Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Supreme Court on The Kerala Story

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে নবান্নের নিষেধাজ্ঞায় সুপ্রিম স্থগিতাদেশ, কী প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন মহলে

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আপাতত বাংলায় ছবিটি দেখাতে আর কোনও বাধা নেই। শীঘ্রই রাজ্যের সিনেমা হলগুলিতে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Supreme Court has stayed the order of banning The Kerala Story in West Bengal what are the reactions so far.

‘দ্য কেরালা স্টোরি’তে বাংলার নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ২৩:৩৯
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি এ রাজ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। গত ৮ মে রাজ্যের সেই সিদ্ধান্তের পর বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। নবান্নের ওই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন কেউ কেউ। অনেকেই আবার রাজ্যের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন। নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ‘কেরালা স্টোরি’র নির্মাতারা। তার ১০ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার রাজ্যের ওই নিষেধাজ্ঞার উপর স্থগিতাদেশ দিল শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে রাজ্যের সমালোচনাও করা হয়। ‘সুপ্রিম’ রায়ের পর আপাতত বাংলায় ছবিটি দেখাতে আর কোনও বাধা নেই। শীঘ্রই সিনেমা হলগুলিতে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নানা মহল থেকে নানা রকম প্রতিক্রিয়াও মিলেছে।

তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রসন্ন প্রথম থেকেই মমতার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। শিল্পের উপর সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা তিনি মেনে নিতে পারেননি বলেই জানিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর খুশি শিল্পী। কারও প্রতি ক্ষোভপ্রকাশ না করেই তিনি আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে নিজের ‘আনন্দের কথা’ জানিয়েছেন। একই ভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ, বনি সেনগুপ্তের মতো টলিউড তারকারাও। রাজনৈতিক পরিসরেও সুপ্রিম স্থগিতাদেশ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কুণাল ঘোষ, শমীক ভট্টাচার্যেরা দলের তরফে মতামত জানিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ

বৃহস্পতিবার নবান্নের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিয়ে দেশের শীর্ষ আদালত রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের পর্যবেক্ষণ, এই ছবি নিয়ে রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের আদতে কোনও যৌক্তিকতাই নেই। দেশের সর্বত্র ‘কেরালা স্টোরি’ চলছে। কোথাও তেমন কোনও অশান্তি হয়নি। বাংলাতেও যে তিন দিন ছবিটি চলেছে, কোথাও তেমন কোনও অশান্তির নজির নেই। সিনেমাটি নিষিদ্ধ করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে, মত আদালতের। প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, শুধুমাত্র ভাবনার ভিত্তিতে এ ভাবে মৌলিক অধিকার খর্ব করা যায় না।

বিচারপতিরা কী বললেন

সুপ্রিম কোর্টে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনার সময় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি জেবি পরদিওয়ালা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তাঁরা ছবিটি দেখবেন। তা হলেই এ বিষয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘আমরা বাক্‌স্বাধীনতা রক্ষা করি। কোনও সম্প্রদায়ের অবমাননার অনুমতি দিতে পারি না।’’ এই ছবিতে একাধিক অবমাননাকর মন্তব্য রয়েছে বলে অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় আপাতত স্থগিতাদেশ দিলেও আগামী ১৮ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। তখন ছবিটি দেখার পর এ বিষয়ে বিচারপতিদের কী মত, তা জানা যাবে।

কী বললেন পরিচালক

বাংলায় ‘কেরালা স্টোরি’তে নিষেধাজ্ঞার পর বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেন আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে আক্ষেপ করেছিলেন, ‘‘দিদি তো আমার ছবিটা দেখলেনই না! এক বার ছবিটা দেখে নিয়ে মন্তব্য করলে ভাল হত।’’ নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশের পরেও একই আর্জি জানালেন তিনি। মমতার কাছে পরিচালকের আবেদন, ‘‘দিদি এক বার ছবিটা দেখুন প্লিজ়। আপনারও ভাল লাগবে।’’ তাঁর রাজ্য অর্থাৎ বাংলার মানুষ এই ছবি দেখতে পারবেন বলে ভাল লাগছে, জানান সুদীপ্ত। নিষেধাজ্ঞায় তিনি এত দিন মনঃকষ্টে ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খুশি ছবির পরিচালক।

কবে থেকে বাংলায় দেখা যাবে

পশ্চিমবঙ্গে এই ছবির পরিবেশক শতদীপ সাহা সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনে উচ্ছ্বসিত। তিনি জানান, এই ছবি নিয়ে খুব ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। হল মালিকদের ফোন আসছে বার বার। অনেকেই ছবিটি দেখানোর জন্য উৎসাহ প্রকাশ করছেন। তা হলে আবার কবে থেকে দেখা যাবে এই ছবি? শতদীপ বলেন, ‘‘সবে রায় এসেছে। পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে। তাই ঠিক কবে থেকে দর্শক আবার ছবিটা দেখতে পাবেন, সেটা এখনই বলতে পারছি না।’’ প্রসঙ্গত, শুক্রবার থেকেই ছবির তৃতীয় সপ্তাহ শুরু হবে।

কী বললেন অভিষেক

‘দ্য কেরালা স্টোরি’র নিষেধাজ্ঞার উপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশকে ‘শিরোধার্য’ বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘‘এটা দলের বিষয় নয়। কেরালা স্টোরি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে যা বলার বলেছেন। তাঁর কাছে কিছু তথ্য ছিল। তার পরেও যদি কোর্ট এই রায় দেয়, তবে তা-ই শিরোধার্য।’’

অন্য রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

শীর্ষ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘অশান্তি এড়াতে রাজ্য আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করেছে। সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর এ বার কোথাও কিছু হলে সেটা আর রাজ্যের দায় নয়।’’ মন্ত্রী শশী পাঁজারও বক্তব্য, ‘‘যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীরই তাঁর রাজ্যের মঙ্গলের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। স্থগিতাদেশের পর কী করা হবে, মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবেন।’’ বিজেপি অবশ্য স্থগিতাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আদালতের এই রায় প্রত্যাশিতই ছিল। পশ্চিমবঙ্গের সমাজকে ভাঙতে চায় এই সরকার। তাই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এমন সিদ্ধান্তে সমস্ত মুসলমানকেই মমতা আইসিস জঙ্গিদের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। এ বার সকলে হলে গিয়ে এই ছবি দেখবেন।’’ অনেকে বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্য সরকারের মুখ পুড়েছে। এ প্রসঙ্গে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘সরকারের মুখই তো নেই যে মুখ পুড়বে। প্রতি দিন তারা আদালতে চপেটাঘাত খাচ্ছে।’’ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করেন। তিনি যা বলবেন, তা-ই আইন। সুপ্রিম কোর্ট বিচার করে যা ঠিক মনে হয়েছে বলেছে।’’

কী বললেন শুভাপ্রসন্ন

শিল্পী শুভাপ্রসন্ন অন্য অনেক ক্ষেত্রেই তৃণমূল সরকারের পাশে দাঁড়ান। তবে ‘কেরালা স্টোরি’র উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত হতে পারেননি। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘আমি কোনও শিল্পপ্রচেষ্টার বিরোধিতা পছন্দ করি না। এ ক্ষেত্রেও আমি সমর্থন করতে পারছি না। এর ফলে ছবিটা বেশি প্রচার পেয়ে গেল!’’ মদন মিত্র, কুণাল ঘোষ থেকে শুরু করে সায়নী ঘোষ, অনেকেই মমতা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য শুভাপ্রসন্নকে আক্রমণ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ শোনার পর তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওঁদের কারও প্রতিই আমার ব্যক্তিগত কোনও রাগ নেই। সকলের সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর ওঁরাও বুঝলেন, শুভাপ্রসন্ন বেলাগাম কথা বলেননি।’’

কী বলছে টলিউড

টলিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, কেরালা স্টোরির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরে যাওয়ায় এ বার তিনিও ছবিটি দেখতে যেতে চান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শিল্পের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে না ফেলাই ভাল বলে মনে হয়। ইদানীং ছবির প্রচার ঝলক দেখেই ব্যান স্লোগান শুরু হয়ে যায়। ছবি দেখে বিচার করা উচিত।” কড়া প্রতিক্রিয়া বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষেরও। তিনি সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশকে ‘রাজ্যের গালে সপাটে থাপ্পড়’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রমাণ হল, আমাদের রাজ্যে মগের মুলুক চালানোর যে প্রকল্প নিয়েছে তৃণমূল সরকার, সেটা মানুষের চিন্তা, চাহিদার পরিপন্থী।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy