অম্বেডকর কলোনিতে জলের জন্য লাইন। —নিজস্ব চিত্র।
প্রথম ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, রাজ্যে কাউকে টাইমকলের জল কিনে খেতে হবে না। দ্বিতীয়বার তৃণমূল সরকার গঠিত হওয়ার পরে তো পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সব পুরসভাকে জলকর প্রত্যাহার করতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত খড়্গপুর পুরসভা এখনও জলকর নিয়ে চলেছে। তারপরেও শহরবাসী ঠিকঠাক পরিষেবা পাচ্ছেন না বলেই অভিযোগ।
টাকা দিলে জল
পশ্চিম মেদিনীপুরে পুরসভার সংখ্যা ৮টি। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, ঘাটালের মতো পুরসভাগুলি জলকর না নিলেও খড়ার, ক্ষীরপাই, রামজীবনপুর আর খড়্গপুর এই চারটি পুরসভা নিয়মিত জলকর নিচ্ছে। জল প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের নামেই কর নিচ্ছে খড়্গপুর পুরসভা। করের পরিমাণ প্রতি মাসে সংযোগ প্রতি ৩৫ টাকা। তবে একসঙ্গে তিন মাস, ছ’মাস অথবা এক বছরের টাকা দিলে কিছুটা ছাড় মেলে। কেউ টাকা না দিলেও রয়েছে শাস্তি। একমাস পরে টাকা জমা করতে গেলে ৭০ টাকা ‘ফাইন’ দিতে হয় গ্রাহককে। আর দীর্ঘদিন কেউ জলের সংযোগ বাবদ এই টাকা না দিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে। শহরে জলকর আদায়ের হারও ভালই। এই খাতে বছরে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আয় হয় পুরসভার।
সঙ্কট, তবু কর
খড়্গপুর শহরে জল সঙ্কট বরাবরের। তার উপর আবার জলের জন্য টাকা দিতে হওয়ায় শহরবাসী অসন্তুষ্ট। কয়েক দশক আগে এই শহরের বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ খনন করে জল সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছিল। এক সময় সেই জল সংযোগের মুখে মিটার বসিয়ে জলকর সংগ্রহ করা হত পুরসভা। পরে অবশ্য সেই জলকর নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে ১৯৯৯ সালে জলের চাহিদা বুঝে পুর-কর্তৃপক্ষ দুই মেগা গ্যালনের প্রথম একটি জলপ্রকল্প গড়ে তোলে। তখন কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ড রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জলকর নেওয়া শুরু করে। এখন রেলশহরে জলের চাহিদা সাড়ে তিন মেগা গ্যালন। এই চাহিদা মেটাতে দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের পরিকল্পনা হয়। তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। তার উপর সবাই সম পরিমাণ জল পান না। অথচ জলকরের পরিমাণ সকলের ক্ষেত্রে সমান। ৩২নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিনতি দাস, চন্দন সর্দারদের তাই ক্ষোভ, “আমরা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে জলের সংযোগ নিয়েছি। তার পরেও টাইমকলের জলের জন্য টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ আমাদের এলাকায় তো অধিকাংশ দিন জল পাই না। টাকা দেব কেন?”
সঙ্কট মেদিনীপুরেও
পাশের শহর মেদিনীপুরে পুরসভা কোনও জলকর নেয় না। শুধু জলের সংযোগ নেওয়ার সময় পুরসভায় নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হয়। তবে সেখানেও জল নিয়ে নালিশের শেষ নেই। কল দিয়ে সুতোর মতো জল পড়ে। অনেক সময়ই কলের জল পানের অযোগ্য বলে অভিযোগ ওঠে। কখনও জলের রং ঘোলাটে তো কখনও জলে মিশে থাকে নোংরা। অনেক ট্যাপকল রয়েছে নিকাশি নালার পাশে। মেদিনীপুরের নতুনবাজারের বাসিন্দা অনুপ দত্ত তাই বলেন, “প্রয়োজনে পুরসভা জলকর নিক। তবে পরিষেবাটা ঠিকঠাক দিক।” একই বক্তব্য বল্লবপুরের তরুণ পাল, অরবিন্দনগরের তারাশঙ্কর ঘোষদের। মেদিনীপুরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের অবশ্য দাবি, “শহরে জলের কোনও সমস্যাই নেই। কোথাও কিছু হলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়।”
জল-চুরি
এখন শহরে ১২হাজার ৮০০টি বৈধ সংযোগ রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে গড়ে প্রায় ২০টি পর্যন্ত অবৈধ পানীয় জলের সংযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বহু বাড়িতে পুরসভায় আবেদন না করেই ওই সংযোগ নেওয়া হয়েছে। তাই শহরে বাড়ি-বাড়ি অবৈধ সংযোগ নিয়ে জলচুরি বাড়ছে। এই সব অবৈধ সংযোগ থেকে পুরসভার কোনও আয় হয় না। শহরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বীরেন মাইতি কথায়, “কংগ্রেস বোর্ডের সময় থেকে জলকর দিয়ে আসছি। মুখ্যমন্ত্রী জলকর নেওয়া যাবে না বলে ঘোষণার পরেও কংগ্রেস বোর্ড জলকর নিচ্ছিল। এখন তৃণমূলের বোর্ড। আশা করেছিলাম তারা অন্তত জলের জন্য টাকা নেওয়া বন্ধ করবে। কিন্তু কোথায় কী!”
পুর-কথা
খড়্গপুর পুরসভার দাবি, জলপ্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা নেওয়া হয়। বিকল্প পথ না খুঁজে তা বন্ধ করা সম্ভব নয়। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের কথায়, “এটা ঠিক মুখ্যমন্ত্রী জলের জন্য টাকা নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন। তাই কীভাবে ওই টাকা নেওয়া বন্ধ করে প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি। আগামী বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।” আর জল বিষয়ক পুর-পারিষদ তৈমুর আলি খানের দাবি, “আমরা সব কালেক্টরকে মৌখিকভাবে জল সংযোগ বাবদ টাকা সংগ্রহ করতে নিষেধ করে দিয়েছি। বোর্ড মিটিং করে পুরপ্রধান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy