গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
রাজ্যের পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনার পিছনে এক নয়, একাধিক চক্র কাজ করেছে! রবিবার রাতে শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি শপিং মলের সামনে থেকে তিন জনকে ধরার পরে, এমনই অনুমান গোয়েন্দাদের। তাঁরা জানিয়েছেন, দিবাকর দাস ওরফে বিট্টু, বিশাল ঢালি এবং গোপাল রায় নামে তিন জনকে ধরা হয়েছে। বিশালের মাসতুতো দাদা দিবাকর উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। সে দুর্নীতি-চক্রের ‘মূল পাণ্ডা’ বলে গোয়েন্দাদের দাবি। গোপাল রায় আবার সম্পর্কে অন্য দু’জনের জামাইবাবু। চম্পাসারির পবিত্রনগরে তার বাড়ি। রবিবার দুপুরে চোপড়া থেকে শিলিগুড়ির সমরনগর বটতলায় বিশালের বাড়িতে এসেছিল দিবাকর। সেখানেই তিন জন একত্রিত হয়। পরে সেবক রোডে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতেরা বেহালার সরশুনা স্কুলের পড়ুয়াদের টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত। সোমবার আলিপুর আদালতের বিচারক তাদের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্য দিকে, ট্যাব-কাণ্ডে পড়ুয়াদের টাকা হাতানোর ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কলকাতার বিধাননগর থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে ঝাড়গ্রাম সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। রবিবার গভীর রাতে ধৃত বছর চব্বিশের মাঝারুল আলমের বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানার আমতলায়। মাঝারুলকে বিনপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সাত পড়ুয়ার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর মামলায় অভিযুক্ত করে সোমবার ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে, আট দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়। পুলিশ সূত্রের দাবি, ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ঝাড়গ্রাম জেলার একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢোকার আগেই ‘হ্যাক’ করে তা হাতিয়ে মাঝারুল বিধাননগর থানার থাকদাড়ি ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স এলাকায় ভাড়াবাড়িতে লুকিয়ে ছিল।
ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মালদহগামী সরকারি বাস থেকে ট্যাব-দুর্নীতির অভিযোগে আটক হওয়া চার যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের পরে রবিবার রাতে গ্রেফতার করে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম উসমান আলি, মনসুর আলম, রৌশন জামাল ও মোতাকাবের আলি। ওই দিন একই মামলায় ইসলামপুরের সুজালি থেকে পুলিশের হাতে আটক হওয়া মোজাম্মেল হককেও রাতে গ্রেফতার করা হয়। চোপড়ার মিরচাগছে উসমানের বাড়ি। বাড়ির কাছেই নিজের সাইবার ক্যাফে। ওই এলাকার স্কুলেই দিবাকর কর্মরত। উসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দিবাকর-সহ তাঁর দুই সঙ্গীর যোগ পায় এবং শিলিগুড়ি থেকে তাদের ধরা হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
পুলিশ জানায়, বছর আটাশের দিবাকর চোপড়ার ঘিরনিগাঁওয়ের দলুয়াহাটের বাসিন্দা। চোপড়ার মিরচাগোলগছ প্রাথমিক স্কুলে যোগ দেন গত ফেব্রুয়ারিতে। পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূলের প্রধান তাঁর মা। দিবাকর গ্রেফতার হতেই পরিবার উধাও। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মনজুর আলমের দাবি, ১৪ নভেম্বর থেকে দিবাকর আসছেন না।
এক তদন্তকারীর দাবি, ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালের প্রযুক্তিগত ফাঁকফোকরকে কাজে লাগিয়ে ওই টাকা হাতিয়েছে দিবাকর ও তার দলবল। কী ভাবে তা করেছে,সেটা হাতেকলমে গোয়েন্দাদের দেখিয়েছে সে। তার সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর থানা এলাকা থেকে ধরা পড়া মনসুর আলমের যোগাযোগ রয়েছে। ট্যাব-কাণ্ডে ইতিমধ্যে মালদহ এবং কোচবিহার থেকে দুই শিক্ষককেও ধরা হয়েছে। তাদের সঙ্গে দিবাকরের যোগ ছিল কি না, দেখা হচ্ছে।
কী ভাবে ‘অপারেশন’ চালানো হত? পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, সরকারি ভাবে যে ‘ডিফল্ট পাসওয়ার্ড’ দেওয়া হত, সেটা বদলে নেওয়ার নির্দেশ থাকলেও অনেক স্কুলই তা করেনি। সেই সুযোগ নিয়ে পড়ুয়াদের নামের পাশের অ্যাকাউন্টের নম্বর বদলে টাকা হাতিয়েছে তারা।
কমিশন দেওয়ার টোপ দিয়ে অনেকের কাছ থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিশদ তথ্যও নিয়েছে অভিযুক্তেরা। এই ‘ফন্দি’র কথা ছড়িয়ে পড়লে দিবাকরদের মতো আরও অনেকে একই কায়দায় টাকা হাতিয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে। কলকাতার বড়তলা থানাতেও দু’জন ছাত্রের ট্যাবের টাকা প্রতারকেরা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এ নিয়ে কলকাতা পুলিশ এলাকায় ১১টি মামলা দায়ের হল।
কোচবিহারে ট্যাব-কাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশের দাবি, পূর্ব মেদিনীপুর ও চোপড়ায় বসে ‘ছক’ কষা হয়েছে। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষ্ণগোপাল মিনা বলেন, “বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। তদন্ত এগোচ্ছে।” এ দিন নতুন করে ট্যাব-দুর্নীতির অভিযোগ হয়েছে উত্তর দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে।
এর মধ্যে, হুগলিতে যে সব ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা বেহাত হয়েছে, সোমবার তাঁদের প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ফের পাঠানো হয়েছে, জানান জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সত্যজিৎ মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy