জমি দরকার সাকুল্যে দেড় হাজার একর। অনেক ঢুঁড়েও তা খুঁজে পায়নি রাজ্য সরকার। তাই হাতছাড়া হতে চলেছে কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন একটি বিমানবন্দর গড়ার প্রস্তাব। অথচ জমি কেনা থেকে বিমানবন্দর নির্মাণ— যাবতীয় কাজ নিজেদের খরচে করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
মরিয়া নবান্নের কর্তারা দিল্লিতে প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন, আরও দূরে কোথাও তৈরি হোক বিমানবন্দর। অথবা তৈরি বিমানবন্দর অন্ডালকে নিজেদের মতো করে গড়ে নিক কেন্দ্র। কিন্তু এই প্রস্তাব কেন্দ্র মানবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ী তাঁরা।
রাজ্যে বড় প্রকল্পের জন্য জমির সমস্যা ফের সামনে এসেছে এই ঘটনায়। মুখ্যমন্ত্রী জমি অধিগ্রহণের বিরোধী। অথচ তিনি বারবার বলেছেন, জমির অভাব হবে না। অনেক ক্ষেত্রে ‘জমি ব্যাঙ্ক’-এর জমি কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতিও শোনা গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে যে তা হচ্ছে না, প্রস্তাবিত বিমানবন্দর ঘিরে এই জটই তার উদাহরণ। রাজ্যের এক শিল্পকর্তা মেনেই নিলেন, ‘‘রাজ্যের হাতে যে বড় শিল্প তৈরির জমি নেই, তা পরিষ্কার। আর কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার পক্ষে সব ঝঞ্ঝাট সামলে একা ওই বিপুল পরিমাণ জমি কেনা প্রায় অসম্ভব।’’
নবান্নের খবর, দ্বিতীয় বিমানবন্দর তৈরির প্রস্তাব মাস দুয়েক আগে রাজ্যকে জানায় কেন্দ্র। বলা হয়, দমদমে বিমান ওঠানামার চাপ (ট্রাফিক) অনেক বেশি। সেই চাপ কমাতেই কলকাতার মতো মেট্রো শহরের আরও একটি পুরোদস্তুর বিমানবন্দর প্রয়োজন। নবান্নের এক কর্তা জানান, কেন্দ্রের ‘রিজিওনাল কানেক্টিভিটি স্কিম’-এর অধীনে বিমান পরিবহণ উন্নয়নে নানা কর্মকাণ্ড শুরু হচ্ছে। তার আগেই ওই প্রস্তাব পাঠিয়েছে কেন্দ্র। তাতে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরের জন্য শুধু জমি চিহ্নিত করে দিক রাজ্য। বাকি সব দায়িত্ব দিল্লির।
কেন্দ্রের প্রস্তাব পেয়ে পরিবহণ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, প্রাণিসম্পদ বিকাশ, কৃষি ও শিল্প পুনর্গঠনের মতো দফতরগুলির সচিবদের নিয়ে একটি কমিটি গড়েন মুখ্যসচিব। গত দু’মাস বেশ কয়েকটি বৈঠক করে কমিটি। তার মধ্যে কল্যাণী থেকে হাবড়া, জয়নগর থেকে সিঙ্গুর— কলকাতার কাছাকাছি জেলাগুলির বিভিন্ন এলাকা চষে ফেলেন সরকারি কর্তারা। কিন্তু নিট ফল শূন্য।
প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বিমানবন্দরের জন্য ৪০০০ একর জমি চাওয়া হয়েছিল। পরে তা কমিয়ে ১৫০০ একর করা হয়। কিন্তু তন্নতন্ন করে খুঁজেও কলকাতার ৫০-৬০ কিলোমিটারের মধ্যে এক লপ্তে জমির সন্ধান মেলেনি।’’ বিকল্প হিসেবে এখন কলকাতা থেকে প্রায় দু’শো কিলোমিটার দূরে অন্ডালের কথা ভাবছে সরকার। রাজ্যের যুক্তি, সড়ক পথে অন্ডাল পৌঁছতে ঘণ্টাতিনেক লাগে। তাই দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে ভেবে দেখতে পারে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy