বলেন, “প্রথমটায় আমি তার প্যান্টটা দেখতে পাই। তা দেখে অবাক হয়ে যাই। একটু এগিয়ে যেতেই তার রক্তাক্ত দেহ আমার চোখে পড়ে।’’ তিনি জানান, কিশোরীর শরীরে একাধিক ক্ষত ছিল। জামাকাপড় ছিল না। তাঁর চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এবং আশেপাশের বাসিন্দারা সেখানে জড়ো হয়ে যান। ওই দৃশ্য দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। ওই কিশোরীর মা বলেন, “রাতে এক সঙ্গে টিভি দেখেছি। খাওয়াদাওয়া সেরে মেয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। সকালে শুনছি এমন ঘটনা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যারা এমন করল তাদের ফাঁসি চাই।”

ওই ছাত্রীর দাদা, বৌদি-ও কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁরা বলেন, “আমাদের ঘরের সঙ্গেই লাগোয়া ওর ঘর। টিনের চাল। মাঝে হালকা একটি দরজা রয়েছে। একটু চিৎকার হলেই আমরা জানতে পারতাম।’’ তাঁরা জানান, রাতে কোনও চিৎকার শুনতে পাননি।

ওই কিশোরীর এক সহপাঠীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। প্রথমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই নাবালকও দশম শ্রেণির ছাত্র। সে-ও স্থানীয় বাসিন্দা। তার সঙ্গে ওই ছাত্রীর কোনও সম্পর্ক ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কলাবাগানটির কাছেই কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। তাই সেখানে রাতে মদের আসর বসলে, তার শব্দ আশপাশের লোকজনেরা পেতেন। কিন্তু তেমন কোনও আওয়াজই কেউ পাননি। পুলিশের একাংশের ধারণা, মদের বোতলগুলি অন্য জায়গা থেকে এনে ওখানে ফেলে রাখা হয়। কিন্তু কেন তা করা হয়েছে, তার কোনও সদুত্তর তদন্তে মেলেনি।

এ দিন পুলিশ কুকুরও নিয়ে যাওয়া হয় ওই এলাকায়। কুকুরটি এলাকাতেই ঘোরাফেরা করে।

ওই ছাত্রীর ঘর থেকে ডায়েরি সহ কিছু কাগজপত্রও নিয়ে যায় তদন্তকারী অফিসাররা। পুলিশ জানায়, ওই কিশোরী ছোটবেলা থেকেই একটি হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ওই হস্টেলে থাকার সুযোগ রয়েছে। এর পরেই সে বাড়ি চলে যায়। সেখান থেকেই পড়াশোনা করে। তাঁর বাবা বছর দেড়েক আগে মারা যান। তাঁর দাদা ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। সামান্য কিছু চাষের জমি রয়েছে তাঁদের।

অন্য বিষয়গুলি:

teenager sitai gangrape murder namitesh ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE