স্কুলের দু’জন গ্রুপ ডি এবং দু’জন করণিক মিলে চার জন কর্মী ছিলেন। সকলেরই চাকরি বাতিল হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্কুলের ঘণ্টা বাজানো, দফতরে বিভিন্ন কাজ করার লোক নেই শিলিগুড়ির দেশবন্ধু বিদ্যাপীঠ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। শুক্রবার ওই কর্মীরা স্কুলেও আসেননি। ফলে, স্কুলের ঘণ্টা বাজানোর লোক নেই। প্রধান শিক্ষিকা সুদেষ্ণা মিত্র মিডডে মিলের রান্নার দিদি’দের অনুরোধ করে ঘণ্টা বাজাতে বললেন। কিন্তু তারা তো আর প্রতিদিন ঘণ্টা বাজাবেন না। তা ছাড়া, জলপাইগুড়ি স্কুল পরিদর্শকের অফিসের অধীনে স্কুলটি। তাই নানা কাজে কর্মীদের সেখানে নথিপত্র দিয়ে পাঠাতে হয়। সে সব কে করবেন, তা নিয়ে বিপাকে কর্তৃপক্ষ। কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর সাইকেল দেওয়ার মতো প্রকল্পের কাজ কোন কর্মীরা দেখবেন? সব ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ দিন থেকে এমন সমস্যা শুরু হয়েছে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন স্কুলেই।
জলপাইগুড়ির শহরতলির একটি স্কুলে এক সঙ্গে ছ’জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেই ছ’জনের কাজ সামলে দিয়েছেন এ দিন। শহরের কোনও স্কুলে এক জন, কোথায় তিন জন শিক্ষকের চাকরি বরখাস্ত হয়েছে। জলপাইগুড়ির অরবিন্দ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (উচ্চ মাধ্যমিক) প্রধান শিক্ষক ক্ষৌণীষ গুহ বলেন, “এখন না হয় পরীক্ষা চলছে। ক্লাস শুরু হলে কী করব? আমাদের স্কুলে অঙ্কের দু’জন শিক্ষক ছিলেন। এক জন রইলেন না। এক জন অঙ্কের শিক্ষক দিয়ে গোটা স্কুলের পড়ুয়াদের শেখানো যাবে?”
শিলিগুড়ি নীলনলিনী স্কুলে তিন জন শিক্ষাকর্মী-সহ শিক্ষক মিলিয়ে ১১ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। অধিকাংশ এ দিন স্কুলে আসেননি। স্কুলে পরীক্ষা চলছে। শিক্ষকের অভাবে সমস্যায় পড়তে হবে বলে জানান প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমী দত্ত। শিলিগুড়ি নেতাজি বয়েজ় হাই স্কুলে রসায়নের শিক্ষক প্রধান শিক্ষক ছাড়া আর এক জন ছিলেন। রসায়নের শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। প্রধান শিক্ষক রাজীব ঘোষ বলেন, ‘‘স্কুলের সব কাজ করে এখন আমাকে ক্লাসও নিতে হচ্ছে। ক্লাস তো বন্ধ করা যাবে না।’’
শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের কয়েক জনের দাবি, এমনিতেই গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের সংখ্যা কম। নকশালবাড়ি নন্দপ্রসাদ হাইস্কুলে ছ’জন শিক্ষকের নাম বালিতের তালিকায় রয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীতিশ ঘোষ বলেন, ‘‘বিজ্ঞান বিভাগ একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল। কী ভাবে ক্লাস হবে বুঝতে পারছি না।’’ খড়িবাড়ি হাইস্কুলের ক্ষেত্রেও একই দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষিকা সাধনা সাহা। তারকনাথ সিন্দুরবালা বালিকা বিদ্যালয়ে দু’জন গ্রুপ-সি কর্মী ছিলেন। দু’জনেই বাতিলের তালিকায়। শিক্ষকদের ক্লার্কের কাজ করতে হয়েছে বলে দাবি প্রধান শিক্ষকের সঞ্চিতা সরকারের। বিধাননগরের মুরালিগঞ্জ হাইস্কুলে সাত জন শিক্ষক বাতিলের তালিকায়। প্রধান শিক্ষক সামসুল আলমের কথায়, ‘‘কারা বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস করাবেন বুঝতে পারছি না। গ্রামের স্কুলগুলিতে সাধারণ ঘরের পড়ুয়ারাই বেশি পড়েন। এ বার তাদের শিক্ষাতেই প্রভাব পড়ল।’’
সহ প্রতিবেদন: নীতেশ বর্মণ
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)