মাছ মেলা আয়োজনের জন্য টাকা তোলার নির্দেশিকা জারি করে বছরখানেক আগে ঘোর বিতর্কে জড়িয়েছিল রাজ্য মৎস্য দফতর। শেষমেশ মৎস্যমন্ত্রীকে বিধানসভায় বিবৃতি দিয়ে নির্দেশিকাটি বাতিল করতে হয়। বছর না-ঘুরতে সেই মৎস্য দফতর ফের বিতর্কে জড়ালো। এ বার এক বেসরকারি সংস্থাকে জলাশয় লিজ দেওয়া নিয়ে। অভিযোগ, দফতরের সচিবের সই জাল করে, টেন্ডারের বালাই না-রেখে সংস্থাটিকে ১৩৬ একর জমি লিজ দেওয়া হচ্ছিল।
এবং মাছ মেলার মতো এখানেও অনিয়মের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে দফতরের এক যুগ্মসচিবের। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে মন্ত্রী সিআইডি-তদন্তের নির্দেশ দিলেও মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হয়নি। ফলে দফতরের অন্দরে ধারণা জেগেছে, দুর্নীতির শিকড় আরও গভীরে।
ব্যাপারটা ঠিক কী?
মৎস্য দফতরের খবর: এক বেসরকারি সংস্থার দাবি মোতাবেক, দিঘার কাছে শঙ্করপুরে প্রায় ১৩৬ একর জলাশয় তাদের লিজ দেওয়া হয়েছে। কগনিশন ফিশারিজ নামে সংস্থাটি রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের অফিসে লিজপ্রাপ্ত জমির ‘লাইসেন্স ফি’ জমা দিতে গিয়ে দু’টি নির্দেশিকাও দাখিল করে। একটায় রয়েছে দফতরের তৎকালীন সচিব সৈয়দ আহমেদ বাবার সই। অন্যটা দফতরের যুগ্মসচিব শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের জারি করা, যেখানে স্পষ্ট ভাবে জমি লিজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গত বছরের এপ্রিল ও সেপ্টেম্বরে জারি করা নির্দেশিকা দু’টি হাতে পেয়ে নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) সৌম্যজিৎ দাস তাজ্জব হয়ে যান। ‘‘আমার সন্দেহ হয়। জমি লিজ দেওয়া হয় নিগম মারফত। অথচ আমরাই জানলাম না!’’— বলছেন সৌম্যজিৎবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘জমি লিজের সিদ্ধান্ত সচিব একা নিতে পারেন না। অথচ এখানে লিজের চিঠিতে সই করেছেন সচিব!’’
তদন্ত চেয়ে এমডি চিঠি লেখেন মন্ত্রী ও সচিবকে। সেটা গত ডিসেম্বরের ঘটনা। মৎস্যমন্ত্রী তদানীন্তন মৎস্য-সচিবকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন। তাতেই বড়সড় দুর্নীতির আভাস মেলে বলে দফতর সূত্রের খবর। কী রকম?
তদানীন্তন মৎস্য-সচিব সৈয়দ আহমেদ বাবা বলেন, ‘‘ওই কাগজ যাচাই করে দেখি, আমার সই নকল করা হয়েছে! কগনিশন ফিশারিজ প্রাইভেট লিমিটেড’কে জলাশয় লিজ সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকায় আমি সই করিনি।’’ উপরন্তু সংস্থাটি জানিয়েছিল, টেন্ডার দিয়ে তারা লিজ পেয়েছে। কিন্তু দফতর-সূত্রের দাবি, এমন কোনও টেন্ডার ডাকাই হয়নি। ‘‘ওরা টেন্ডারের কাগজ বলে যা দেখিয়েছে, সব ভুয়ো। জাল কাগজপত্রের বিনিময়ে জমি লিজের নির্দেশিকা জারি হয়েছিল।’’— বলছেন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। বর্তমান মৎস্য-সচিব প্রভাত মিশ্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘টেন্ডার ছাড়াই এ সব কাণ্ড হয়েছে।’’
কগনিশন ফিশারিজ অবশ্য জালিয়াতির নালিশ মানতে নারাজ। ‘‘টেন্ডার বিলক্ষণ ডাকা হয়েছিল। তবে আমরা ছাড়া কেউ টেন্ডার জমা দেয়নি।’’— দাবি করেছেন সংস্থার এমডি এসএন বর্মন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পিপিপি মডেলে মাছচাষ ও ইকো ট্যুরিজম চালু করতে গত বছর মৎস্যমন্ত্রীর কাছে জমি চেয়েছিলাম। মন্ত্রী আমাকে বলেন যুগ্মসচিব শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সঙ্গে
যোগাযোগ করতে। শৈলেন্দ্রবাবুর মাধ্যমেই লিজের সরকারি কাগজ হাতে পেয়েছি।’’
শুধু তা-ই নয়, লাইসেন্স ফি বাবদ মৎস্য দফতরকে ইতিমধ্যে তাঁরা চার লাখ টাকা দিয়েছেন বলেও কগনিশন-কর্তার দাবি। যা উড়িয়ে দিয়ে মৎস্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘ওরা প্রথমে নিগমের এমডি’র কাছে টাকা জমা দিতে চেয়েছিল। তিনি ফিরিয়ে দেওয়ায় অফিসের রিসেপশনে টাকা রেখে যায়। তা-ও ফিরিয়ে দিয়েছি।’’
বিতর্কের কেন্দ্রে যিনি, সেই যুগ্মসচিব সম্পর্কে কী ব্যবস্থা হয়েছে?
মন্ত্রীর জবাব, ‘‘সিআইডি-তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। যুগ্মসচিবের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ওঁর মাথার উপরে এক জন ডব্লিউবিসিএস’কে বসানো হয়েছে। জলাশয়টি লিজ দিতে টেন্ডার ডাকা হবে।’’
কিন্তু যুগ্মসচিবের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় তদন্তও হল না, তার ব্যাখ্যা মন্ত্রীর কাছে মেলেনি। যার মধ্যে অন্য গন্ধ পাচ্ছে দফতরের একাংশ। এই মহলের পর্যবেক্ষণ— ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে অনেক রাঘব-বোয়ালের নাম বেরিয়ে আসতে পারে। সেটা ভেবেই হয়তো কর্তৃপক্ষ কড়া পদক্ষেপ করতে ভয় পাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট যুগ্মসচিব শৈলেন্দ্রবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি
এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। অন্য দিকে কগনিশন-কর্তা বর্মনবাবু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘এখনও জমির রেজিস্ট্রেশন হল না! এ বার মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। দফতরের নামে মামলা ঠুকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy