Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2022

কড়ি ফেললে নিমেষে দুর্গা দর্শন, না হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে ‘লম্বা’ লাইনে!

ফেলো কড়ি, মাখো তেল। এই প্রবাদ কি আক্ষরিক অর্থেই মিশে গিয়েছে দুর্গাপুজোর সঙ্গে? রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি পুজো মণ্ডপ ঘুরে অন্তত এমনটাই অভিজ্ঞতা দর্শনার্থীদের একাংশের।

ভিআইপি পাসে ঠাকুর দেখানোর নাম করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ।

ভিআইপি পাসে ঠাকুর দেখানোর নাম করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২২ ১৮:০৬
Share: Save:

ফেলো কড়ি, মাখো তেল। এই প্রবাদ কি আক্ষরিক অর্থেই মিশে গিয়েছে দুর্গাপুজোর সঙ্গে? রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি পুজো মণ্ডপ ঘুরে অন্তত এমনটাই অভিজ্ঞতা দর্শনার্থীদের একাংশের। তাঁদের অভিযোগ, পুজো প্যান্ডেলে সাধারণ দর্শকদের লাইনে অনর্থক ভিড় তৈরি করে রাখা হচ্ছে, তার বদলে ‘ভিআইপি লেন’ দিয়ে ঠাকুর দেখানোর নাম করে দর্শকদের থেকে টাকা কামানোর বন্দোবস্ত করছে পুজো কমিটিগুলির একাংশ।

পুজো দেখতে গেলে কি ‘গৌরী সেন’ হতে হবে? কটাক্ষের সুরে এমনটাই বলছেন বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নদিয়ার কেচুয়াডাঙায় পুজো দেখতে যাওয়া তেহট্টের বাসিন্দা অলক সেন (নাম পরিবর্তিত)। অলকের অভিযোগ, ‘‘কেচুয়াডাঙা দিশারী সঙ্ঘের পুজো উদ্যোক্তারা প্যান্ডেলের সামনে কৃত্রিম ভিড় তৈরি করে দর্শনার্থীদের লাইন ক্রমশ লম্বা করছেন। আর সেই সুযোগে কমিটির সদস্যরা ভিআইপি পাসের নামে টিকিট বিক্রি করে টাকা কামাচ্ছেন। আর যাঁরা টাকা দিতে পারছেন না তাঁদের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে লম্বা লাইনে।’’

একই অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছেন দর্শনার্থীদের একাংশ। তাঁদের মতে, এটা ব্যতিক্রমী কোনও ঘটনা নয়। বহু জায়গাতেই কিছু পুজো কমিটি ‘অনৈতিক ভাবে’ টাকা উপার্জন করে। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, এ ভাবেই যদি দর্শনার্থীদের থেকে পয়সা নেওয়া হয়, তা হলে আর পুজোকে ‘সর্বজনীন’ হিসাবে প্রচার করা কেন? কেচুয়াডাঙা দিশারী সঙ্ঘের পুজো উদ্যোক্তারা অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন। দিশারী সংঘের সম্পাদক নিলয় সাহা বলেন, ‘‘প্রতি বছর বাজেট বাড়ছে। সেই তুলনায় স্পন্সারদের সংখ্যা বাড়াতে পারছি না। ইচ্ছে না থাকলেও এক প্রকার বাধ্য হয়ে এই সিস্টেম চালু করা হয়েছে। তবে যাদের সামর্থ নেই, তাঁদের জন্যও তো ব্যবস্থা আছে। অসুবিধা কোথায়? আমরা তো কাউকে বাধ্য করছি না।’’

বহরমপুর সংলগ্ন আয়েসবাগের একটি পুজোয় ঠাকুর দেখার আশায় সর্বসাধারণের জন্য নির্দিষ্ট লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন রকি হালদার। কিন্তু রাত ১০টা থেকে ভোর ৩টে অবধি লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর কথায়, ‘‘রাত ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। খুব ধীরে ধীরে লাইন এগোচ্ছিল। ভাবছিলাম ঘণ্টা দুয়েক দাঁড়ালেই হয়তো ঠাকুর দেখার সুযোগ পাব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হল না। যাঁরা ২০০ টাকা খরচ করতে পেরেছেন তাঁরা মিনিট পনেরোর মধ্যে ঠাকুর দেখে ফিরে গিয়েছেন। তাই এ বারের মতো আমার আর আয়েসবাগের ওই পুজোর ঠাকুর দেখা হল না।’’

প্রায় একই রকম চিত্র হুগলির ব্যান্ডেলের একটি পুজো প্যান্ডেলেও। সেখানেও প্যান্ডেল এবং প্রতিমা দেখার জন্য দর্শনার্থীদের দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। অনেকেরই বক্তব্য, তাড়াতাড়ি পুজো দেখানোর নাম করে ঘুরপথে যে ভাবে টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া চলছে তার পর সরকারি সাহায্য নেওয়া বা ‘সর্বজনীন’ কথাটা লেখার অধিকার আর পুজো কমিটিগুলির নেই। উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির একটি পুজো প্যান্ডেলে এমনি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া প্রাক্তন শিক্ষক রমেশ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কী আর করি বলুন, আমাদের মতো প্রবীণদের এত ক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর তো আর সামর্থ নেই।’’

আবার মালদহের ইংরেজবাজারে সস্ত্রীক ঠাকুর দেখতে বেরোনো বেসরকারি সংস্থার কর্মী অনুপ ঘোষের কথায়, ‘‘এ তো রীতিমতো প্রেস্টিজ ইস্যু মশাই! বউ-শালিকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে এসেছি। লম্বা লাইনে যদি ঠাকুর দেখাই, তা হলে বলবে, ‘হাড়কিপটে’। তাই বাধ্য হয়েই কড়কড়ে ২০০ টাকার নোট গুনে মোট ৬০০ টাকা দিয়ে তিন জনে ঠাকুর দেখে ফিরলাম। এ বার তো দেখছি ঠাকুর দেখার টিকিট কাটার জন্য আলাদা বাজেট করতে হবে।’’

পুজো উদ্যোক্তারাও পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন। এমনই একটি পুজো কমিটির এক কর্তা যেমন যুক্তি দিলেন, ‘‘সরকারি সাহায্য পাওয়ার পর অনেকেই আমাদের চাঁদা দিতে চাইছেন না। কিন্তু আমাদেরও তো কিছু করার নেই। বাজেট দিন দিন বাড়ছে। তাই এ ভাবে ...’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy