চলছে অনলাইন সেশন। ছবি: স্ক্রিন গ্র্যাব।
অতিমারি পরিস্থিতিতে জীবনযাত্রা বদলে গিয়েছে সাধারণ মানুষের। টান পড়েছে রোজগারেও। পুজো-পার্বণ ছাড়াও সারা বছর যাঁরা কেনাকাটা করতেন, তাঁরাও এখন জল মেপে চলছেন। তাই আনলক পর্বে দোকান-বাজার, শপিং মল খুলে গেলেও, খাঁ খাঁ করছে চারিদিক। গ্রামে তাঁতশিল্পীদের অবস্থা আরও করুণ। এমনি সময়ে পুজোর আগে কাজের বরাত মিলত, করোনা আবহে এ বার হাত একেবারে খালি। এমন পরিস্থিতিতে তাঁতশিল্পকে চাঙ্গা করতে, বিশেষ করে তার সঙ্গে জড়িত মহিলাদের আত্মনির্ভর করে তুলতে উদ্যোগী হল কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই)। পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে গ্রাহকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কী ভাবে কাজ করা যায় এবং বাংলার মহিলাদের কী ভাবে ডিজিটাল নির্ভর করে তোলা যায়, তা নিয়ে বিশেষ ভার্চুয়াল সভা আয়োজিত হল।
সিআইআই-এর ইন্ডিয়ান উইমেন নেটওয়ার্কের (আইডব্লিউএন) মাধ্যমে বাংলার মহিলা তাঁতশিল্পীদের ১৪ অগস্ট বুধবার এই ভার্চুয়াল সভার আয়োজন হয়। তাতে অংশ নেন বাংলায় সিআইআই অধীনস্থ আইডব্লিউএনএর চেয়ারম্যান সুচরিতা বসু, কলকাতা লিটারেরি মিটের ডিরেক্টর মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্ব বাংলার ক্যাটেগরি ম্যানেজার ময়ূখী বসাক, GoCoop.com-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিব দেবীরেড্ডি, ফ্যাশন ডিজাইনার কিরণউত্তম ঘোষ, নীল-সহ আরও অনেকে। মূলত দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে, ক)হ্যান্ডলুম ফ্যাশন এবং খ)লাক্সারি ফ্যাশন। অতিমারি পরিস্থিতিতে মানুষ যখন খরচে লাগাম টেনেছেন, সেই পরিস্থিতিতে হ্যান্ডলুম ইন্ডাস্ট্রিকে কী ভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় তা নিয়ে কথা হয় সেখানে। মহামারির প্রকোপে লাক্সারি সংস্থাগুলি যে ধুঁকছে তা-ও উঠে আসে ওই আলোচনায়।
অতিমারির প্রকোপের মধ্যেও হ্যান্ডলুম ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে গেলে সর্বপ্রথম সকলের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, তাঁরা যাতে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন, তার জন্য তাঁতশিল্পীদের সমান সুযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্রাহকের নতুন নতুন চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। হ্যান্ডলুম সম্পর্কে তাঁদের আরও জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে পা মেলাতে হবে ডিজিটাল জগতের সঙ্গেও। ময়ূখী বসাক জানান, তাঁত শিল্পীরা যত টেক স্যাভি হয়ে উঠবেন, ততই গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠবে তাঁদের। বাজারে কোন জিনিসের চাহিদা রয়েছে, কোনটির নেই তা বোঝা যাবে। গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই অনেক কিছু শিখতে পারবেন তাঁরা। লকডাউনের সময় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মগুলি এই কাজে অনেকটা সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন শিব দেবীরেড্ডি।
তেমনই ফ্যাশন দুনিয়ায় মহিলাদের অবদানের কথা তুলে ধরেন সুচরিতা বসু। তিনি বলেন, ‘‘ফ্যাশন দুনিয়ার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন মহিলারা, সে শিল্পীই হোন বা গ্রাহক। নিজের দক্ষতায় যাঁরা ব্যবসা শুরু করেছেন সেই বড় অংশের মহিলাদের কথাও ভুললে চলবে না। আইডব্লিউএন বরাবরই সকলের অন্তর্ভুক্তি এবং বৈচিত্রের উপর জোর দিয়ে এসেছে।’’
আরও পড়ুন: স্নাতকে ভর্তি ফি মকুবেরও দাবি বাম পড়ুয়াদের
সভার দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচিত হয় লাক্সারি ফ্যাশনের উপর নেমে আসা করোনা নামক গ্রহণের ফলাফল নিয়ে। বলা হয়, লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলিকে টিকিয়ে রাখতে গেলে সেখানে কর্মরত সকলের কথাও মাথায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা যেমন সতর্কতা অবলম্বন করছেন, সমস্ত অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সমস্ত কর্মীদের বিপদ সম্পর্কেও সচেতন করতে হবে বলে জানান কিরণউত্তম ঘোষ। তাঁর দাবি, পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন, মানুষ চিরকালই জামা-কাপড় কিনবেন। তার জন্য ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। চিরকাল মানুষ ভাল জামা-কাপড়ের প্রতি টান থাকবে মানুষের। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি শ্রমিক নির্ভর, তাই শ্রমিকদের অর্থনৈতিক দিকটায় নজর দিতে হবে বলে মত নীলের।
আরও পড়ুন: আয়ের পথ খুঁজতে জমি ব্যবহার রেলের
করোনা কালে বিয়ে এবং অন্যান্য উৎসবে ভাটা পড়েছে। তাই ডিজাইনার জামা-কাপড়ের চাহিদাও কমে গিয়েছে একধাক্কায়। তাই এই সময় দামি জামাকাপড় কিনে আলমারি বোঝাই করার চেয়ে, সাধ্যের মধ্যে অথচ ভাল মানের পোশাক জামা-কাপড় কেনাতেই মানুষ বেশি আগ্রহী বলে জানান নীল। লকডাউনের জেরে গত কয়েক মাসে অনলাইন ফ্যাশন শো আয়োজন করতে দেখা গিয়েছে একাধিক সংস্থাকে। তবে মানুষের কাছে পৌঁছতে হলে জামা-কাপড়ের ওয়েবসাইটগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে বলে মত তাঁর, যাতে কেনার আগে পোশাক সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে নিতে পারেন গ্রাহক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy