শুভেন্দু অধিকারি
আসন পিছু দাবিদার অনেক। যাঁকেই টিকিট দেওয়া হোক না কেন, বাকিরা রেগে যাবেন। তাতে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী তাই মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে দলের কর্মীদের সমাবেশে বলে দিলেন, ‘‘বিধানসভায় যাঁরা টিকিট পাবেন না, তাঁরা চিন্তা করবেন না। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের লোকসভা, পুরসভা, পঞ্চায়েত, সমবায় বা জেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী করবেন।’’
যা শুনে খোদ তৃণমূলেই কর্মী সমর্থকেরা হতবাক। পুরসভা, পঞ্চায়েত বা সমবায় না হয় বোঝা গেল। কিন্তু লোকসভায় তো আসন অনেক কম। বিধানসভা ভোটেই যাঁকে টিকিট দেওয়া যাচ্ছে না, তাঁকে কী করে লোকসভায় দাঁড় করাবে দল? জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দুবাবু যা বলেছেন, তা হাস্যকর। তাঁর কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কতটা তীব্র। যা চাপা দিতে নেতারা মরিয়া হয়ে বাজে কথা বলছেন।’’ তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘এই ভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত হচ্ছে না। শুভেন্দুবাবু আসলে বলতে চেয়েছেন, যাঁরা যোগ্য তাঁদের দল নানা সুযোগ করে দেবে।’’
তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীই কিন্তু তাতে ভুলছেন না। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, এক একটি আসনের দাবিদার অন্তত ছ’জন। কাকে ছেড়ে কাকে টিকিট দেওয়া হবে, সেই দুশ্চিন্তায় নেতাদের রাতের ঘুম গিয়েছে। সকলেই ভাবছেন, এক জনকে টিকিট দিলে বাকিরা না অভিমান করে দল ছেড়ে চলে যান। দলে থেকেও বিক্ষুব্ধরা দলবিরোধী ভূমিকা নিতে পারেন।
শুভেন্দুবাবুর কথাতেও সেই ইঙ্গিত রয়েছে। কোন কোন পদে দলের স্থানীয় নেতাদের প্রার্থী করা যেতে পারে, তার একটি বড় তালিকাই এ দিন দিয়েছেন তিনি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাঙ্ক সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পরিচালন কমিটিতেও দলের নেতাদের পাঠানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তার পরে তমলুকের সাংসদের পরামর্শ, ‘‘তাই বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে কোনও নেতা যাতে অভিমান করে দল থেকে চলে না যান, তা আপনাদের সকলকে দেখতে হবে।’’
যে কথার পরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলে কোনও নীতি নেই। পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করেই দল ধরে রেখেছেন তাঁরা। যে কারণেই শুভেন্দুবাবুকে এমন সব কথা বলতে হচ্ছে।’’ তৃণমূল অবশ্য সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন।
তৃণমূল সূত্রেই খবর, এই জেলার হেমতাবাদ ও করণদিঘি আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে গত তিন মাস ধরে একাধিক নেতা ও তাঁদের অনুগামীদের মধ্যে বিরোধ চলছে। হেমতাবাদ কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার দাবিদার ছ’জন। করণদিঘি কেন্দ্রেও অবস্থা এক রকম। এ দিন শুভেন্দুবাবুকেও দেখা যায়, বিরোধী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলে বিভেদ ঘোচানোর চেষ্টা করতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy