Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পাসপোর্টের চক্র, প্রয়াত মান্নানের রক্ষী গ্রেফতার

জাল পাসপোর্ট কাণ্ডে আগেই ১১ জনকে পাকড়াও করে বহরমপুর পুলিশ। তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি সদ্যপ্রয়াত মান্নান হোসেনের নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে আসা কনস্টেবলকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

ভোল-বদল: ভিসায় নাম লেখা মহম্মদ মিনহাজ। জাল ভোটার কার্ডে ছবি একই কিন্তু নাম মনোজ মণ্ডল। প্যান কার্ডে আবার নাম মাধব মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

ভোল-বদল: ভিসায় নাম লেখা মহম্মদ মিনহাজ। জাল ভোটার কার্ডে ছবি একই কিন্তু নাম মনোজ মণ্ডল। প্যান কার্ডে আবার নাম মাধব মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৯
Share: Save:

জাল পাসপোর্ট কাণ্ডে আগেই ১১ জনকে পাকড়াও করে বহরমপুর পুলিশ। তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি সদ্যপ্রয়াত মান্নান হোসেনের নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে আসা কনস্টেবলকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

রাজু মণ্ডল নামে বছর আটত্রিশের ওই রক্ষীকে সোমবার গ্রেফতার করে বহরমপুর আদালতে তোলা হয়। তাঁকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, রাজু নামে ওই পুলিশ কনস্টেবলের বাড়ি নদিয়ার শান্তিপুর বাইপাস এলাকায়। গত ১৪ বছর ধরে তিনি পুলিশে কাজ করছেন। বছর খানেক ধরে মান্নানের নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন।

মান্নানের ছেলে, যুব তৃণমূল নেতা সৌমিক হোসেন ফোন বা এসএমএস বার্তার উত্তর দেননি। তবে তাঁর আর ছেলে, লালবাগ মহকুমা তৃণমূলের সভাপতি রাজীব হোসেন বলেন, “বাবার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ও কাজে ফাঁকি মারত। চালচলনও ঠিক ছিল না। মাস পাঁচ আগে বহরমপুরের নিয়ারলিসপাড়ায় এক মহিলার হয়ে জমি দখলের চেষ্টায় ওর নাম জড়ায়।” তাঁর দাবি, রাজুকে সতর্ক করেছিলেন।

বাংলাদেশ লাগোয়া মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলায় জাল পাসপোর্ট চক্র বহু দিন ধরেই সক্রিয়। ২০১৫ সালে নদিয়ার হাঁসখালি থানার পুলিশ জাল নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরির চক্রের দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল। তাদের বাড়ি থেকে প্রচুর জাল জন্ম শংসাপত্র, জাল ভোটার কার্ড এবং ওই কার্ডের রুপোলি রঙের লোগো মেলে।

পুলিশের দাবি, রাজু যে চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা বাংলাদেশিদের ভারতীয় সাজিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে। উদ্দেশ্য, তাঁদের ফ্রান্স-সহ ইউরোপের নানা দেশে যেতে সাহায্য করা। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের মিনহাজুদ্দিনকে ভারতীয় পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য ১২ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল। তিনি ইতিমধ্যে সাড়ে চার লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। মিনহাজুদ্দিনের কাকা ফ্রান্সে আকরিক লৌহ সংস্থায় শ্রমিকের কাজ করেন।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ গত ১৬ নভেম্বর মিনহাজুদ্দিন ছাড়াও দুই বাংলাদেশি তনভির ইসলাম এবং মুকলেসুর রহমানকে গ্রেফতার করে। বহরমপুরের চার জন, উত্তর ২৪ পরগনার এক জন, কলকাতার নাকতলার এক জন, খড়গ্রাম ও কান্দি থেকে এক জন করে লোককে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশের দাবি, মিনহাজুদ্দিন-সহ তিন বাংলাদেশি বৈধ পাসপোর্টে এ দেশে এসেছিলেন। মিনহাজুদ্দিনকে বহরমপুরের গ্রামের বাসিন্দা ‘মনোজ মণ্ডল’ সাজানো হয়। ওই নামে এক জনের নাম-ঠিকানা এক রেখে ছবি পালটে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে জন্ম শংসাপত্র ও তার পরে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড জাল করা হয়। এর পরে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন করেন মিনহাজউদ্দিন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে তদন্তের জন্য ডাকও পেয়েছিলেন তিনি। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখেছে, আসল মনোজ মণ্ডল এ সবের কিছুই জানেন না।

এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত আরও লোক দুই জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে বলে পুলিশ কর্তারা প্রায় নিঃসন্দেহ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE