ভবানীপুরে সিপিএমের নতুন কার্যালয়। —নিজস্ব চিত্র।
আগামী বছরেই বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে সিপিএমের একটি নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধন হল। বুধবার সন্ধ্যায় ভবানীপুর এরিয়া কমিটি ১-এর নতুন পার্টি অফিসটির উদ্বোধন করলেন প্রবীণ সিপিএম নেতা তথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। নতুন এই এরিয়া কমিটির অফিসে কাজ হবে ৬৩, ৭০,৭১ এবং ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকেই ভবানীপুর বিধানসভায় প্রভাব বেড়েছে বিজেপির। আর ততই তলিয়ে গিয়েছে সিপিএম। কিন্তু ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে আবারও হারানো ভোট ব্যাঙ্ক ফিরে পেতে চায় তারা।
সেই পদক্ষেপের অঙ্গ হিসাবে ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের লোকাল কমিটির অফিসটিকে নতুন করে তৈরি করে ভবানীপুর এরিয়া কমিটি-২-এর পার্টি অফিস করা হয়েছে। গত বছর নভেম্বর মাসেই ভবানীপুর এরিয়া কমিটি ভেঙে দু’টি পৃথক কমিটি করা হয়েছে। কালীঘাট পটুয়াপাড়ার অফিসকে ভবানীপুর এরিয়া কমিটি ১-এর অফিস করা হয়েছে। গত ১০ বছরে ধারাবাহিক কয়েকটি নির্বাচনে ৬৩, ৭০,৭১ এবং ৭২ ওয়ার্ডে ব্যাপক হারে ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি। গত লোকসভা ভোটেও এই চারটি ওয়ার্ডেই বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী এগিয়ে গিয়েছিলেন। তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও অনেক কম ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম। তবে নতুন এরিয়া কমিটি গঠন করে বিজেপির বাক্সে চলে যাওয়া ভোট নিজেদের ঝুলিতে আনতে তৎপর সিপিএম।
২০২১ সালে ভবানীপুর উপনির্বাচনে বামফ্রন্টের প্রার্থী তথা সিপিএমের আইনজীবী নেতা শ্রীজীব বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষের সঙ্গে ভবানীপুরের মানুষও তৃণমূল বিজেপির সেটিং রাজনীতি দেখছে। দিল্লি থেকে শুরু করে আরজি কর-কাণ্ডে সব ক্ষেত্রেই সেই সেটিং তত্ত্ব দেখে মানুষ বিরক্ত। তাই এখন বামেরাই বিকল্প শক্তি হিসাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। সেই বার্তা নিয়েই আমরা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে অনেক পিছনে ফেলে মুখ্যমন্ত্রীকে হারাতে চাই। সেই লক্ষ্যেই নতুন এরিয়া কমিটি গঠনের কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা নতুন অফিস তৈরি করে কাজ শুরু করলাম।’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যে বিজেপিই এখন প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু তা সত্ত্বেও দক্ষিণ কলকাতায় এখনও বিজেপির সংগঠন সে ভাবে দানা বাঁধেনি। ভবানীপুর বিধানসভার সব ওয়ার্ডে বিজেপির ভাল ভোট থাকলেও, সর্বত্রই সাংগঠনিক ‘দুর্বলতা’ প্রকট বলেই মত বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। পদ্মশিবিরের সেই ‘দুর্বলতা’-কে কাজে লাগিয়েই রাজনৈতিক জমি দখলের কৌশল নিয়েছে সিপিএম। ভবানীপুরের এই ওয়ার্ডগুলিতে বিজেপির ভোট থাকলেও, সংগঠনের অবস্থা ছন্নছাড়াই, এমনটাই জানাচ্ছেন জেলা বিজেপির এক নেতা। আর বিজেপির এমন ছন্নছাড়া সাংগঠনিক অবস্থার কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে বিরোধী ভোটে ভাগ বসাতে নেমেছে কৌশলী সিপিএম। যে ওয়ার্ড নিয়ে সিপিএমের এই এরিয়া কমিটি তৈরি হয়েছে, তা বিজেপির ভবানীপুর-২ নম্বর মণ্ডলের অধীনে। এই মণ্ডলে প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সভাপতি রয়েছেন সঞ্জিতকুমার শর্মা। তাঁর নেতৃত্বে ‘দুর্বলতা’ ধরা পড়েছে সিপিএমের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায়। তবে সিপিএমের নতুন পার্টি অফিস গড়ে বিজেপির ভোটবাক্সে ভাগ বসানোর কৌশল আদৌ কার্যকরী হবে না বলেই দাবি করছেন তিনি। ভাঙা ভাঙা বাংলায় বিজেপির এই মণ্ডল সভাপতি বলেন, ‘‘সিপিএম এখন কোথায় আছে? সারা ভারত থেকে উঠে গিয়ে, শুধুমাত্র কেরলে বেঁচে আছে। সেখানেও আগামিদিনে তারা পরাজিত হবে। আর যে সেটিংয়ের কথা সিপিএম বলছে, তা বাংলার মানুষ বিশ্বাস করে না, তা লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ফলাফল দেখেই মানুষ বুঝে গিয়েছেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সিপিএম যদি আমার দলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তবে তার দায় আমার নয়। মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্রে লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে আমরাই বার বার এগিয়ে যাই বেশির ভাগ ওয়ার্ডে। তাই আমার নেতৃত্ব যদি ব্যর্থই হবে, তা হলে দল কেন আমাকে এত দিন ধরে দায়িত্বে রেখে দেবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy