এডিস মশা
সরকারি ভাবে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এখনও দেড় হাজার ছাড়ায়নি। কিন্তু সেই সংখ্যাটা কতটা সত্যি, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে খোদ স্বাস্থ্য দফতরের একাংশে। তাঁরা বলছেন, রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল এবং প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে ডেঙ্গি আক্রান্তের তথ্য ঠিক মতো এসে পৌঁছচ্ছে না। তার ফলেই স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের সন্দেহ, ঠিকঠাক তথ্য এলে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দে়ড় হাজার ছাড়িয়ে যেত।
স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, তথ্য ঠিক মতো জানাতে বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তথ্য চেপে যাওয়ার প্রমাণ মিললে সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির পাশাপাশি নিজেদের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের দিকেও আঙুল তুলছেন স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ। তাঁরা বলছেন, রোগের প্রকোপ বড় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আগে থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ নিয়ে তৎপর হন না কেউ। রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে তখন রিপোর্ট নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে। এ বারেও ডেঙ্গি বড় আকার নেওয়ার পরে, দিন কয়েক আগে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিকে ডেকে ডেঙ্গি রোগী সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য (নাম, ঠিকানা, কোন হাসপাতালের কোন ওয়ার্ডে ভর্তি) জানাতে বলেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তার ফলে রোগী এবং তার এলাকা সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে তথ্য হাতে থাকবে। কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় ডেঙ্গি বাড়ছে, এটা মালুম হলেই দ্রুত মোকাবিলা করা হবে।
কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের একাংশ বলছেন, কর্তারা আগে থেকে এত তৎপর হলে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যেত না। এর আগে উত্তরবঙ্গেও এমনটা ঘটেছে। সেখানে এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ ছড়ানোর পরে এমন তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। রিপোর্ট পাঠানো নিয়ে গাফিলতির অভিযোগে শাস্তির কোপে পড়েন একাধিক স্বাস্থ্যকর্তা। সমস্যা মিটতেই ফের রিপোর্ট সংগ্রহে গা-ছাড়া ভাব এসেছে বলে দাবি করছেন স্বাস্থ্য দফতরের অনেকে।
রবিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, এ দিন ৭৩ জন রোগীর দেহে ডেঙ্গি ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৯৫। এ পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ১৩ জন মারা গিয়েছেন। শনিবার রাত পর্যন্ত সংখ্যাটি ছিল ১১। এ দিন বি সি রায় হাসপাতালে একটি শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। শনিবার কলকাতার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু ডেঙ্গিতেই তিনি মারা গিয়েছেন কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিল না স্বাস্থ্য দফতর। বিশ্বরঞ্জনবাবু জানান, ওই রোগী যে ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছেন সে ব্যাপারে এ দিন নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। তবে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি স্বাস্থ্য দফতর। বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, বি সি রায় হাসপাতালে মৃত শিশুর নাম দিশা দাস (১১)। স্থানীয় কাউন্সিলর প্রবীর সর্দার জানান, আদতে ট্যাংরার বাসিন্দা হলেও দিশা দীর্ঘদিন ধরে বাসন্তী দেবী কলোনিতে মামার বাড়িতে থাকত।
ডেঙ্গিতে সব থেকে বেশি কাবু হুগলির শ্রীরামপুর মহকুমা। সেখানে ডেঙ্গি মহামারির আকার নিয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের দাবি। ওয়ালশ হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক-সাফাইকর্মী না থাকলেও উপচে পড়ছে রোগী। ভিড় দেখে কেউ কেউ আবার রোগীকে নার্সিংহোমেও নিয়ে যাচ্ছেন। এ দিন রবিবার হওয়ায় সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ, ফিভার ক্লিনিক বন্ধ ছিল। জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা হয়েছে জরুরি বিভাগে। জ্বরের রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করেছে শ্রমজীবী হাসপাতাল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন করে ৬ জন ও মালদহ জেলায় ২ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে এ দিন।
বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালের কর্তাদের অনেকে বলছেন, স্বাস্থ্যকর্তারা এখন বিস্তারিত তথ্য দিতে নির্দেশ দিচ্ছেন বটে। কিন্তু রোগীর বিস্তারিত তথ্য পাঠানো হলে স্বাস্থ্য দফতরের মাথারা বিরক্ত হতেন। তখন নির্দেশ দেওয়া হয় শুধু রোগীর নাম এবং কোন পুরসভা বা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা তা জানাতে হবে। কলকাতার ক্ষেত্রে ওয়ার্ড জানাতে বলা হতো। ফলে রোগীর ঠিকানা ও বিস্তারিত তথ্য আর পাঠানো হতো না। এতে রিপোর্টও ঠিক মতো তৈরি হতো না। ডেঙ্গির প্রকোপ নির্দিষ্ট ভাবে কোন এলাকায় বাড়ছে, তা নিয়েও আগেভাগে সতর্ক হওয়া যেত না। শিরে সংক্রান্তি হওয়ায় এখন উঠেপ়়ড়ে লেগেছেন কর্তারা।
অভিযোগটা মেনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকে। তাঁদেরই এক জনের আক্ষেপ, ‘‘চিরকাল চোর পালালে বুদ্ধির উদয় হয় আমাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy