Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Sukanta Majumdar

সুকান্তের বক্তব্য নিয়ে দলে আলোড়ন, সংগঠন না করে এজেন্সি নির্ভরতা কারা তৈরি করেছিল? প্রশ্ন পদ্মশিবিরেই

ভোট পরবর্তী পর্বে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি যে ছন্নছাড়া, তা দৃশ্যতই স্পষ্ট। সুকান্তের বক্তব্য তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাজ্য নেতাদের পুরনো ভিডিয়ো নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা।

Sukanta Majumdar\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s speech created a stir in Bengal BJP

সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪ ১৭:০৯
Share: Save:

বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য নিয়ে আলোড়ন শুরু হয়েছে দলের মধ্যেই। ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পর সুকান্ত যখন ‘এজেন্সি নির্ভরতা’ ছেড়ে সংগঠন পোক্ত করার কথা বলেছেন, তখন দলেরই জেলা স্তরের নেতাদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, সংগঠনের ভাবনা ছেড়ে সিবিআই, ইডির ‘জুজু’ দেখানোর কৌশল তো রাজ্য স্তরের দু’এক জন নেতাই নিয়েছিলেন! তা হলে তার ‘দায়’ নিচুতলার কর্মীদের উপর চাপিয়ে লাভ কী?

গত রবিবার সুকান্তের কর্মসূচি ছিল হুগলিতে। ওই জেলার পান্ডুয়া এবং হিন্দমোটরে সুকান্ত যা বলেছিলেন, তার অংশবিশেষ ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হিন্দমোটরের সভায় সুকান্তকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘দাদা, সিবিআইকে বলুন একে অ্যারেস্ট করিয়ে দিতে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা জিতে যাব। হবে না! ওকে জেলে ঢুকিয়ে দিন, জিতে যাব। হবে না!’’ এর পরেই উদাহরণ দিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল তো জেলে ছিলেন। আছেন তো জেলে? বীরভূম জিতেছি আমরা?’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি এ-ও বলেন, ‘‘আপনি পরিশ্রম করে যদি সংগঠন তৈরি করতে পারেন, তা হলে জিতবেন। আর যদি পরিশ্রম করে সংগঠন তৈরি করতে না পারেন, যাকে খুশি অ্যারেস্ট করুন, কোনও দিন জিততে পারবেন না।’’

এখানেই প্রশ্ন তুলছেন পদ্মশিবিরের জেলা স্তরের নেতাদের একাংশ। শহর হাওড়ার এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘বিজেপির কর্মীদের মধ্যে ইডি, সিবিআই নির্ভরতা তৈরি করে দিয়েছেন রাজ্য স্তরের গুটি কয়েক নেতা। তাঁরা যে সব ভাষণ দিয়েছেন, তাতে কর্মীরা ভেবেছেন, সব এজেন্সির হাওয়ায় হয়ে যাবে। এখন সংগঠনের দোহাই দিলে কী করে হবে? এ কথা তো আগে তাঁদেরই ভাবা উচিত ছিল।’’ শুধু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নয়, ‘রাজভবন নির্ভরতা’রও তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গে হুগলির এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘এই কথা প্রথম বলা শুরু করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সুকান্তদা অনেক পরে এ সব বলতে শুরু করেছিলেন। তখন অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, রাজ্য সভাপতি আর বিরোধী দলনেতা কি প্রতিযোগিতায় নেমেছেন?’’ রাজ্য বিজেপির এক মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘বিজেপির মতো দলে সংগঠনটাই মৌলিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হল, বাংলায় সেটাই পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে।’’ এই প্রসঙ্গে ওই মুখপাত্রের আরও বক্তব্য, ‘‘সুকান্তদা রাজনীতিতে নবীন। শুভেন্দুদা সংসদীয় রাজনীতিতে পোড়খাওয়া হলেও বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে তাঁর সম্যক ধারণা নেই। ভোট এবং সংগঠন যে পরস্পরের পরিপূরক, সেই বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে খামতি থেকে গিয়েছে।’’

বিভিন্ন পুরনো ভিডিয়ো দেখিয়ে বিজেপির অনেক নেতা বলছেন, শুভেন্দু-সুকান্তেরাই ইডি-সিবিআই নিয়ে ‘চমকানো’র রাজনীতি করেছিলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা কী হবে, সে ব্যাপারে আগাম অনেক কিছু বলেছিলেন। তাতে দলের একটা অংশ উজ্জীবিত হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু ভোটে জেতার মতো সংগঠন তৈরি হয়নি। আবার বিজেপি নেতৃত্বের অনেকে এ-ও বলছেন, যেখানে সংগঠন শক্তিশালী, সেখানে ভোটে এ বারও জয় এসেছে। সেখানে ইডি, সিবিআই লাগেনি।

গত রবিবার পান্ডুয়ার সাংগঠনিক বৈঠকে সুকান্তের বক্তব্য ছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করিয়েও কিছু হবে না। কর্মীদেরই আরও সক্রিয় হতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। তবে সেটা বিরিয়ানির মশলার মতো। বিরিয়ানির চাল আর মাংস দলের কর্মীদেরই হতে হবে। তবেই ভাল বিরিয়ানি হবে।’’ এই প্রসঙ্গেই শুভেন্দুর একটি পুরনো ভিডিয়োর উল্লেখ করছেন বিজেপি নেতাদের অনেকে। যেখানে বিরোধী দলনেতাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘১৫ মিনিটের মধ্যে আধা সামরিক বাহিনীকে দিয়ে যদি ডান্ডার মার খাওয়াতে না পেরেছি, আমার নাম শুভেন্দু অধিকারী নয়।’’ সুকান্ত-শুভেন্দু দু’জনের মুখেই একাধিক সময়ে ‘যোগী আদিত্যনাথের মডেল’, ‘এনকাউন্টার’ ইত্যাদি শব্দ শোনা গিয়েছে। যা অনেকের কাছেই ‘ফাঁপা’ মনে হচ্ছে। কেউ কেউ এ-ও বলছেন, ওই সব কথাকে অনেকে ‘ঔদ্ধত্য’ হিসেবে দেখেছেন।

ভোট-পরবর্তী পর্বে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি যে ছন্নছাড়া, তা দৃশ্যতই স্পষ্ট। সুকান্তের বক্তব্য তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ওই প্রসঙ্গ এখন এতটাই ‘স্পর্শকাতর’ যে, আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়াও জানাতে চাননি রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য সভাপতির কোনও বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার এক্তিয়ার আমার নেই।’’ অনেকের মতে, সুকান্তের বক্তব্য যদি ‘বিতর্কিত’ না হত, দলে যদি আলোড়ন না ফেলত, তা হলে শমীক প্রতিক্রিয়া দিতেন। যেমন তিনি দিয়ে থাকেন। কিন্তু যে হেতু বিষয়টি নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তাই শমীক বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন। বস্তুত, তিনি পরোক্ষে সুকান্তের কোর্টেই বল ঠেলে দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য।

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপির উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শুভেন্দু বাংলা থেকে বিজেপিকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাতে সঙ্গত করছেন সুকান্ত। আমরা আগেই বলেছিলাম, ইডি-সিবিআইকে তাদের শাখা সংগঠনে পরিণত করেছে বিজেপি। সুকান্তের কথায় সেটাই আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sukanta Majumdar BJP Leader West Bengal BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE