পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় নাবালিকা প্রসূতির হার কমার বদলে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গাদা গাদা টাকা খরচ করে গুচ্ছের সরকারি প্রকল্প ও প্রচার চললেও যে উদ্দেশ্য নিয়ে এত কিছু, তাতেই ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। ২০২৪-’২৫ সালে এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় নাবালিকা প্রসূতির হার কমার বদলে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে! তথাকথিত শিক্ষিত, আলোকপ্রাপ্ত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এ ক্ষেত্রে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে থাকা অনেক রাজ্যের থেকে বেশি পিছিয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ।
২০২৩-’২৪ সালে রাজ্যে মোট প্রসূতির ১৫ শতাংশ ছিল নাবালিকা। চলতি বছরে তা সামগ্রিক ভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশ! রাজ্যের ১৫টি জেলায় মোট প্রসূতির ২১-৩০ শতাংশই নাবালিকা বলে তথ্য সামনে এসেছে। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, রূপশ্রীর মতো কোনও প্রকল্পই এ ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে অভিযোগ। বিভিন্ন জেলার এমন ১৩০টি ব্লক চিহ্নিত করা গিয়েছে, যেখানে মোট প্রসূতির ২০-২৯ শতাংশই নাবালিকা। আবার এমন ২৫টি ব্লক চিহ্নিত করা গিয়েছে, যেখানে মোট প্রসূতির ৩০ শতাংশেরও বেশি নাবালিকা।
এই পরিসংখ্যান সামনে আসতেই চাপ বেড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের উপরে। কারণ, নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মানেই মায়ের ও শিশুর মৃত্যু-হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়া। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিকর্তার অফিস থেকে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে নির্দেশ গিয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য-অধিকর্তা স্বপন সোরেনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি “আমি ব্যস্ত রয়েছি” বলে ফোন কেটে দেন।স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এত দিন নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের উদ্বেগ ছিল মূলত মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর নিয়ে। কিন্তু এখন তার সঙ্গে নাবালিকা প্রসূতির হারে টেক্কা দিচ্ছে বীরভূম, বসিরহাট, বিষ্ণুপুর, পূর্ব বর্ধমান, রামপুরহাটের মতো জেলা ও স্বাস্থ্য জেলাও। গত অর্থবর্ষ, অর্থাৎ ২০২৩-’২৪ সালে রাজ্যে মোট প্রসূতির ১৫.০৭ শতাংশ ছিল নাবালিকা। চলতি ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষ শেষ হতে এখনও সাড়ে চার মাস বাকি। এখনও পর্যন্ত মোট গর্ভবতীর ২০ শতাংশেরই বয়স ১৮ বছরের নীচে।
মোট ১৫টি জেলায় সেই হার আবার ২০-৩০ শতাংশ! বীরভূমে মোট প্রসূতির ২৬ শতাংশ, রামপুরহাটে ২৯ শতাংশ, বিষ্ণুপুরে ২৪ শতাংশ, মুর্শিদাবাদে ২৬ শতাংশ, কোচবিহারে ২৩ শতাংশ, মালদহে ২৩ শতাংশ, বসিরহাটে ২২ শতাংশ, পশ্চিম মেদিনীপুরে ২২ শতাংশ, নদিয়া-পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম-দক্ষিণ দিনাজপুরে ২১ শতাংশই নাবালিকা।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে কন্যাশ্রী প্রকল্পে ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আট হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। ২০১৮ সালে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প বছরে ১৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে শুরু হয়েছিল। কিন্তু ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই প্রকল্প দু’টি নাবালিকা বিবাহ এবং নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা কমাতে পারেনি।
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মতে, মূলত গ্রামে দরিদ্র পরিবারে এখনও মেয়েদের বোঝা মনে করা হচ্ছে এবং সংসারে একটি ‘পেট কমানোর জন্য’ নাবালিকাদের বিয়ে দিয়ে অভিভাবকেরা দায়মুক্ত হচ্ছেন। আবার সমাজমাধ্যমের কল্যাণে অল্প বয়সে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কিশোরীদের পালিয়ে বিয়ে করা এবং গর্ভবতী হয়ে পড়ার ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।যদিও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, সরকার কর্মসংস্থানে ব্যর্থ। তার উপরে আবাসে দুর্নীতি, রেশনে দুর্নীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে দুর্নীতি— সব মিলিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের দিন গুজরান অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তারই প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে মেয়েদের দ্রুত স্কুল থেকে ছাড়িয়ে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy