জাতীয় পরিবেশ আদালতের কড়া নির্দেশ ছিল। সেই নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকার তারাপীঠে দ্বারকা নদের দূষণ রুখতে বেশ কিছু ব্যবস্থাও নিতে শুরু করেছে। কিন্তু, সোমবার এলাকা পরিদর্শন করে সেই সাজ দেখে সন্তুষ্ট হলেন না আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। সোমবার তারাপীঠে পরিবেশ আদালতে মামলাকারী জয়দীপবাবু তারাপীঠে দ্বারকা নদের দূষণ রুখতে প্রশাসন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ তুললেন।
পরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ কতটা কী কার্যকর হয়েছে, তা দেখতেই তারাপীঠে এসেছিলাম। কিন্তু, অবাক হয়ে দেখলাম তার অনেকটাই রূপান্তর করতে পারেনি প্রশাসন।’’ তিনি জানান, শুধুমাত্র টিন দিয়ে শ্মশানকে ঘেরা হয়েছে। শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি এবং দূষণ প্রতিরোধে গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই মর্মে আদালতে ডিপিআর-ও জমা দিয়েছিল। কিন্তু, তার পরেও আংশিক কাজই সরকার করতে পেরেছে বলে তিনি দাবি করেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এখনও বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি হয়নি। দ্বারকা নদের কোনও প্রকার সংস্কারও হয়নি। এলাকার হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং অধিবাসীরা এখনও দ্বারকা নদকে পয়ঃপ্রণালী হিসাবে ব্যবহার করছেন। তারাপীঠে সমস্ত আবর্জনা এখনও দ্বারকা নদেই ফেলা হচ্ছে।’’
ঘটনা হল, পরিবেশ আদালতে মামলার জেরে কাল বুধবারই এজলাসে ব্যক্তিগত হাজিরা দিতে হবে জেলার সভাধিপতি এবং স্থানীয় সাহাপুর ও খরুণ পঞ্চায়েতের প্রধানদের। দূষণ রুখতে তারা ঠিক কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা জানতে চাওয়া হবে তাঁদের কাছে। তার আগে মামলার আইনজীবীর এই দাবি খানিকটা হলেও চাপে ফেলেছে জেলা প্রশাসনকে। বিশেষ করে এ দিনের পরিদর্শনে যা কিছু দেখেছেন, তা বিচারকের কাছে তুলে ধরবেন বলে আগাম জানিয়ে দিয়েছেন জয়দীপবাবু। এ দিন পরিদর্শনের পরে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ ওই আইনজীবী অভিযোগ করে বলেন, ‘‘হোটেলগুলির কিচেনের জল, আবাসিকদের পয়ঃপ্রণালীর জল নির্গমণের ক্ষেত্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়ম মেনে যে আধুনিক ব্যবস্থা থাকার কথা, তা মুষ্টিমেয় কয়েকটি হোটেল ছাড়া অধিকাংশেরই নেই। এ ছাড়া দ্বারকাকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে দু’একটি বোর্ড লাগানো ছাড়া নদী সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে কিছুই করা হয়নি। গত শুনানিতেই তারাপীঠ মন্দির চত্বরকে ‘নো প্লাস্টিক জোন’ ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তার পরেও মন্দির চত্বরে এখনও কম-বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ এমনকী, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছ থেকে শর্ত সাপেক্ষে ছাড়পত্র নিয়েও কিছু কিছু হোটেল লুকিয়ে কিচেন চালু রেখেছে বলেও তিনি দাবি করেছেন। জয়দীপবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পর্যবেক্ষণেও কেন বিষয়টি ধরা পড়েনি, তা বুঝতে পারছি না। আগামী শুনানিতে এ সব কিছুই তুলব।’’
প্রশাসন যদিও জয়দীপবাবুর অভিযোগ মানতে নারাজ। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে এসডিও (রামপুরহাট) উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘তারাপীঠে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ মেনে অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় তৈরি করে ইতিমধ্যেই তা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিছু প্রকল্পের অনুমোদনও মিলেছে। খুব শীঘ্রই সেগুলির কাজ শুরু হবে।’’ তারাপীঠে দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধে আদালতের নির্দেশ মেনেই যাবতীয় কাজ চলছে বলে তাঁর দাবি। একই ভাবে জেলার সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীও দাবি করেন, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে সব কিছু করা হচ্ছে।
এ দিকে, জয়দীপবাবু জানিয়েছেন, দূষণের জেরে দ্বারকা নদের নাব্যতা বিপজ্জনক ভাবে কমে গিয়েছে। নাব্যতা বাড়ানোর জন্য তিলপাড়া ব্যরাজ থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার দাবি তিনি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা পোর্ট ট্রাস্টকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে বলেও তিনি জানান। অন্য দিকে, তারাপীঠ নিয়ে পরিবেশ আদালতে আরও একটি মামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই আইনজীবী। জয়দীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘মন্দিরে ঢোকার জন্য ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধেই ওই মামলা করা হয়েছে।’’ জয়দীপবাবুর এই অভিযোগকে অবশ্য ভিত্তিহীন বলেই দাবি করেছেন তারাপীঠ তারামাতা সেবাইত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘মন্দির কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫০ টাকা প্রবেশ কর নেওয়া হয়। তার বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy