Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

দেখভালের দুর্দশায় রেল বেহাল

শিয়ালদহ ডিভিশনে ট্রেন চলাচলে দেরি এবং অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেই সব নালিশ নিরসন তো দূরের কথা, রক্ষণাবেক্ষণের হাল ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। শনিবারেও ঝড়ে মেন লাইনে কাঁকুড়গাছির কাছে ওভারহেড তার ছিঁড়ে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। ১৫ দিনে ওই ডিভিশনে এমন ঘটনা ঘটল অন্তত চার বার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৪:১০
Share: Save:

শিয়ালদহ ডিভিশনে ট্রেন চলাচলে দেরি এবং অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেই সব নালিশ নিরসন তো দূরের কথা, রক্ষণাবেক্ষণের হাল ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। শনিবারেও ঝড়ে মেন লাইনে কাঁকুড়গাছির কাছে ওভারহেড তার ছিঁড়ে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। ১৫ দিনে ওই ডিভিশনে এমন ঘটনা ঘটল অন্তত চার বার।

ঝড়বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। এমনিতেও প্রায় রোজই বিভিন্ন কারণে থমকে যায় শিয়ালদহ বিভাগের ট্রেন। সময়সারণির তোয়াক্কা না-করে নিত্যদিন ট্রেন চলে অনিয়মিত ভাবে। গত সপ্তাহে পরপর কয়েক দিন ট্রেন পরিষেবা ভেঙে পড়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

মোকাবিলায় কী করছে রেল?

রেল সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনের কর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্ত। বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, পরিষেবা নিয়ে কোনও অজুহাত বরদাস্ত করা হবে না। ঠিক সময়ে ট্রেন চালাতে যা যা করা দরকার, আগে থেকে ভেবে তার আয়োজন সেরে রাখতে হবে।

তাতেও যাত্রীদের দুর্ভোগ কিছুমাত্র কমেনি। শনিবারের ঝড়েও তার ছিঁড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ট্রেন। তবে পরিবর্তন হয়েছে একটি বিষয়ে। এত দিন বিপত্তি ঘটলে তা যাত্রীদের জানানো হচ্ছিল না। শনিবার অবশ্য ঘটনার পরে মাইকে ঘোষণা করে সে-কথা যাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু শুধু তো দুর্যোগ নয়। রেল পরিষেবার রোজকার দুর্দশার পিছনে কারণ আছে হাজারো। রেল সূত্রের খবর, সিগন্যাল বিগড়ে যাওয়া, একই লাইনে অতিরিক্ত ট্রেন চালানো, লেভেল ক্রসিংয়ের গেট খোলা থাকার জন্য ট্রেনের দেরি হচ্ছে। ভুক্তভোগী যাত্রীদের বক্তব্য, সিগন্যাল খারাপ হয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে ঠিকমতো মেরামতির অভাব। রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটিও। আর লেভেল ক্রসিংয়ের গেট খোলা থাকলে কয়েক মিনিট দেরি হতে পারে। কিন্তু ট্রেন নিত্যদিনই দেরি করছে ৩০-৪০ মিনিট। যথেষ্ট সংখ্যায় চালক ও গার্ড না-থাকাই এর মূল কারণ। বিশেষ করে শিয়ালদহে রাতের দিকে ট্রেনের দেরি হয় চালক ও গার্ডের অভাবে।

এর প্রতিকার হবে কী ভাবে?

পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্ত সাম্প্রতিক বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন, ১২ কামরার বাড়তি লোকাল ট্রেন চালানোর জন্য দ্রুত প্ল্যাটফর্ম বাড়াতে হবে। দু’তিন মাসের মধ্যেই যাতে ১২ কামরার আরও কিছু ট্রেন চালানো যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। শহরতলির ঘিঞ্জি এলাকার ক্রসিংয়ে ব্যস্ত সময়ে আরপিএফ মোতায়েনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু চালক-গার্ডের অভাব কেন?

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৫-৭ বছরে কার্যত কোনও চালক বা গার্ড নিয়োগই করা হয়নি। সামান্য যে-কয়েক জনকে নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁরা এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যাত্রী-ট্রেন চালাতে তাঁদের অনেক সময় লাগবে। তত দিন চালক ও গার্ডের অভাবে ট্রেনের দেরি হতেই থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রেলকর্তারা অবশ্য এই ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাননি। এমনকী জেনারেল ম্যানেজারের ওই বৈঠকেও এই প্রসঙ্গ তোলা হয়নি। এই অবস্থায় রেল পরিষেবার দুর্দশায় নাজেহাল যাত্রীদের জন্য আশার কথা বলতে শিয়ালদহ ও হাওড়ায় বাড়তি কিছু ১২ কামরার লোকাল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE