দায়ী কারা? দায় কার?
উত্তর নেই।
অন্তত ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি খোয়ানোর দায় কার্যত কেউই নিচ্ছেন না।
কারা যোগ্য এবং কারা অযোগ্য, তা বাছাই করতে না-পারার ফলেই কি এত জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে চাকরি হারাতে হল? এই প্রশ্নের উত্তরে শুক্রবার এসএসসি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, তাঁরা যোগ্য এবং অযোগ্যদের চিহ্নিত করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের দেওয়া তথ্যে হয়তো সুপ্রিম কোর্ট সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তাই চাকরি খোয়ানোর দায় তাঁরা কী ভাবে নেবেন? অথচ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, ‘নিয়োগে অনিয়মের তথ্য ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও স্কুল সার্ভিস কমিশন তার খামতি ও অনিয়ম ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই ধামাচাপার ফলে (যোগ্য-অযোগ্যদের) যাচাই ওচিহ্নিত করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিটি স্তরে ক্যামোফ্লাজ ও কারচুপির ফলে তা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
অন্য দিকে, চাকরিহারারা এখন আর স্কুলে যাবেন কি না, তাঁদের বেতন হবে কি না, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে বিজ্ঞপ্তি কবে বেরোবে, এত সংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যাওয়ায় স্কুলগুলি কী ভাবে চলবে— এমন অনেক প্রশ্ন করার আগেই সাংবাদিক বৈঠক ছেড়ে চলে গেলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
এ দিন দুপুরে বিকাশ ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন ব্রাত্য। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে বিশদে সব বলেছেন। আমার আর বিশেষ কিছু বলার অবকাশ আছে বলে মনে করি না। আমি বিভাগীয় দায়িত্বের জায়গা থেকে বলতে পারি, যাঁরা বঞ্চিত এবং যোগ্য, তাঁদের পাশে থাকব।’’ সেই সঙ্গেই ব্রাত্য বলেন, ‘‘যোগ্য এবং অযোগ্য এসএসসি আলাদা করতে পারেনি, তা নয়। বরং বলা যায়, সুপ্রিম কোর্ট সেই তথ্যে সন্তুষ্ট হয়নি।’’ রায়ের রিভিউ পিটিশন করা হবে কি না, জানতে চাওয়া হলে ব্রাত্য বলেন, ‘‘সেটা এসএসসি বলবে। এসএসসি আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবে। আমাদের কাছে যদি সাহায্য চায়, তা হলে আমরা আইনি পরামর্শ দেব।’’
কিন্তু প্রশ্ন আরও একাধিক ছিল। ২০১৬-র প্যানেলের শিক্ষকেরা এ দিন থেকে কী করবেন? স্কুলে যাবেন, না কি যাবেন না? কারণ, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও নির্দেশ আসেনি। তাঁরা চাকরি বাতিল বলে ঘোষণা করার আগে পর্যন্ত শিক্ষকদের কী করণীয়? চলতি মাসের বেতন কি পাবেন শিক্ষকেরা? চাকরিহারা পরীক্ষকেরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের যে সমস্ত খাতা দেখলেন, সেগুলির মূল্যায়ন কি অবৈধ? তা হলে খাতার পুনর্মূল্যায়ন হবে কি? এই সব নিয়ে কেন কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হচ্ছে না? কিন্তু এ সব প্রশ্ন করার আগেই ব্রাত্য সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে যান।
যদিও পরে বিকাশ ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্কুল সার্ভিস কমিশন যত ক্ষণ না শিক্ষকদের সুপারিশপত্র বাতিল করছে এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগপত্র বাতিল করছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে, কেউ যদি মনে করেন যে, তিনি স্কুলে যাবেন না, সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত।’’ চাকরিহারা শিক্ষকেরা এ মাসের বেতন পাবেন কিপাবেন না, সে বিষয়ে বিকাশ ভবনের ওই কর্তা বলেন, ‘‘নিয়োগপত্র বাতিল হওয়ার আগেই শিক্ষকদের বেতন বন্ধ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কী ভাবে?’’ যদিও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বিজ্ঞপ্তি জারির দাবি করেছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। তাদের মতে, শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়া বা না যাওয়া, তাঁরা বেতন পাবেন কি না, এই সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্রুত বিজ্ঞপ্তি জারি করা দরকার। না হলে ধোঁয়াশা ক্রমেই বাড়ছে। কবে বেরোবে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি? শিক্ষামন্ত্রী চাকরিহারাদের পাশে থাকার কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতেদেখা যায়নি।
ব্রাত্যের আগে সাংবাদিক বৈঠক করেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার।সিদ্ধার্থ বলেন, ‘‘আমরা শীর্ষ আদালতের রায় পেয়েছি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি। কিন্তু তার আগে আমাদের কিছু সংশয় মেটানো দরকার। সেই সমস্ত বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিয়ে তার পরে এক সপ্তাহ বা দু’সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত কাজ শুরু করতে হবে।’’ স্কুল সার্ভিস কমিশন অযোগ্যদের তালিকা ঠিক মতো দিতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। যার উত্তরে সিদ্ধার্থ বলেন, ‘‘এই অভিযোগ মেনে নিতে পারছি না। আমরা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টে যোগ্য-অযোগ্যের তথ্য অনেক বার দিয়েছি। সেই তথ্যে সুপ্রিম কোর্টকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি, সেটা অন্য প্রশ্ন।’’ সিদ্ধার্থ জানান, চাকরিহারারা কেউ যদি পুরনো চাকরিতে ফিরে যেতে চান, তা হলে তাঁকে সব তথ্য দিয়ে তা জানাতে হবে।
নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে কত দিনে তা সম্পন্ন হবে? সিদ্ধার্থ জানান, কত জন প্রার্থী পরীক্ষা দেবেন, তার উপরে বিষয়টি নির্ভর করছে। ২০১৬ সালে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ মিলিয়ে প্রায় তিন লক্ষ প্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আর গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি মিলিয়ে পরীক্ষায় বসেছিলেন ১৮ লক্ষের মতো। মোট ২২ লক্ষ প্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এ বারও যদি এই সংখ্যক প্রার্থী আবেদন করেন, তা হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেসময় লাগবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)