সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
শেষের সে-দিন ভয়ঙ্কর! সে তিনি সামান্য কেউ হন, বা স্বয়ং ভগবান।! সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল এমনই ভাবনা।
এর সূত্র ধরেই শেষমেশ কৃষ্ণের শরণ! দু’বছর আগের উপন্যাস ‘শ্রীকৃষ্ণের শেষ ক’টা দিন’ (আনন্দ পাবলিশার্স) এ বার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। আগামী জানুয়ারির শেষে দিল্লিতে সাহিত্য অকাদেমির বার্ষিক অক্ষর উৎসবে এই স্বীকৃতি পাবেন সঞ্জীব। অকাদেমির সভাপতি কন্নড় নাট্যকার চন্দ্রশেখর কাম্বার প্রবীণ সাহিত্যিককে এই সম্মাননা অর্পণ করবেন।
সঞ্জীববাবু অবশ্য নিজেকে বুড়ো ভাবতে রাজি নন। লেখক ফোনে সহাস্যে বলছেন, ‘‘আমি তো এই বয়সেও বাড়ির বিভিন্ন ঘরে বসে পাখির মতো উড়ে উড়ে নানা বিষয়ে ইচ্ছেমতো টুকটুক লিখে চলেছি।’’ দু’দশক ধরে ‘দেশ’ পত্রিকার চাকরি সূত্রেই এক সঙ্গে নানা ধরনের লেখালেখির এই অভ্যাস তাঁর অর্জন, বলছেন সঞ্জীববাবু। যেমন এ যাত্রা, প্রায় একযোগে বুদ্ধ, কৃষ্ণ এবং শ্রীরাধিকার শেষ জীবন নিয়ে ভাবছিলেন। গত তিন বছরে প্রকাশিত হয়েছে তিনটি উপন্যাস। ‘নির্বাণে অনির্বাণ বুদ্ধ ভগবান’, ‘শ্রীকৃষ্ণের শেষ ক’টা দিন’ এবং ‘শ্রী রাধার শেষ ক’টা দিন’। তিনটি জীবনই খানিক করুণ ভাবে শেষ হচ্ছে। প্রিয়জনের শোক সয়ে, রাজ্য খুইয়ে সামান্য ব্যাধের তিরে অকিঞ্চিৎকর মৃত্যু পরাক্রমশালী কৃষ্ণের। কৃষ্ণকে নিয়ে সিরিজের দ্বিতীয় এই বইটিই পুরস্কার পাবে।
রাম-সীতা বা কৃষ্ণ এ যুগে আবার জাতিসত্তার রাজনীতিরও অনুপ্রেরণা। রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনি বড় বেশি ফ্যাটফেটে বাস্তবধর্মী আলোয় দেখার প্রবণতা বাড়ছে আজকের ভারতে। সে-দিক দিয়েও সঞ্জীবের উপন্যাস খানিক ভিন্নধর্মী। মহাভারত, গীতা, পুরাণ বিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করে দু’মাসে লিখে ফেলেছেন নাতিদীর্ঘ আখ্যান। বুধবার সন্ধ্যায় ফোনে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমি কৃষ্ণের কাছে প্রণত। কিন্তু ঈশ্বর বলে লেখার সময়ে একফোঁটা রেয়াত করিনি! জীবনের মধ্যে ঢুকলে তিনি তো খিদে, প্রেম, রিরংসা, হিংসা, শঠতা নিয়েই একজন মানুষ।’’ কৃষ্ণজীবনের রূপকধর্মিতা বোঝার চেষ্টা এই উপন্যাস জুড়ে। সেই সঙ্গে বিস্ময়, কী ভাবে স্বয়ং নিয়তি নির্ধারক ঈশ্বরও নিয়তির খেলার পুতুল হয়ে উঠছেন। সাহিত্য অকাদেমির বেঙ্গলি অ্যাডভাইজার বোর্ডের চেয়ারম্যান সুবোধ সরকারের চোখে, সঞ্জীবের উপন্যাসের এই কৃষ্ণ সমকালের একটি চরিত্রও বটে! তাঁর মনে পড়ছে, ‘‘সেই কবে প্রতি সপ্তাহে দেশ-এ ‘লোটাকম্বল’ পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকতাম! এই সম্মান বহু দিনই সঞ্জীবদার প্রাপ্য।’’ পুরস্কার পেয়ে খুশি, কিন্তু পুরস্কারের মানদণ্ডে সবটুকু দেখতে রাজি নন সঞ্জীব। ‘‘খেটেখুটে কাজটা কতটা পাঠযোগ্য হল, সেটাই আসল!’’ মাপা হাসি, চাপা কান্না-ই এখনও তাঁর জীবনদর্শন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy